
এম ইদ্রিস আলী, মৌলভীবাজার।।
সিলেট অঞ্চল, প্রাকৃতিক সম্পদ ও সীমান্তঘেরা ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে দীর্ঘদিন ধরেই চোরাচালান, অবৈধ খনিজ উত্তোলন, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের মতো অপরাধ কর্মকাণ্ডের জন্য আলোচিত। এসব অপরাধের লাগাম টেনে ধরতে এবার কঠোর বার্তা দিলেন সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মুশফেকুর রহমান।
মঙ্গলবার সকালে সিলেট রেঞ্জ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জুলাই মাসের অপরাধ পর্যালোচনা সভায় তিনি জেলা ও থানা পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে স্পষ্ট নির্দেশ দেন— প্রতিটি থানায় চিহ্নিত চাঁদাবাজ, গডফাদার ও সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে পাথর ও বালু উত্তোলনের নামে যারা প্রাকৃতিক সম্পদ লুট করছে, তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান চালাতে হবে।
অপরাধ দমনে কঠোর বার্তা
ডিআইজি মুশফেকুর রহমান বলেন,
“আগামী দিনগুলো পুলিশি কর্মকাণ্ডের জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে। মাঠ পর্যায়ে সতর্কতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। অপরাধী যতো প্রভাবশালী হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। অপরাধ দমনে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, জনগণের আস্থা অর্জনই পুলিশের সবচেয়ে বড় শক্তি। তাই পুলিশের প্রতিটি পদক্ষেপ হতে হবে স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও জনবান্ধব।
প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় কঠোর নজরদারি
সিলেট অঞ্চলে পাথর ও বালু উত্তোলন একটি দীর্ঘদিনের বিতর্কিত বিষয়। আইনগত সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও নানা প্রভাবশালী চক্র রাতের অন্ধকারে বা বিভিন্ন কৌশলে এসব সম্পদ আহরণ করে। এতে যেমন সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হয়, তেমনি পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
ডিআইজি সভায় স্পষ্ট নির্দেশ দেন— পর্যটন স্পট, পাহাড়ি এলাকা ও নদী থেকে অবৈধভাবে খনিজ সম্পদ আহরণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এছাড়া বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। পাহাড় পাদদেশে বসবাসকারীদের ভূমিধসের ঝুঁকি থেকে রক্ষায় সচেতনতা কার্যক্রম জোরদার করারও নির্দেশ দেন।
অপরাধ নিয়ন্ত্রণে মাঠ পর্যায়ের উদ্যোগ
সভায় আরও জানানো হয়—
চুরি, ডাকাতি, দস্যুতা ও ছিনতাই রোধে রাত্রিকালীন টহল বাড়ানো হবে।
সীমান্তবর্তী থানাসমূহে নিয়মিত ক্রস পেট্রোল চালানো হবে।
চোরাচালান প্রতিরোধ, মাদক উদ্ধার ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
সভায় মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ জুলাই মাসে সর্বোত্তম পারফরম্যান্স প্রদর্শনের স্বীকৃতি হিসেবে ‘শ্রেষ্ঠ জেলা’ পুরস্কার অর্জন করে।
এ ছাড়া বিশেষ অবদানের জন্য চার জেলার পুলিশ সুপারদের সম্মাননা প্রদান করা হয়—
মামলা নিষ্পত্তিতে বিশেষ অবদান: তোফায়েল আহাম্মেদ, পুলিশ সুপার, সুনামগঞ্জ
সর্বাধিক চোরাচালান পণ্য উদ্ধার: মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, পুলিশ সুপার, সিলেট
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে অবদান: এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন, পিপিএম, পুলিশ সুপার, মৌলভীবাজার
মাদকদ্রব্য উদ্ধার: এ. এন. এম. সাজেদুর রহমান, পুলিশ সুপার, হবিগঞ্জ
বিশ্লেষণ
ডিআইজির এই বার্তা মূলত আসন্ন সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পুলিশের দিকনির্দেশনা। সিলেট অঞ্চলের অপরাধচিত্র বিবেচনায় নিলে বোঝা যায়—চাঁদাবাজ ও অবৈধ খনিজ আহরণকারীদের দমন করাই এখন অগ্রাধিকার। এর পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে পুলিশকে আরও তৎপর হতে হবে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা ও জনআস্থা অর্জনের ওপর গুরুত্বারোপ করে ডিআইজি আসলে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন— অপরাধী যত শক্তিশালীই হোক, আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়।