পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিগুলোতে বেতন বৈষম্য, মানহীন ও নিম্নমানের মালামালের কারণে ভঙ্গুর বিতরণ ব্যবস্থা নিরসনসহ অভিন্ন চাকরিবিধি এবং অস্থায়ীভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মীদের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছে খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
বৃহস্পতিবার সকালে ৪র্থ দিনের মতো খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রধান কার্যালয়ের সামনে সমিতির প্রধান কার্যালয়সহ সকল জোনাল ও সাব-জোনাল অফিসের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এ কর্ম বিরতিতে অংশগ্রহণ করে।
এ সময় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম ইএন্ডসি মো. আলমাস উদ্দিন, এজিএম ওএন্ডএম মো. বিদ্যুৎ মল্লিক, এজিএম ওএন্ডএম আব্দুল মুনিম, এজিএম প্রশাসন মো. রাশেদুজ্জামান, এজিএম এইচআর মো. আতাউর, এজিএম আইটি মো. সাইখুল ইসলাম, লাইনম্যান হাসিব, মিটার রিডার মনিরুজ্জামান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায়, বৈষম্যের কোন স্থান নাই’। একই দেশে দুই আইন থাকতে পারে না। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড সমিতিসমূহে শোষণ, নির্যাতন, নিপীড়ন অব্যাহত রেখেছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য দূরীকরণ ও অভিন্ন সার্ভিস কোড অবশ্যই প্রয়োজন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে জানান আন্দোলনরতরা।
এ সময় বক্তারা আরো বলেন, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দ্বৈত নীতির কারণে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ। দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের কাজে নিয়োজিত কর্মীরা একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও পদ-পদবি, বেতন-ভাতা, বোনাসসহ পদোন্নতির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে তারা।
বক্তারা আরো বলেন, সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন সময় গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে স্মারকলিপি প্রদানসহ নিয়মতান্ত্রিকভাবেই তাদের দাবি দাওয়া বাস্তবায়নের চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু সমিতির নিয়ন্ত্রয়কের ভূমিকায় থাকা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি) তাদের দাবি না মেনে বরং উল্টো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ভোলা পবিসের দুইজন এজিএমকে সাময়িক বরখাস্ত, দুইজন এজিএমকে স্ট্যান্ড রিলিজ করে অন্য পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে বদলি এবং সিরাজগঞ্জ পবিস-২ এর ১জন এজিএম ও একজন ডিজিএমকে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে সংযুক্ত করে। এতে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির প্রায় ৪০ হাজার কর্মকর্তা ও কর্মচারী চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়। এদিকে সোমবার থেকে আন্দোলনে গেলেও জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রতিটি উপকেন্দ্রে একজন করে জনবল কাজ করছে বলে আন্দোলনকারীরা জানান। তবে সব ধরনের গ্রাহক সেবা ও অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি দেশের প্রায় ৪ কোটি গ্রাহককে (৮০ শতাংশ) বিদ্যুৎ সরবরাহ দিয়ে আসছে। বিআরইবি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এসব সমিতির কর্মকর্তা ও কর্মচারী প্রতিনিয়ত নানা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলেও পদ, পদবি, পদোন্নতি, বেতন গ্রেড, সাপ্তাহিক ছুটি, একই প্রতিষ্ঠানে একই পদে নিয়মিত এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, লোকবলের স্বল্পতাসহ সব ক্ষেত্রেই বৈষম্যের শিকার সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এসব বৈষম্যের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ জানানো হলেও কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। বরং এসব ন্যায়সঙ্গত অধিকারের কথা বললেই নানাভানে হয়রানি করা হয়। বিদ্যমান বৈষম্যগুলো দূর করে বাপবিবো এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একই সার্ভিস কোড পরিচালনা করা, ৫% প্রণোদনা জুলাই-২৩ থেকে কার্যকর, ২০১৫ সালের পে-জুলাই-১৫ থেকে সমধাপে কার্যকর, ৪০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিল ভাতা, দুই দিন সাপ্তাহিক ছুটি, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা, অতিরিক্ত কাজের জন্য ওভারটাইম/ডিস্টারবেন্স অ্যালাউন্স, চিকিৎসা ভাতা, অডিটের নামে হয়রানি না করাসহ সরকার প্রদত্ত সকল সুযোগ-সুবিধা বিআরইবির ন্যায় সমিতির জন্যও বাস্তবায়ন চান তারা।