জাতির সংবাদ ডটকম।।
ইসলামী সমাজের আমীর হজরত সৈয়দ হুমায়ূন কবীর বলেছেন, গণতন্ত্রসহ মানব রচিত সকল ব্যবস্থা চরম দুর্নীতি, কারণ মানব রচিত ব্যবস্থায় সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও শাসন কর্তৃত্ব মানুষের। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত থাকায় দেশের প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতি ও বৈষম্যের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলছে, যার কারণে মানুষের দুনিয়ার জীবনে দূর্ভোগ ও অশান্তি বিরাজ করছে এবং তাদের আখিরাতের জীবনও ধ্বংস হচ্ছে। সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলামের আইন-বিধান প্রতিষ্ঠিত হলেই দুর্নীতি ও বৈষম্য মুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র গঠিত হবে, ফলে সকল মানুষের ধর্মীয় অধিকারসহ সকল অধিকার আদায় ও সংরক্ষণ হবে এবং যারা ইসলামের আইন-বিধান প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে তারা আখিরাতে মহাক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়ে জান্নাতবাসী হবে।
ইসলামী সমাজ এর উদ্যোগে আজ ২৫ জানুয়ারী ২০২৫ ইং, শনিবার, দুপুর ২টায়, রাজধানী ঢাকার সবুজবাগ থানাধীন বাসাবো বালুর মাঠে, ইসলামী সমাজের কেন্দ্রীয় নেতা আবু জাফর মুহাম্মাদ সালেহ্ ও আসাদুজ্জামান বুলবুলের যৌথ সঞ্চালনায় “সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলামের আইন-বিধান প্রতিষ্ঠার উপায়” বিষয়ে অনুষ্ঠিত গণজমায়েতে ইসলামী সমাজের আমীর সৈয়দ হুমায়ূন কবীর বলেন, গণতন্ত্রের অধীনে নির্বাচন, গণ আন্দোলন ও সশস্ত্র লড়াই ইত্যাদির কোনটাই ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ঈমানদারগণের রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব লাভের কুরআন ও সুন্নাহ সম্মত পদ্ধতি নয়। কারণ এসব পদ্ধতিতে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পরিবর্তে মানুষকে রব্ব তথা সার্বভৌমত্বের মালিক মানা হয়। তিনি বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলামের আইন-বিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে লোকদেরকে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকেই একমাত্র রব্ব-সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, আইনদাতা-বিধানদাতা ও নিরংকুশ শাসনকর্তা মেনে ঈমান আনার, এরই ফলশ্রুতিতে একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনা গ্রহণ করার এবং এরই বাস্তবায়নে তাঁকে আল্লাহর রাসূল মেনে তাঁর শর্তহীন আনুগত্য অনুসরণ ও অনুকরণের অঙ্গীকার দাওয়াত দিয়েছিলেন। দাওয়াত কবুলকারী সাহাবাদেরকে তাঁর নিজ নেতৃত্বের আনুগত্যে ঐক্যবদ্ধ করে জাহিলিয়্যাত তথা মানব রচিত ব্যবস্থার ভিত্তিতে গঠিত ও পরিচালিত সমাজের বিরুদ্ধে সমাজ গঠন আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বের আনুগত্যে ঈমান ও ইসলামের দাওয়াত কবুলকারীগণের সমাজ গঠন আন্দোলনের প্রেক্ষিতে মানব রচিত ব্যবস্থার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতা ও কর্মীদের সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে। দ্বন্দ্বের মূল বিষয় ছিলো সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও শাসন-কর্তৃত্ব (রুবুবিয়্যাত)। আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবাগণ সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত মানুষের সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও শাসন-কর্তৃত্ব অমান্য করে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর মেনে নিয়েছিলেন এবং লোকদেরকেও তিনি ও তাঁর সাহাবাগণ মানুষের সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও শাসন-কর্তৃত্ব অমান্য করে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর মেনে নেওয়ার আহবান জানাতে থাকেন, ফলে দন্দ্বের মাত্র বৃদ্ধি পেয়ে চরম পরিস্থিতি তৈরি হয় এবং মানব রচিত ব্যবস্থার ভিত্তিতে নেতৃত্বদানকারী নেতারা তথা আবু জাহিল গংরা আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে হত্যা করার মাধ্যমে তাঁর নেতৃত্বের আনুগত্যে গঠিত ও পরিচালিত সমাজকে নিশ্চিহ্ন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করলো, এ পদক্ষেপ গ্রহণের পূর্বেই মদিনার প্রভাবশালী গোত্র আউস ও খাজরাজের বহুলোক ঈমান ও ইসলামের দাওয়াত কুবল করে আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নেতৃত্ব ও আনুগত্যে দৃঢ়তার সাথে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং মদিনায় মানব রচিত ব্যবস্থার ভিত্তিতে নেতৃত্বের নাজুক অবস্থা সৃষ্টি হয়, ফলে ইসলামের আইন-বিধান প্রতিষ্ঠার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এমতাবস্থায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে তিনি এবং তাঁর মাক্কি সাহাবাগণ মদিনায় হিজরত করেন এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে মদিনায় রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব দান করেন। এভাবেই রাষ্ট্রীয় নেতৃত্ব লাভ করে তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নির্দেশে পর্যায়ক্রমে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে মানুষের মনগড়া আইন-বিধানের মূলোৎপাটন করে ইসলামের আইন-বিধান মানুষের জীবনে তথা সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠা করেন। এটাই সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলামের আইন-বিধান প্রতিষ্ঠার আল্লাহর নির্দেশিত এবং তাঁরই রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) প্রদর্শিত একমাত্র উপায়- পদ্ধতি। সকল মানুষের সার্বিক কল্যাণে ইসলামী সমাজ আল্লাহর নির্দেশিত এবং তাঁরই রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রদর্শিত পদ্ধতিতেই সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলামের আইন-বিধান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লোকদেরকে মানব রচিত ব্যবস্থা ত্যাগ করে সমাজ ও রাষ্ট্রসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াতের মাধ্যমে সমাজ গঠন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। দল-মত নির্বিশেষে সকলকে তিনি ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ইসলামী সমাজে শামিল হওয়ার আহবান জানান।
গণজমায়েতে আরও বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় নেতা- মুহাম্মাদ ইউসুফ আলী মোল্লা, মুহাম্মাদ ইয়াছিন, সোলায়মান কবীর, আজমুল হক, মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহ্, আবু শামাহ্, ইসমাঈল দাড়িয়া, গুলজার আহম্মদ, মোঃ সোহেল, মিনহাজ উদ্দিন এবং বিভিন্ন জেলা ও মহানগর পর্যায়ের দায়িত্বশীলগণ।