জাতির সংবাদ ডটকম।।
ভারতের আদানি পাওয়ার গ্রুপের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চুক্তি বিবেকবান
দেশপ্রেমিক মানুষকে হতবাক করেছে বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, বিবেকবর্জিত ও
দেশের স্বার্থবিরোধী বিদ্যুৎ চুক্তি আদানি পাওয়ার গ্রুপের সঙ্গে করা হয়েছে। এই চুক্তি বাতিল করতে হবে।
আজ (রোববার) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে ভাসানী
অনুসারী পরিষদের উদ্যোগে ‘আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানির অসম চুক্তি
বাতিলের দাবিতে’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
সংগঠনের আহবায়ক রফিকুল ইসলাম বাবলুর সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য
রাখবেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের উপদেস্টা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক
ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আনু
মুহাম্মদ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু ।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিদ্যুৎ আমদানির নামে দেশের সম্পদ লুট করার এই চুক্তিকে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতীয় সরকারকে উপঢৌকন হিসেবে অভিহিত করেছেন। দেশে দুর্নীতি, দুঃশাসন, অর্থপাচার
ও সীমাহীন লুটপাটে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এই চুক্তি মূলত আদানির পকেট ভরার চুক্তি, একপেশে ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
গত শুক্রবার পঞ্চগড়ে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষ নিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘পঞ্চগড় জেলায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ ঠেকাতে সরকারের ব্যর্থতার জন্য সরকার তাদের জান মালের ক্ষতিপূরণ দিবে । আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জান মালের রক্ষার ব্যর্থতার জন্য আহমদিয়া সম্প্রদায়ের কাছে
সরকার প্রধানের ক্ষমা চাইতে হবে’।
বাংলাদেশ তেল–গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সাবেক
সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, কয়লা খনি, পরিবহনের জাহাজ, বন্দর, রেললাইন
ও বিদ্যুৎকেন্দ্র—সবই আদানির মালিকানায়। প্রতিটি ধাপে খরচ হিসাব করবে তারা। তাই এখানে বাড়তি খরচের সুযোগ রয়ে গেছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদীকে খুশি করতেই আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি করা হয়েছে। এ চুক্তিসহ দেশকে বিপদে ফেলার মতো সব চুক্তির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের
শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, উচ্চ ব্যয়ের ঋণনির্ভর প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক
বিদ্যুৎকেন্দ্র একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প। এর কোনো দরকার ছিল না। দেশে বিদ্যুৎ চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণ উৎপাদন সক্ষমতা আছে। তাই ভারত থেকে আমদানির দরকার নেই, আদানিরও দরকার নেই। ভারতে বৃহৎ পুঁজির বিকাশ হয়েছে। এটার সম্প্রসারণ দরকার। তাই শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশে আসছে তারা। আর বর্তমান সরকারের কারণে বাংলাদেশ তাদের জন্য সুবিধাজনক।
নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ঘৃনা করার মতো একটা
শাসক ক্ষমতায় আছে।তাদের নিয়ে কোনো ভালো কথা বলার সুযোগ নেই।আদানীর
চুক্তিটা পুরোপুরি রাজনৈতিক ধান্ধায় করা হয়েছে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, জবাবদিহিমূলক
সরকার তাকলে আদানির বিদ্যুৎ চুক্তির মতো চুক্তি করা যায় না।২০১৮ সালের
নির্বাচনের আগে বারত সরকারকে খুশি করতে যা যা করা হয়েছে, তার মধ্যে একটা
হলো আদানির চুক্তি।আদানি যাতে সন্তুষ্ট হয়, সেটাই চুক্তিতে নিশ্চিত করা হয়েছে।তিনি আরও বলেন, ভোট ছাড়া ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে একদিকে দমন পীড়ন
ও অন্যদিকে বিভিন্ন শক্তিকে খুশি করা হচ্ছে।ভারত যদি একটি গোষ্ঠীকে ক্ষমতায় রাখতে চায়, তাহলে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব থাকবে না।বাংলাদেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় তারা সহায়ত ভূমিকা রাখতে পারে।
লিখিত বক্তব্যে রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, দুঃশাসন, অর্থপাচার ও সীমাহীন লুটপাটে জনজীবন আজ দুর্বিসহ হয়ে পড়েছে। এই অবস্থার মধ্যে বিবেক বর্জিত ও দেশের স্বার্থ বিরোধী বিদ্যুৎ চুক্তি যা ভারতের আদানী পাওয়ার গ্রুপের সঙ্গে করা হয়েছে। তাতে দেশের বিবেকবান দেশপ্রেমিক
