শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫

আওয়ামী লীগ না থাকলেও আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে

শনিবার, অক্টোবর ১১, ২০২৫

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ না থাকলেও আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ৬ অক্টোবর রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দীর্ঘ একান্ত সাক্ষাৎকারে এমন মনোভাব প্রকাশ করেন তিনি। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগদান, নিউইয়র্ক সফরে বিএনপির অর্জন, জুলাই সনদ বিষয়ক বিতর্ক, আগামী নির্বাচন ঘিরে বিএনপির প্রস্তুতি ও প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়া, অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের মূল্যায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন মির্জা ফখরুল। কথোপকথনে উঠে এসেছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা, তার নির্বাচনে অংশগ্রহণ সংক্রান্ত পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বিবিসি বাংলায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আলোচিত সাক্ষাৎকার এবং দেশে ফেরার প্রসঙ্গও।

কেমন আছেন? আপনার শারীরিক অবস্থা এখন কেমন?

মির্জা ফখরুল: আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। বুঝতেই পারছেন অনেক ব্যস্ত সময় যাচ্ছে।

জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে আপনিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা যুক্তরাষ্ট্র সফর করলেন। বিষয়টিকে চমকপ্রদ এবং ব্যতিক্রমী বলে অভিহিত করছেন সবাই।

মির্জা ফখরুল: দেশের ইতিহাসে বোধহয় এবারই প্রথমবার কোনো সরকারপ্রধান (প্রধান উপদেষ্টা) রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। সে হিসেবে এটা নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী সফর ছিল।

এই সফরে দল হিসেবে বিএনপির অর্জন কী?

মির্জা ফখরুল: বিএনপির অর্জন মূলত দুটি। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হলো—দল হিসেবে এখন এভাবে জাতিসংঘে যাওয়া। জাতিসংঘে বিএনপির এটি প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ না হলেও ভিন্ন প্রেক্ষাপটে ১৫-১৬ বছর পর যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেক। অধিবেশনের সাইডলাইনে অনেকগুলো বৈঠক হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও তাদের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে। ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরামে থাকার সুযোগ হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলার এবং আমার কথাগুলো বলার সুযোগ হয়েছে। এগুলো তো বড় অর্জন।

নিউইয়র্কে বিমানবন্দরে প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে যাওয়া রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের হেনস্তা করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?

মির্জা ফখরুল: দুঃখের সঙ্গে বলছি, কিছু মনে করবেন না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটা একটা খারাপ সংস্কৃতি। আওয়ামী লীগ অতীতেও এমন করেছে। এটাই তাদের চরিত্র। তারা এমনটাই করে থাকে। সুতরাং এটা নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামানোর প্রয়োজন মনে করি না।

নিউইয়র্কে আপনি প্রধান উপদেষ্টার প্রশংসা করায় অনেকে আপনার সমালোচনা করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিকে ফেভার করছে বলে আপনি প্রশংসা করেছেন।

মির্জা ফখরুল: এগুলো হচ্ছে অলীক কল্পনা। আমার নেতা আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তার সুরে কেউ কথা বললে তা নিয়ে কথা বলাকে নিজের দায়িত্ব বলে মনে করি। তাতে আমার নেতাকে বরং আরও ওপরে নিয়ে যাচ্ছি। বিষয়টিকে এভাবে বুঝতে হবে। ভিন্নভাবে এটাকে দেখার যৌক্তিকতা নেই।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় এক যুগ পর বিদেশি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

মির্জা ফখরুল: এটা অত্যন্ত আনন্দের কথা। বিএনপির জন্য তো বটেই, পুরো দেশের জন্য এটি আনন্দের বিষয়। তিনি (তারেক রহমান) তার সাক্ষাৎকারে যেসব কথা বলেছেন, তা জনগণ অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে গ্রহণ করেছে।

তারেক রহমান দেশে কবে ফিরবেন?

মির্জা ফখরুল: খুবই শিগগির তিনি ফিরবেন। হয়তো সামনের মাসেই ফিরতে পারেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে এখন তাদের শাসনকালের শেষ পর্যায় চলছে। তাদের সার্বিক কার্যক্রম কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

মির্জা ফখরুল: একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে এই সরকার কার্যভার গ্রহণ করেছে। আপনারা জানেন প্রায় ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট শাসনের পর ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিগত সরকারের পতনের পর আমরা সবাই মিলেই এই অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়িত্ব দিয়েছি। বিগত ১৫ বছরে তারা (আওয়ামী লীগ) দেশের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সব কাঠামো ভেঙে দিয়েছে। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে। তেমন একটা শূন্য অবস্থা থেকে শুরু করা এবং কতগুলো নেতিবাচক জায়গা থেকে শুরু করা, এটা এ সরকারের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। গত সরকারের আমলে পুলিশ প্রশাসনকে দলীয়করণের কারণে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছিল বেশি। ঠিক যেভাবে আশা করেছিলাম, সেভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি এই দলীয়করণের কারণে। অর্থনৈতিক দিক থেকে বললে ক্ষমতাচ্যুত সরকার যেভাবে ব্যাংকগুলোকে ধ্বংস করেছে, লুটপাট করেছে এবং লুটপাটের অর্থনৈতিক আইন করেছিল তারা। এসব বিষয় একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার অনেকটাই সফল হয়েছে।

