আইনের সংশোধনে সিগারেট কোম্পানির প্রভাব: দূর্বল করার চেষ্টা

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৫

জাতির সংবাদ ডটকম।।

বাংলাদেশ সরকার ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। কিন্তু বিষ্ময়ের সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, গত ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪ অধ্যাদেশ সংশোধনে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হলেও বিগত এক বছরে এ অধ্যাদেশ আইন প্রণয়নে কোন কাঙ্ঘিত অগ্রগতি হয়নি। অথচ, বিগত এক বছরে প্রায় ৬০টি অধ্যাদেশ প্রণয়ন হয়েছে। অসংখ্য মানুষের জীবন বাঁচাতে একটি অধ্যাদেশ প্রণয়নে এত অবহেলিত তা সত্যিই বিস্ময়ের! যার পিছনে রয়েছে সিগারেট কোম্পানিগুলোর ‍সুপষ্ট প্রভাব রয়েছে। কতিপয় মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বিশেষ করে অর্থ, বাণিজ্য, শিল্প, রাজস্ব বোর্ড সিগারেট কোম্পানিগুলোকে ছাড় দিতে রাজস্বসহ নানা যুক্তি তুলে ধরে থাকে অভিযোগ করেছেন বিশিষ্টজনেরা।

বুধবার (২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫) বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যাডভোকেটস বাংলাদেশ (বিটিসিএ) আহ্বায়ক ইকবাল মাসুদ, আইনজীবি সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ সাগুফতা সুলতানা, স্টপ টোব্যাকো বাংলাদেশ এর মডারেটর আমিনুল ইসলাম সুজন, গবেষক আমিনুল ইসলাম বকুল, গবেষক ও সাংবাদিক সুশান্ত সিনহা, সংস্কৃতি কর্মী হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ সৈয়দা অনন্যা রহমান প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ জানিয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালি হলে সরকারের রাজস্ব আদায় কমে যাবে বলে তামাক কোস্পানিগুলো সরকারকে বিভ্রান্ত করে। বাংলাদেশে ২০০৫ সালে যখন তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হয়, সে বছর তামাক খাত থেকে রাজস্ব আয় ছিলো ২ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ (২০২৪-২৫) অর্থবছরে তামাক খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে মোট ৪০ হাজার ৪১১ কোটি টাকা। সিগারেট কোম্পানি প্রচারণা ও নানা তথ্য বিশ্লেষণ করে আমরা জানতে পেরেছি, সিগারেট কোম্পানিগুলো আইন হতে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রেতার নিবন্ধন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা এবং ভ্রাম্যমান বিক্রয় নিষিদ্ধ সংক্রান্ত বিধান, খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধ এবং নিকোটিন পাউচ নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত বিধান বাতিলের জন্য জোর লবিং চালাচ্ছে।

বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, , সিগারেট কোম্পানি কতিপয় ব্যক্তিদের মাধ্যমে আইনটি দূর্বল করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সরকারী সংস্থাগুলো একদিকে সিগারেটের চোরাচালান সমস্যার কথা বলছে, আবার একই সাথে বিক্রেতাদের নিবন্ধন গ্রহণের বিরোধিতা করেছে। যা পরস্পর বিরোধী এবং চোরাচালান সমস্যা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা। সিগারেটের অবৈধ বানিজ্য, অবৈধ বিজ্ঞাপন, অপ্রাপ্ত বয়স্কদের কাছে তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রি ইত্যাদি রোধ করতে বিক্রেতাদের নিবন্ধন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা জরুবি বলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বিক্রেতারা নিবন্ধিত হলে চোরাচাল এবং কর ফাঁকি বন্ধ হয়ে যাবে বলে সিগারেট কোম্পানি ও বিক্রেতারা বিরোধীতা করে। অবাক বিষয় হচ্ছে সরকারী সংস্থার কতিপয় কর্মকর্তা তাদের সাথে সুর মিলিয়ে থাকে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বেজা দেশে আরো একটি নতুন পণ্য নিকোটন পাউচ উৎপাদনের অনুমতি দিতে যাচ্ছে। দেশে এই নতুন আসক্তকারি এবং স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর ক্ষতিকর নিকোটন পাউচের ব্যবহার নেই। বাংলাদেশে এই ক্ষতিকর পণ্যটিকে নিষিদ্ধ করার এখনই উপযুক্ত সময়। কিন্তু বেজার চেয়ারম্যান ও একজন উপদেষ্টার প্রভাবের কারণে নিকোটিন পাউচ নিষিদ্ধ না করার জন্যও জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আইনের সংশোধনি থেকে উপর্যুক্ত বিষয়গুলো যদি বাদ হয়ে যায়, তাহলে তা দেশের কোটি তরুণদের স্বার্থকে উপেক্ষা করে কিছু সিগারেট কোম্পানি স্বার্থে এ কাজ হয়েছে বলে জনগণের কাছে প্রতীয়মান হবে।

দেশের মানুষের স্বাস্থ্যের স্বার্থে, যুবকদের রক্ষায় সিগারেট কোম্পানির দাবির কাছে নতি স্বীকার না করার আহবান জানিয়ে আইনটি শক্তিশালী করতে দেশপ্রেমিক উপদেষ্টা, সরকারী কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যমকে সর্তক থাকতে হবে। একই সাথে প্রধান উপদেষ্টাকে যুবকদের স্বার্থে ও জনগনের স্বার্থে আইনটি শক্তিশালী করার বিধানগুলো যাতে বাদ না যায় সে বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা আহবান জানান তাঁরা।