
মিজানুর রহমান, ইবি প্রতিনিধিঃ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দা’ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ৩৩তম ব্যাচের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯ টায় অনুষদ ভবনের সামনে থেকে ভিন্নধর্মী একটি নিরব র্যালী বের হয়। র্যালীটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষীন শেষে একই স্থানে সমবেত হয়। এরপর বেলা ১১ টা থেকে অনুষদ ভবনের ৪২৭ নম্বর কক্ষে আলোচনা সভা ও বিদায়ী শিক্ষার্থীদের ক্রেস্ট প্রদানের মাধ্যমে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন থিওলজি অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ.ব.ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী এবং বিভাগের এমটিআইএস ভর্তি কমিটি (২০২৩)-এর সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ গোলাম মাওলা। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ রহিম উল্যাহ এবং সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক ড. মুহাঃ কামরুজ্জামান। এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.মোঃ ওবায়দুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্রশিবির ইবি শাখার সভাপতি মাহমুদুল হাসান, ছাত্রদল ইবি শাখার আহ্বায়ক সাহেদ আহমেদ, সদস্য সচিব মিথুন সহ বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
এসময় বিদায়ী শিক্ষার্থী নুর জাহান বলেন, বিদায়ের মুহূর্ত আমাদের জন্য আবেগপূর্ণ হলেও, আমরা গর্বিত যে র্যাগ ডে-এর মতো অপসংস্কৃতি পরিহার করে শৃঙ্খলাপূর্ণ র্যালির মাধ্যমে আমাদের বিদায় অনুষ্ঠান শুরু করতে পেরেছি। ২০১৯ সালে নবীনবরণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের এই বিভাগের সঙ্গে পথচলা শুরু হয়েছিল, আর আজ আনুষ্ঠানিকভাবে সেই অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটল। সফলভাবে শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারায় আমরা মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
থিওলজি এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের ডিন ড. আ.ব.ম. ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী বলেন, বিগত ১৬ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে নতুন বিভাগগুলো চালু করা হয়েছে, তার অধিকাংশই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে তার লক্ষ্য থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। আমি উপাচার্য মহোদয়কে ইসলাম সম্পর্কিত নতুন কিছু বিভাগ চালুর জন্য অনুরোধ করছি। এখানে বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলোতে শুধুমাত্র বিজ্ঞান পড়ানো হয়, তবে ইসলাম শিক্ষা দেওয়া হয় না। অন্যদিকে, ধর্মতত্ত্ব বিভাগের ক্ষেত্রে কেবল ইসলাম সম্পর্কিত বিষয় পড়ানো হয়, কিন্তু বিজ্ঞান শেখানো হয় না। আদর্শভাবে, বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলোতে বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মতত্ত্বের সমন্বয় করা, আর ধর্মতত্ত্ব বিভাগে ধর্মতত্ত্বের পাশাপাশি বিজ্ঞানের শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা উচিত ছিল।
প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রাচীন বিভাগ। বিভাগকে সমৃদ্ধ করতে সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, পেপার প্রেজেন্টেশন এগুলোতে ছাত্র এবং শিক্ষক সমানভাবে অংশগ্রহণ করবে। আরবি, ইংরেজি এবং বাংলায় এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা ত্রৈমাসিক ও বার্ষিক গবেষণা পত্রিকা প্রকাশ করতে পারে। আশা করছি, বিভাগ ছাত্রদের সম্পাদনায় এই উদ্যোগ গ্রহণ করবে। টাকা কোন বড় বিষয় নয়, মূলত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে টাকার ব্যবস্থা হয়ে যাবে। যদি আমরা শুধু টাকার পেছনে ছুটি, তবে সময় নষ্ট হবে, মেধার অপচয় হবে।
এছাড়াও বলেন আগামী ৫ তারিখে মিশরের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ আছে। মিশরের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা মাস্টার্স ও পিএইচডি করতে যেতে পারে, সে বিষয়ে আমরা প্রচেষ্টা চালাবো। তোমরা স্বপ্ন দেখো তোমাদের বাস্তব স্বপ্নগুলো আমার অস্তিত্বের থেকেও বড়। বিভাগ থেকে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে ও বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলেছি।
বিদায়ী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহিম উল্যাহ বলেন, আমরা বিদায়ী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে বিদায় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে পেরেছি। আল্লাহর অসীম রহমতে সবাই সুস্থ থেকে শিক্ষাজীবনের সফল পরিসমাপ্তি ঘটিয়েছে। আমরা প্রত্যেকে একে অপরের জন্য দোয়া করি, যাতে ভবিষ্যতে সবাই উন্নতি ও কল্যাণ লাভ করতে পারে।
অনুষ্ঠান শেষে অথিতিবৃন্দ সহ ৩৩ তম ব্যাচের বিদায়ী শিক্ষার্থীদের ক্রেস্ট উপহার দেওয়া হয়।