সর্বোপরি ব্যাপারটা হচ্ছে যে, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) চেষ্টা করেছে। কিন্তু সাধারণত একটা অভ্যুত্থানের পর আপনার কিছু সমস্যা থাকেই। সে সমস্যাগুলো ছিল। এই যে মব বা ভায়োলেন্স—এগুলো ছিল; কিন্তু এগুলো আস্তে আস্তে কমে এসেছে।

আর বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আন্দোলনের আগে এবং আন্দোলনের সময়ে যে ঐক্য ছিল, পরবর্তী সময়ে তাতে অনেকটা ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে কিছুটা সমস্যা ছিল। এখন আমরা দেখলাম, সংস্কারগুলো হলো, একমত হলো সবাই। এ নিয়ে অনেকে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। আমরাও ফেলেছি। আমরা বিশ্বাস করি, ভবিষ্যতে যে সংসদ আসবে, তারা বাকি সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারবে।

জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিয়ে বেশ তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। অবশেষে সনদ প্রণয়নে গণভোটে সম্মত হয়েছে বিএনপি। যদিও শুরুতে গণভোট নিয়ে আপনাদের আপত্তির কথা শোনা গেছে।

এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এত সময় লাগার কারণ কী?

মির্জা ফখরুল: সময় লেগেছে কারণ গণভোট আর নির্বাচন একসঙ্গে চলতে পারে না। গণভোট আমাদের সংবিধানেও নেই। কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থে, রাজনৈতিক দলগুলোর মতৈক্যের স্বার্থে বড় দল হিসেবে বিএনপি বিষয়টি মেনে নিয়েছে, যাতে সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে নির্বাচনটা তাড়াতাড়ি হয়।

জুলাই সনদের সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্পর্ক কী?

কিছু তো অবশ্যই আছে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো সংসদ নির্বাচনটা নির্ভর করবে রাজনৈতিক কাঠামোর মধ্যে কোন কোন বিষয় নতুন করে এসেছে এবং মানুষ সেগুলো কীভাবে নিচ্ছে। এরপরই নির্বাচনটা হবে। সুতরাং কিছু বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো আগেই একমত হয়ে গেলে পরে সমস্যা থাকবে না। আমরা মনে করি, রাষ্ট্রের কাঠামোর পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন। এজন্যই তো আমরা ৩১ দফা দিয়েছি।

ফেব্রুয়ারিতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?

মির্জা ফখরুল: আমি সম্পূর্ণভাবে আশাবাদী। তবে অংশগ্রহণমূলক বলতে যদি এখন আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ বোঝান, তাহলে তো হবে না। কারণ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ রয়েছে।

আগামী নির্বাচন ঘিরে বিএনপির প্রস্তুতি এখন কোন পর্যায়ে?

মির্জা ফখরুল: প্রস্তুতি ভালো। একটা নির্বাচনে যাওয়ার জন্য যতটুকু প্রস্তুতি দরকার, তার সবই করছি। অবশ্য বিএনপি নির্বাচনের জন্য সবসময় প্রস্তুত থাকে। বিএনপির যাবতীয় কার্যক্রমই নির্বাচনকেন্দ্রিক। কারণ আমরা নির্বাচনকেন্দ্রিক দল। সুতরাং আমরা সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।

অক্টোবরের মাঝামাঝি সম্ভাব্য প্রার্থীদের সংকেত দেওয়ার কথা বলেছেন।

মির্জা ফখরুল: আমাদের দলের নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থী বাছাইয়ের কার্যক্রম চলছে। তৃণমূল থেকে মতামত দেওয়া হচ্ছে বিভিন্নভাবে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার তথ্য, নিজস্ব জরিপসহ নানা প্রক্রিয়ায় কাজ করছি।

আগে তো নির্বাচন কমিশন তপশিল ঘোষণার পর বিএনপির দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হতো। তারপর প্রার্থী বাছাই করা হতো। এবার কি তাহলে প্রার্থী চূড়ান্ত করার পর ফরম দেওয়া হবে?

মির্জা ফখরুল: ফরম বিক্রি হবে। যেটা হওয়ার পরেই (প্রার্থীকে সংকেত দেওয়া) হবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা কেমন? তিনি কি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন? হলে কোন আসন থেকে?

মির্জা ফখরুল: তার শারীরিক অবস্থা অনেকটা স্থিতিশীল। তবে তার প্রার্থিতা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়টি নির্ভর করবে তার স্বাস্থ্যের ওপর। তিনি নির্বাচন করলে কোন আসন থেকে করবেন, সেটা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল। কারণ তিনি যে আসনে প্রার্থী হবেন সেখানেই বিজয়ী হবেন।সূত্র -বার্তা বাজার