আজমপুর বাজারের স্মৃতিকথা ও সম্প্রতি রুমন হত্যা

বুধবার, অক্টোবর ৪, ২০২৩
নিউইর্ক প্রবাসি ডাঃ শামীম এর এফবি আইডি থেকে  
আমি পাতাকোট গ্রামের সন্তান। আজমপুর বাজার আমার প্রিয় বাজার। In fact, স্কুল ছাত্র হিসেবে জীবনে অনেকবার “ A village Market” এর উপর রচনা লিখতে গিয়ে আমি অনেকবার আমাদের প্রিয় এই বাজারটির শরীরতন্ত্র ,অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ও আজমপুর বাজারে আমার নিজের কর্মকান্ডের হিসাব-নিকেশ তুলে ধরেছি। মিরসরাই থানার ৫ নং ওচমানপুর ইউনিয়ন এর অন্তর্গত ফেনী নদীর কোল ঘেসে বেড়ে উঠা এই বাজারটি পাতাকোট, মরগাং,ওচমানপুর, সাহেবপুর ও বাশখালি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী ও সাক্ষী। নানান পেশা, ও নানান রং ও বয়সের মানুষের পায়চারী এই বাজারের বুকে।ছাত্র অবস্হায় ছুটির দিনে পারিবারিক সেংসন উপেক্ষা করে সকাল-সন্ধ্যা বাজার করা , বাজারে এসে পারিবারিক নিষেধাজ্ঞা ভুলে গিয়ে প্রসারিত বুকে শ্বাস নেয়া ,সবুজ সংঘে কেরাম খেলা, বাজারের জন্য দেয়া টাকা পয়সা থেকে খাজনা কেটে চা, ডেনিস অথবা বরফি খাওয়ার কথা আজো ভুলিনি।
একবার সাইকেল চালাতে গিয়ে পড়ে কুমারের বিক্রী করার জন্য সাজানো হাডি-পাতিলের পরসা ভেংগে চুর্মাচুর করে পাশে কাশেম সওদাগরের মুদি দোকানে জামিনে ছাড়া পাওয়ার জন্য ঘন্টা খানেক জেল খাটতে হয়েছিল।একই গলিতে আমার জেঠাত ভাই নওশা ভাইছার ফার্মেসি ছিল । ছোট্ট ভাইছা ডাকতাম। উনি থাকাতে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে খুব কম সময় স্বগৃহে প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। প্রচুর ব্যাথার কথাটা নিজেই গিলে ফেলেছি।
আজকের প্রসংগ ভিন্ন।কিশোর খুন । রুমনের খুন। গত ৭২ ঘন্টা আগে ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাসিত ঘটনা কারো কাম্য নয়।নিস্পাপ শিশুটি কতটুকু রাজনীতি করতো জানিনা। তবে তার বয়সের দিকে তাকালে তাকে পেটি রাজনীতিক বলা চলে কিনা, রাজনীতির মাঠ গরম করা কর্মীরাই ভালো বলতে পারবেন। সে কোন দল করতো সেটা ও আমার জানার দরকার আছে বলে মনে করিনা।
কারা তাকে খুন করলো , কেন খুন করলো নাকি দৈবাৎক্রমে খুন তা জেনে ও রুমন কিংবা রুমনের পরিবারের কাজে আসবেনা। কিন্তু এরকম শত শত রাজনীতি না করা রুমন রাজনৈতিক খুনের শিকার আমাদের দেশে নতুন নয়।রুমনরা কি জাদুর বশে অপরিনত বয়সে রাজনীতিতে নামছে, পুঁটিমাছ সেজে বড়শীতে রাঘব-বোয়ালদের আধারে পরিনত রুমনরা নিজেরাই জানেনা।
আজমপুর বাজারের মাটিতে আজ ফেনী নদীর মাছের গন্ধ নেই, চাচা-ভাতিজা, মামা-ভাগিনা , বন্ধু -বান্ধব ও পাড়া-প্রতিবেশীর সখ্যতা নেই ,আছে তাজা রক্তের গন্ধ, আছে গাঁজা ও ফেনসিডিলের বোতলের ঝনঝনানী।
শান্তির জনপদে আজ বেজায় অশান্তি।
দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়েছে দেখেছি, অন্যদিকে আইন-শৃংখলার অবনতি , রাজনীতি, সমাজ-নীতির মিনিটে মিনিটে অধঃপতন উন্নয়ন কে ক্ষনে ক্ষনে ম্লান করে রেখেছে। আমি রাজনীতির লোক নই। তাই ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া বাংলাদেশে আমি রাজনীতির কোন ভুমিকা দেখছিনা।দেশের উন্নয়নে করছে কৃষক-শ্রমিক গোষ্টি। ঝড়-বৃষ্টি, তীক্ষ্ন রোদে অথবা চরম নিরাপত্তাহীনতা ও প্রতিকুল কাজের পরিবেশে রক্তকে পানি করে দেশের উন্নয়নের ঝান্ডা তারাই উড়ায়।
