অতিবৃষ্টিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে রেললাইন তলিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ, জনজীবন বিপর্যস্ত

শনিবার, নভেম্বর ১, ২০২৫

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি।।

অতিবৃষ্টিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রায় এক কিলোমিটার রেললাইন পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে আন্তঃনগর ট্রেন বনলতা এক্সপ্রেস চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট দেরিতে ছেড়ে যায়। অন্যদিকে ঈশ্বরদী থেকে ছেড়ে আসা ৫ আপ রাজশাহী কমিউটার ট্রেন অতিরিক্ত পানির কারণে বড় পুকুরিয়া এলাকায় চার ঘণ্টা আটকা পড়ে, ফলে শত শত যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েন।

সূত্রে জানা গেছে, লঘুচাপের প্রভাবে শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) সকাল থেকে আকাশ মেঘলা ছিল। সন্ধ্যার পর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়, রাত ৮টার পর জেলাজুড়ে ভারি বৃষ্টি নামলে বড় পুকুরিয়া এলাকায় রেললাইন পানিতে তলিয়ে যায়। পানিতে রেললাইন দেখা না যাওয়ায় রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে পানি নামার পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনের মাস্টার শহিদুল ইসলাম বলেন, “সারারাত বৃষ্টিতে আমনুরা থেকে বড় পুকুরিয়া পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রেললাইন পানির নিচে ছিল। এতে ৫ আপ কমিউটার ট্রেনটি সারারাত আটকা ছিল। সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ট্রেনটি স্টেশনে প্রবেশ করে।”

তিনি আরও জানান, শনিবার সকালে বনলতা এক্সপ্রেস নির্ধারিত সময়ের তুলনায় প্রায় দুই ঘণ্টা দেরিতে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।

এদিকে অতিবৃষ্টিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। নিউ মার্কেট, বালুবাগান, নিমতলা, অক্টোমোড়, ফুড অফিস, বাতেনখার মোড়, কোর্ট চত্বরসহ নিম্নাঞ্চলগুলোতে হাঁটু পানি জমে গেছে। বহু বাড়িঘরে পানি ঢুকে আসবাবপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

শহরের নাহিদ হোসেন বলেন, “সারারাত বৃষ্টিতে বাড়িতে পানি ঢুকে গেছে। শহরে ড্রেন নির্মাণ কাজ চলায় পানি বের হতে পারেনি, ফলে রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর ডুবে গেছে।”

এছাড়াও শিবগঞ্জ উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে পাগলা নদীর ওপর নির্মিত একটি সেতুর দুই ধার থেকে মাটি সরে গেছে, যা চলাচলের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ও কানসাট ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে ২৬০ মিমি, শিবগঞ্জে ১৭৫ মিমি, গোমস্তাপুরে ১৮০ মিমি, নাচোলে ১৭৫ মিমি ও ভোলাহাটে ১৬৫ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গড়ে জেলার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯১ মিমি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, “অতিরিক্ত বৃষ্টিতে কিছু ফসলের ক্ষতি হতে পারে। পাকা ধান হেলে পড়েছে, শাকসবজিরও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে জমি থেকে পানি দ্রুত নেমে গেলে বড় ক্ষতি হবে না।”

অন্যদিকে অতিবৃষ্টিতে সদর উপজেলায় অন্তত ৫০টি পুকুর পানিতে ভেসে গেছে, ফলে মৎস্য চাষিরাও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তবে মৎস্য কর্মকর্তার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।