আইন শক্তিশালীকরণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্থ করতে জনস্বাস্থ্যের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে তামাক কোম্পানি

বুধবার, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫

জাতির সংবাদ ডটকম।। 

বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) মনে করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ বিষয়ে সাম্প্রতিক বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলোর বিবৃতি অযৌক্তিক, বিভ্রান্তকর এবং অগ্রহণযোগ্য। যা সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করার এবং জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে প্রভাবিত করার অপকৌশল। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট কোম্পানিগুলোর আইন শক্তিশালী করার উদ্যোগকে বাধাগ্রস্থ করার এ ধরণের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
বিগতদিনেও তামাক কোম্পানিগুলো জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সহায়ক নীতি প্রণয়নের এ ধরণের বিভ্রান্তি তৈরির চেষ্টা করেছে। যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। গবেষণায় প্রমাণিত, তামাক ব্যবহারজনিত স্বাস্থ্যক্ষতির আর্থিক বোঝা তামাক খাত থেকে অর্জিত রাজস্বের তুলনায় বহুগুণ বেশি। তামাকের কারণে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষ অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। গবেষণা অনুসারে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ক্ষতি প্রায় ৮৭ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। এসময়কালে তামাকজাত পণ্য থেকে রাজস্ব আয় ছিলে মাত্র ৪১ হাজার কোটি টাকা। যে কোন রাষ্ট্রের জন্য বিদেশি বিনিয়োগ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ তবে সেটি কোনভাবেই জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশকে হুমকিতে ফেলে নয়।
যে কোন সরকারের দায়িত্ব এবং সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সতর্কতামূলক নীতি অনুসরণ করা। তামাক কোম্পানির বিবৃতিতে, ধোঁয়াবিহীন নিকোটিন ও তামাকজাত পণ্যকে তথাকথিত “কম ক্ষতিকর বিকল্প” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যা অসত্য ও বিভ্রান্তকর। ধোঁয়াবিহীন নিকোটিন ও তামাকজাত পণ্য তরুণদের মধ্যে নতুন করে নিকোটিন আসক্তি তৈরির ঝুঁকি বাড়ায়। সুতরাং এসকল পণ্য নিষিদ্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-স্বাক্ষরকারী প্রথম রাষ্ট্র। এফসিটিসি এর আর্টিক্যাল ৫.৩ তে তামাক নিয়ন্ত্রণ ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়া তামাক কোম্পানির প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখার বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। উক্ত আর্টিক্যাল অনুসারে তামাকজাত পণ্য উৎপাদন ও বিপণনের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানসমূহ কোনভাবেই সরকারের স্টেকহোল্ডার বা অংশীজন হতে পারে না। সরকারের উদ্দেশ্য তামাকজনিত রোগ ও মৃত্যু হার কমিয়ে আনার মাধ্যমে জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং দেশকে তামাকমুক্ত করা। অপরদিকে, তামাক কোম্পানির লক্ষ্য কিশোর তরুণসহ জনগণকে তামাকে আসক্ত করে মুনাফা অর্জন। সুতরাং এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী ও সাংঘর্ষিক উদ্দেশ্য নিয়ে কেউ স্টেকহোল্ডার বা অংশীজন হতে পারে না।
বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট মনে করে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবিত সংশোধনী বাস্তব এবং প্রমাণভিত্তিক। প্রস্তাবিত সংশোধনী পাস করা হলে দেশের অর্থনৈতি উন্নয়ন, পরিবেশ, সর্বপরি জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সুতরাং জোট তামাক কোম্পানিগুলোর অসত্য ও বিভ্রান্তকর প্রচারণায় গুরুত্বারোপ না করে দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি শক্তিশালী করার আহবান জানাচ্ছে।