অবিলম্বে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য মজুরী বোর্ড গঠন এবং ন্যূনতম ২৪,০০০/- মজুরী ঘোষণার দাবিতে  শ্রম প্রতিমন্ত্রীর নিকট স্মারকলিপি পেশ

রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৩
জাতির সংবাদ ডটকম।।
আজ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, সকাল ১১টায় গার্মেন্টস শ্রমিক শিল্প রক্ষা জাতীয় মঞ্চের উদ্যোগে প্রেসক্লাবের সামনে গার্মেন্টস শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শ্রমিক নেতা আবুল হোসাইন।
বক্তব্য রাখেন শ্রমিক নেতা রফিকুল ইসলাম সুজন, বাহারানে সুলতান বাহার, কামরুন নাহার, গোলাম কাদির, শামীমা শিরিন, তপন সাহা, সাহিদা সরকার, কাজী মোঃ আলী, শফিউল আলম, শামীমা আক্তার, রেহানা আক্তার ডলি, নুরুজ্জামান, তমিজ উদ্দিন তনু, শাজাহান সিরাজ, ফিরোজ আহমেদ, খোকন মিয়া, শাহদাত হোসেন প্রমুখ। সমাবেশ শেষে রফিকুল ইসলাম সুজনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয় গিয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বরাবরে স্মারক লিপি পেশ করা হয়। স্মারক লিপিতে বলা হয়, গার্মেন্টস শ্রমিক ও শিল্প রক্ষা জাতীয় মঞ্চ এর পক্ষ থেকে সালাম ও শুভেচ্ছা জানবেন। বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পে ক্রিয়াশীল ১৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত- গার্মেন্টস শ্রমিক ও শিল্প রক্ষা জাতীয় মঞ্চ গার্মেন্টস শিল্প ও শিল্পে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারীদের স্বার্থ সুরক্ষায় ২০০৫ সাল থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশ শ্রম আইনের ১৩৯ ধারা অনুযায়ী প্রতি পাঁচ বছর অন্তর নিম্নতম মজুরি নির্ধারনের বিধান এবং ১৪০ (ক) ধারায় বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুনভাবে মজুরি কাঠামো ঘোষণার বিধান আছে। কিন্তু কোন আইনের সুফল গার্মেন্টস শ্রমিকেরা পাচ্ছে না। ইতিমধ্যে শুধু গার্মেন্টস শ্রমিকেরা-ই নয়, সরকারি কর্মচারী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শিল্প সেক্টরের শ্রমিকেরা মজুরি পুনঃনির্ধারণের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। আইএলও কনভেনশন ১৩১ এ বলা হয়েছে- ন্যূনতম মজুরি অবশ্যই আইন দ্বারা নিশ্চিত করতে হবে। শ্রমিক ও তার পরিবারের প্রয়োজন, জীবনযাত্রার ব্যয়, সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা ইত্যাদিকে বিবেচনায় নিয়ে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করতে হবে ।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫নং অনুচ্ছেদে নাগরিকদের যুক্তিসঙ্গত মজুরির বিনিময়ে কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তার বিষয়টি রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। পাঁচ বছর পর পর মজুরি পুনঃনির্ধারণের আইন করা হয়েছে। মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে শ্রম আইনের ১৪১ ধারায় আছে-জীবনযাপন ব্যয়, জীবনযাপনের মান, উৎপাদন খরচ, উৎপাদনশীলতা, উৎপাদিত দ্রব্যের মুল্য, মুদ্রাস্ফীতি, কাজের ধরন, ঝুঁকি ও মান, ব্যবসায়িক