আর গনতন্ত্র , সমাজতনত্রের বুলি , রাজনীতির দোহাই দিয়ে তথাকথিত এলিট শ্রেনী মাঠপর্যায়ে অপরাজনীতির বিষবাস্প ছড়িয়ে সংসদে বসে সতিনের মতো ঝগড়া করে আর নিজের পকেট ভারী করে। আমরা ও রুমনরা পাঁচ বছর পরপর পশুর মতো একজন অপরজনের মাংস ছিঁড়ে উনাদের ঢাকায় পাঠাই সংসদে ইমামগিরি , জিকির ও খুতবা পড়ার দ্বায়িত্ব দিয়ে। সারা দেশের ১৮ কোটি মানুষ সন্মানিত ঈমামদের পিছনে নামাজ পড়ি কবুলিয়তনামার উদ্দেশ্যে । কবুল আর হচ্ছেনা কেন জানি।
মিরসরাই এর মাটি পবিত্র ও উর্বর ও মানুষগুলো নিরীহ । আমাদের আছে বিস্তৃীর্ন চরান্চল, সোনাপাহাড়, উর্বর সমভুমি , বিভিন্ন পর্যটন আকর্ষন আর সাম্প্রতিক কালে গড়ে উঠা ইকোনোমিক জোন । রাজধানী ঢাকা ও বানিজ্য রাজধানী চট্টগ্রামের সাথে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্হা মিরসরাইয়ের ভৌগলিক অবস্হানকে যেমন সুদৃঢ করেছে, তেমনি বিদেশী বিনিয়োগও আকৃষ্ট হতে বাধ্য করেছে এই চরান্চল। মুহুরী প্রজেক্ট ও আজমপুর বাজারকে বাদ দিয়ে মিরসরাইয়ের রুপমাধুর্য যেমন অপুর্ন তেমনি অর্থনৈতিক সাফল্য ও চিন্তাতীত। শুধুমাত্র দক্ষ কর্মশক্তি যোগান দিতে পারলেই এক ইকোনোমিক জোনই মিরসরাই এর ভাগ্য পরিবর্তন করতে সক্ষম হবে বলে রাজনৈতিক ও অর্থনীতিবিদগন মনে করেন।
তাহলে আমরা সঠিক অবস্হানে থাকা সত্বেও এইজ স্পেসিফিক কাজটা না করে মরিচিকার পিছনে দৌড়াচ্ছি কেন শিশু-কিশোর বয়স থেকেই।আমাদের রুমনদের হাতে যেখানে বই-খাতা থাকার কথা, সন্ধ্যা বেলায যে রুমনরা পড়ার টেবিলে থাকার কথা, রাত দশটা অবধি তারা কেন হাতে মরানাস্ত্র নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় ব্যস্ত। কোথাও কোন গোলমাল নিশ্চয়ই আছে, সে কথা কি আর বলতে? অর্ধেক কইলে বলদে বুঝে, পুরা কইলে গাধায় বুঝে- মুরুব্বীদের কথা এখানে খাটার কথা।
এবার মোদ্দাকথায় আসি। রুমন খুন হয়েছে। এই বয়সে কোন রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা মাথায় নিয়ে না ঘোরার কথা থাকলেও সে অপরাজনীতির শিকার হয়ে মারা গেছে। তোমরা যারা শ্লোগান দিচ্ছ , এক রুমন মরে গেছে, লক্ষ রুমন জন্ম নেবে। রুমন হত্যার বদলা -নিতে হবে, নিতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। বদলা নিতে গেলে আরেক রুমন বলি হবে। খুনের বদলা খুন দিয়ে নিলে আরেক মায়ের কোল খালি হবে। এভাবে অংক কষতে কষতে দেখবে হিসেব মিলছে না। বিয়োগ আর বিয়োগ।
খুনের বিচার খুন দিয়ে হয়না। খুনের বিচার যাদের করার কথা বিচার বিভাগে কর্মরত ও অভিজ্ঞরা করুক না।
আসুন না আমরা আমজনতা নিজেদের কাজ নিজেরাই করি। বয়স অনুযায়ী যেটা করার কথা সেটা করি। আমরা মিরসরাইবাসীরা ভাগ্যবান। আমাদের আছে রাজনৈতিক সিংহ পুরুষ, প্রথিতযশঃ ও প্রজ্ঞাপুরুষ আমাদের প্রিয় নেতা ইন্জিনিয়ার মোশারফ হোসেন এম পি,সাদা মনের মানুষ , বাতিঘর একজন ডাঃ জামশেদ আলম,একজন মানবিক মানুষ ব্রিগেডিয়ার শামস। আশাকরি আপনাদের চাষ করা জমিতে আমাদের শিশু-কিশোর রা বাম্পার ফলন ঘটাতে পারবে। আর কোন রুমনের মা’র কোল খালি না হউক। মিরসরাইতে চিরাচরিত শান্তি বিরাজ করুক। কোন বিএনপি বা আওয়ামীলীগ আমরা হতে চাইনা। আমরা চাই মিরসরাবাসী থাকতে। আমরা থাকতে চাই দুধে-ভাতে।
সবাই ভালো ও নিরাপদে থাকুন।
( সম্পাদনায় নুরুল আলম)