মানুষকে হতবাক করেছে, বিদ্যুৎ আমদানীর নামে দেশের ধন সম্পদ লুট করার এই
চুক্তিকে দেশী বিদেশী বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ভারতীয়
সরকারকে উপঢৌকন হিসেবে অভিহিত করেছেন। অস্টেলিয়ার জ্বালানী বিশেষজ্ঞ টিম বাকলির বলেছেন, এই চুক্তি মুলত এশিয়ার সাবেক শীর্ষ ধনী আদানীর পকেট ভরার চুক্তি। এই চুক্তি একপেষে ও অত্যান্ত ব্যয় বহুল। এখানে উল্লেখ্য যে,
বাংলদেশী কোম্পানী গুলো প্রতি ইউনিটের বিক্রয় মূল্য দরপত্রে সর্বোচ্চ ৬.৫২ পয়সা দিলেও অজ্ঞাত কারণে দেশী কোম্পানীগুলোকে না দিয়ে ৮.৭১ পয়সা অর্থাৎ অতিরিক্ত ৭০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি মূল্যে আদানীর সাথে চুক্তি
করা হয়।
তিনি বলেন, অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে আদানী যে ট্যাক্স ভারত সরকারকে দিবে সে ট্যাক্সের টাকা বাংলাদেশের সরকার তথা জনগণ দিবে এবং ২৫ বছর এই ট্যাক্স পরিশোধ করবে। অথচ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে ভারত সরকার ২০১৯ সালে বিশেষ
অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে ঘোষনা করার কারণে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশী টাকা
আদানীর সাশ্রয় হবে। যেমন ঐ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা এবং বিভিন্ন সারঞ্জামাদী আমদানির জন্য কর ছাড় থেকে ১০০ থেকে ২০০মিলিয়ন ডলার বিদ্যুৎ কোম্পানী সাশ্রয় করবে, কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে এই ছাড়ের টাকাও তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে আদায় করবে। এখন আদানী দাবি করছে আমরা ব্যবসায়িক বুদ্ধি খাটিয়ে এই লাভ আদায় করেছি অথচ ন্যায্য চুক্তি হলে এই সুবিধা বাংলাদেশ সরকারের পাওয়ার কথা। কোন কারণে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ না কিনলেও তাকে বছরে ৪৫০
মিলিয়ন ডলার দিতে হবে। দেশের কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ
নেওয়ার নামে যে হরিলুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে তার থেকেও ভয়াবহ চুক্তি হচ্ছে আদানীর সাথে বিদ্যুৎ চুক্তি।
বাবলু বলেন, আদানীর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য পিডিবিকে মাসে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হবে ৩৯.৪৩ মিলিয়ন ডলার। এই হিসেবে আদানীর বিদ্যুৎ
কেন্দ্রটির জন্য বছরে ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হবে ৪৭৩.১৬ মিলিয়ন
ডলার আর ২৫ বছরে মোট ব্যয় হবে বাংলাদেশী টাকায় (১১.৪৩) বিলিয়ন ডলার
অথবা ১২৬,৫৮১ কোটি টাকা এই চুক্তির বিশেষ বিশেষ দিক হলো বিদ্যুৎ না নিলেও
কয়লার দাম বাংলাদেশকে দিতে হবে ৩৪ শতাংশের নীচে বিদ্যুৎ নিলে বাংলাদেশকে
জরিমানা দিতে হবে শুধু কয়লার দামই নয়, কয়লা পরিবহনে জাহাজ ভাড়া,
বন্দরের ব্যয়সহ অন্যান্য ব্যয় বাংলাদেশকে বহন করতে হবে। কয়লার ক্যালোরিফিক নির্ধারণের কোন বিষয় এই চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়নি। ফলে নিম্নমানের কয়লা ব্যবহার করলে বাংলাদেশের কিছু করার নেই বরং অতিরিক্ত টাকা গচ্ছা দিতে হবে। এই চুক্তিতে Priority base dispuss পদ্ধতি অনুসরন করার কারণে দেশীয় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে নিষ্কিক্র করে রাখা যাবে এবং
আমদনী প্রাধান্য পাবে। বিভিন্ন গবেষনা প্রতিষ্ঠানের বক্তব্য অনুযায়ী আদানীর গোড্ডা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে আমদানীকৃত বিদ্যুৎ অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৫৭% বেশী ব্যয়বহুল। টোটাল চুক্তিটি পর্যালোচনা করলে দেখা
যায় যে চুক্তিটির কারণে আমাদের বাংলাদেশকে বছরে শুধু কয়লার বাড়তি দাম
দিতে হবে ৬০০০ কোটি টাকা, ৩৪% বিদ্যুৎ না নিলে বাংলাদেশকে পরিমানা গুনতে
হবে। বছরে ১০০০ কোটি টাকা। কয়লার দাম নির্ধারনেও ব্যাপক শুভংকারের ফাঁকির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যে টাকা খরচ করে আদানীর কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানীর চুক্তি করা হয়েছে এর অর্ধেক টাকা খরচ করে বাংলাদেশে কয়েকটা
বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা সম্ভব বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমরা মনে করি আদানীর থেকে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিটি দেশের স্বার্থ বিরোধী এবং দেশদ্রোহীতার সামিল। অবিলম্বে এই চুক্তি বাতিলের দাবী জানাচ্ছি।