সামর্থ্য, দেশের ও সংশ্লিষ্ট এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় বিবেচনা করতে হবে। ১। জাতিসংঘের পুষ্টিমানঃ জাতিসংঘের পুষ্টিমান হিসেবে ১ জনের দৈনিক খাবার খরচ ২৭৬ টাকা। ৪ জনের পরিবার হলে ৩৩,১২০ টাকা। ৫ জনের পরিবার হলে লাগবে ৪১,৪০০ টাকা। ২। গার্মেন্টস শিল্পে আমাদের প্রতিযোগি দেশসমুহের মজুরিঃ মালয়েশিয়া -২৬৩ ডলার (২০২০), তুরস্ক -৩৫২ ডলার (২০২০), ভিয়েতনাম-১৯১ ডলার (২০২০), কম্বোডিয়া-২০০ ডলার (১ জানুয়ারি ২০২৩), চীন -২১৭ ডলার (২০২০), ভারত -১৬৮ ডলার (২০২০), পাকিস্থান-১১১ ডলার (২০২০), মিয়ানমার – ৯৪ ডলার (২০২০), বাংলাদেশ – ৭৫ ডলার (২০২০)।  ৩। এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ এ্যালায়েন্সঃ ২০২২ সালে বাংলাদেশে এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ এ্যালায়েন্স এর গবেষণা অনুযায়ী একজন শ্রমিকের প্রতিদিন ৩০০০ কিলোক্যালরি গ্রহণের জন্য মাসিক খাদ্যদ্রব্যে খরচ হয় ১০,৭৫৪.০০ টাকা ও ব্যবহার্য দ্রব্যের খরচ হয় ১৩,৬১৯.০০ টাকা এবং সর্বমোট খরচ ২৪,৩৭৩.০০ টাকা। খাদ্যদ্রব্য ও ব্যাবহার্য দ্রব্যের আনুপাতিক হার ৪৪:৫৬। এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ এ্যালায়েন্স এর উক্ত গবেষণা অনুযায়ী বাংলাদেশের পোশাক শিল্প শ্রমিকদের মানসম্মতভাবে বাঁচার মতো মজুরী হওয়া উচিৎ ৪০,৪৪২.০০ টাকা। ৪। গার্মেন্টস শ্রমিক ও শিল্পরক্ষা জাতীয় মঞ্চ’র প্রস্তাবঃ জীবনযাপন ব্যয় ও পুষ্টিমান, সর্বশেষ জাতীয় পে-স্কেল-২০১৫, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ সার্কুলারে অফিস সহকারি ও শিক্ষানবীশের সর্বনিম্ন বেতন বিবেচনা করে (সিপিডি গবেষণা, এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ এ্যালায়েন্স এর গবেষণা, গার্মেন্টস এর প্রতিযোগি দেশসমুহের সর্বনিম্ন মজুরি, সাম্প্রতিক ঘোষিত বিভিন্ন সেক্টরের মজুরি কাঠামো বিবেচনা করে) সর্বনিম্ন মজুরি ২৪ হাজার টাকা প্রস্তাব করেছে গার্মেন্টস শ্রমিক ও শিল্পরক্ষা জাতীয় মঞ্চ। এই মজুরী আদায়ের জন্য ক্রেতা বা ব্র্যান্ডগুলোর সাথে সংলাপে ও ঙঊঈউ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই মজুরী অর্জন সম্ভব।
স্মারক লিপিতে নি¤œ লিখিত গার্মেন্টস শ্রমিক ও শিল্পরক্ষা জাতীয় মঞ্চের ৬দফা দাবিসমূহ:
১. অবিলম্বে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য মজুরী বোর্ড গঠন ও বেসিক ১৬ হাজার মোট ২৪ হাজার ন্যূনতম মজুরী ঘোষণা কর।
২. গার্মেন্ট শ্রমিকদের ৩টি গ্রেডসহ বার্ষিক ১০% ইনক্রিমেন্ট ঘোষণা করতে হবে।
৩. গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য স্বল্পমূল্যে রেশনিং ব্যবস্থা চালু এবং দ্রব্যমূল্য ও বাড়ী ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
৪. নূন্যতম মজুরী বোর্ডে সৎ ও অভিজ্ঞ সেক্টরাল শ্রমিক প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে হবে।
৫. গার্মেন্টস শ্রমিকদের ৬ মাসের মাতৃকল্যাণ ছুটির আইন পাশ করতে হবে।
৬. বাংলাদেশ শ্রম আইনের সকল কালাকানুন আইন বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন প্রণয়ন করতে হবে।