জাতির সংবাদ ডটকম।। দলের নিবন্ধন না পাওয়ায় রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলার পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি। দলের সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু এ তথ্য জানিয়েছেন।
গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগরে এবি পার্টির কার্যালয়ে কথা হয় মঞ্জুর সঙ্গে।
মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, প্রকৃতপক্ষে নির্বাচন কমিশন যে কাজটি করেছে, তার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানোর ভাষা জানা নেই। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তারা নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে যা করেছে, এটা পর্বতের মুষিক প্রসবের মতো। সারাজীবন কাজের পর শেষে একটা অশ্বডিম্ব প্রসব করেছে। নিবন্ধন প্রক্রিয়া নিয়ে বারবার বলা হচ্ছে যে, এই দলগুলো ক্রিয়াশীল। তাহলে এই দলকে চেনার জন্য কী করতে হবে? এ জন্য পত্র-পত্রিকা, মিডিয়া, সোশ্যাল মিডিয়া এবং রাজপথ। এগুলোই তো দেখতে হবে। যত রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে সেগুলোর কমপক্ষে পাঁচ-সাতটি দল মানুষের কাছে সুপরিচিত। তারা মানুষের কাছে আশা-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করতে পেরেছে। সবার প্রত্যাশা ছিল নির্বাচন কমিশন এই জায়গায় অন্তত কিছুটা হলেও আইন মেনে চলবে। কিন্তু তারা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। পরিচিত, ক্রিয়াশীল, সক্রিয় ও আলোচিত দলগুলোকে বাদ দিয়েছে; একেবারেই অপরিচিত দুটি দলকে তারা নিবন্ধন দিয়েছে। এই দল দুটোর নাম যারাই শুনছে তারাই বলছে—এই দলের নাম তো আগে শুনিনি। এই দলের নেতা কে? আমি গণমাধ্যম ও প্রতিনিধিদের বলব—নির্বাচন কমিশন যে অবৈধ ও অনৈতিক এবং আইন লঙ্ঘন করে যে কাজটি করেছে, সেটি নিয়ে আপনারা অনুসন্ধান ও রিপোর্ট প্রকাশ করুন।
মঞ্জু চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেন, ১০৪টি উপজেলা ও ৩৬টি জেলার তথ্য-উপাত্ত নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছি। দলের অবস্থান স্পষ্টভাবে পরিষ্কার করেছি যে, আমাদের দলটি গণভিত্তি নিয়ে একটি দল। সুতরাং আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশন অন্যায় ও আইন লঙ্ঘন করেছে। আমরা এই নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে আদালতে যাব, রাজপথে আন্দোলন করব। তাদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করব। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা এবং গণতন্ত্রের প্রতিবন্ধক শক্তি হিসেবে এই নির্বাচন কমিশনারসহ তাদের যারা সহযোগী আছেন তাদের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও সংগঠনের কাছে বিচার দেব, জনগণের আদালতেও তাদের একদিন বিচার হবে।
মঞ্জু বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলের একটি নির্দিষ্ট প্রশ্ন ছিল। সেটি হচ্ছে, তারা বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসবে কি না? বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিবেশ আছে কি না? এবি পার্টির পক্ষে তাদের জানিয়েছি যে, বাংলাদেশে যত নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে তার সবই হয়েছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। সুতরাং সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অবশ্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে। এর বাইরে যদি কোনো নির্বাচন হয় এবং ইইউ পর্যবেক্ষক পাঠায় তাহলে সেটি বাংলাদেশের মানুষের উপকারে আসবে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে অনেক সময় তাদের দলেরও যোগ্য লোকজন নির্বাচিত হতে পারেন না। কেননা দল কাউকে মনোনয়ন দিলে তার বিপক্ষে গিয়ে ওই দলেরই কেউ নির্বাচন করলে তাকেও মেরে-কেটে ভোট ডাকাতি করে নিয়ে যায়। বিষয়গুলো ইইউ গুরুত্বসহ শুনেছে।
যুগপৎ আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি বলেছে যে, যুগপৎ আন্দোলনে যারা থাকবে তাদের নিয়েই তারা সরকার গঠন করবে। আমরা এই যুগপতে স্পষ্টভাবে নেই। কিন্তু বিএনপি বাংলাদেশের আন্দোলনের একটি বৃহৎ শক্তি। তাদের যে একদফা দাবি এবং রাষ্ট্র পুনর্গঠনের যে রূপরেখা এটার সঙ্গে কমবেশি আমাদের দাবির মিল আছে। সুতরাং বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকে কীভাবে মেরামত করব বা বিনির্মাণ করব সে বিষয়ে একটি প্রতিজ্ঞা দরকার—একসঙ্গে জোট হয়ে এমপি বা মন্ত্রী হওয়ার প্রতিজ্ঞা নয়। বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে গঠনের জন্য শুধু বিএনপি নয়, অন্য দলও যদি কার্যকর, যৌক্তিক একটা পরিকল্পনা নিয়ে সামনে থাকে তাদের সঙ্গে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই।