জাতির সংবাদ ডটকম।।
‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়/ও সেই চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।/আয় আর একটিবার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।/মোরা সুখে দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।’
রাজবাড়ী সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের ভবদিয়ায় ঐতিহ্যবাহী আলহাজ্ব আব্দুল করিম উচ্চ বিদ্যালয়ের অঙ্গনজুড়ে শনিবার যেন হৃদয়ে হৃদয়ে নীরবে বেজেছে কবি গুরুর গানের এই কথাগুলো। এদিন বিদ্যালয়টির এসএসসি-২০০২ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ঈদ পুনর্মিলনীতে প্রাক্তন এ শিক্ষার্থীরা যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন সেই পুরনো দিনের স্মৃতিতে। খুঁজে ফিরেছেন শিক্ষাজীবনের দিনগুলোর স্মৃতিকথা।
ভবিষ্যতের টানে অন্তত দুই দশক আগে পৃথক হয়ে গিয়েছিল তাদের গন্তব্য। বন্ধুর সঙ্গে ‘দেখা-দেখি’টা কারও কারও জীবনে সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল ফেসবুক কিংবা হোয়াটসঅ্যাপের পর্দাতেই। কারও তো আবার-স্কুল জীবনের শেষ দিনে পথটা যে ভাগ হয়ে গিয়েছিল, তারপর আর মুখ দেখাদেখিই হয়নি। সেই সমস্ত হারিয়ে যাওয়া পথগুলো ফের পুরোনো মোহনায় ফিরেছিল এবারের ঈদুল আযহায়।
ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গত শনিবার (১ জুলাই) আলহাজ্ব আব্দুল করিম উচ্চ বিদ্যালয়ের অদূরে ‘ডা. আবুল হোসেন ট্রাস্ট’ পার্কে আয়োজিত পুনর্মিলনীতে যোগ দেন বিদ্যালয়টির প্রাক্তন এ শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকেরাও উপস্থিত ছিলেন।
১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টির এসএসসি-২০০২ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ১ম পুনর্মিলনী উপলক্ষে জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন প্রাক্তন এ শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারন, আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সহ বর্ণিল আয়োজনে মুখরিত হয় ট্রাস্ট প্রাঙ্গনটি।
এছাড়াও ক্রিকেট ও ফুটবল খেলা, বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে আসা শিশু-কিশোরদের জন্যে বিস্কুট দৌড় সহ নানা খেলার আয়োজন করা হয় এ উৎসবে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অনেকেই বর্তমানে দেশের বহু জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। পরিবারকে নিয়েও আসেন তারা অনুষ্ঠানে।
দীর্ঘদিন পর প্রিয় শিক্ষার্থীদের এক সাথে দেখে খুশির শেষ ছিলো না শিক্ষকদের মধ্যেও। তাদের সফলতায় যে সবসময়ই গর্ববোধ করেন পাঠ দানকারী এ গুরুজনেরা। শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দীর্ঘদিন ধরে এই বিদ্যালয়টিতে পাঠদান করা মো: আব্দুর রাজ্জাক (মৌলভী স্যার), মো: কোরবান আলী, শচীন্দ্রনাথ বালা রাজিব প্রমুখ।
এছাড়াও ২০০২ সালের এসএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন- মো: মিজান শেখ, মো: ওমর ফারুক, মো: গোলাম ইয়াসিন শুভ, মো: শাহজাহান শেখ (শাজো), মো: ফারুক হোসেন, মো: শফিকুল ইসলাম, মো: সাইফুল ইসলাম, মো: আবুল কাসেম, মো: আবু সালেহ কিলন, মো: আব্দুর রাজ্জাক সহ বন্ধু-বান্ধবীদের অনেকেই।
এর মধ্যে মিজান শেখ, গোলাম ইয়াসির শুভ, ওমর ফারুক নিজ জেলাতেই ব্যবসা-বাণিজ্যের সাথে জড়িত রয়েছে। কিন্তু শাহজাহান শেখ, আবুল কাসেম সহ অনেকেই রাজধানী ঢাকাসহ পাশ্ববর্তী জেলাতে চাকরি করছেন। তবে বন্ধুদের অনেকে আবার দেশের বাহিরেও থাকেন। এদিকে মেয়ে বন্ধুদের মধ্যেও অনেকে চাকরিতে ব্যাস্ত রয়েছেন। তাইতো ঈদ উৎসবেই যেন বন্ধুদের সাথে একটুকরো সাক্ষাৎ!
বহুদিন পর প্রিয় বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় এসে তারা যেন ফিরে গিয়েছিলেন সেই ‘ সবুজ-সাদা ইউনিফর্মে’ বন্দি থাকার সোনালী দিনগুলোতে। উপলক্ষ একটাই- প্রিয় বিদ্যালয় বন্ধুদের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান। তারা সবাই যে একটা সময় এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন, পাশাপাশি বসতেন ক্লাসরুমে, দিনটাই যেন কাটতো এক সাথে।
এভাবেই বাড়তে থাকে সময়ের বয়স। ঘড়ির কাটায় তখন সন্ধ্যা নেমে রাতের আধার ছুঁইছুঁই। সময় বলছে এবার বিদায়ের পালা। তবে এর আগের কিছু ঘণ্টা যেন বার বার বলে গেছে বন্ধুত্ব হারায় না, থেকে থেকে ফিরে আসে বন্ধুর মুখ! তাই তো যাওয়ার বেলায় বিদায়ী মুখগুলো বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলছিল ‘আবার হবে তো দেখা, এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো?’