একাত্তরের চেতনা ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে -ঠাকুরগাঁওয়ে মির্জা ফখরুল

সোমবার, নভেম্বর ১০, ২০২৫

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি :

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য একটি মহল সুপরিকল্পিতভাবে চক্রান্ত চালাচ্ছে। যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশ করে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিল এবং মা-বোনদের ওপর নির্যাতন করেছিল, সেই চক্রই আজ দেশটাকে ‘গিলে খাওয়ার চেষ্টা করছে’। সোমবার ঠাকুরগাঁও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ জেলা ইউনিট কমান্ডের উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আজকে একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধারা নাকি ৭১-এ কিছুই করেননি, দেশটার জন্য কোনো অবদান রাখেননি। এখন যারা ‘২৪-এ করেছে, তারাই সব করেছে। এইরকম একটা ধারণা দিচ্ছে।” উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা তখন হ্যাঁ সূচক মন্তব্য করলে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে মির্জা ফখরুল বলেন, “৭১-এ আমার হাজার হাজার ভাইকে শহীদ করা হয়েছে, অন্যায়ভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ওই একাত্তরে আমাদের লক্ষ লক্ষ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। ওই একাত্তরে আমাদের মা-বোনদেরকে অন্যায়ভাবে তাদের উপর অত্যাচার, নির্যাতন করে, শ্লীলতাহানি করে হত্যা করা হয়েছে। এই কথাগুলো আমরা ভুলতে পারি? দীর্ঘ ৯ মাস যারা যুদ্ধ করেছি পরিবার-পরিজনের কোনো খবর নেইনি।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “সেই দিনটাকে ভুলে দেওয়ার চেষ্টা করলে, সেটাকে কি ভুলে দেওয়া যায় ভাই?” উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা ‘না’ সূচক মন্তব্য করলে তিনি দৃপ্ত কণ্ঠে বলেন, “আমার জন্মটাকে কি আমি ভুলতে পারি?” তিনি আরও বলেন, “আজকে সুপরিকল্পিতভাবে একটি চক্র, একটি মহল, যারা ১৯৭১ সালে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে যোগসাজশ করে এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছিল, তাদের পরিবারকে হত্যা করেছিল, তাদের মেয়েদেরকে তুলে দিয়েছিল পাক বাহিনীর হাতে। তাদের সঙ্গে কি এদেশের মানুষ আপোস করতে পারে?” এসময় উপস্থিত একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ¯েøাগান ধরেন “একাত্তরের হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার। রাজাকার আল বদর হুঁশিয়ার সাবধান।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “এরা আজকে দেশটাকে গিলে খাওয়ার চেষ্টা করছে, গ্রাস করার চেষ্টা করতেছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইদের ধর্মীয় অনুভূতিকে বিক্রি করে তারা ওই কাজগুলো করতে চাচ্ছে। আমরা সেটা হতে দিতে পারিনা। আজকে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা, এর চেতনাকে সামনে আনতে হবে।”
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, “আমাদের ম্যাডাম বেগম খালেদা জিয়া মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় তৈরি করেছিলেন। আজকে আপনারা ভাতা পাচ্ছেন, তাই না? এই ভাতার শুরুটা করেছিলেন আমাদের বেগম খালেদা জিয়া।” তিনি সকলকে বিভেদ সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা হিন্দু-মুসলমান এখানে ভাই ভাই, একসাথে আছি। এটাকে কেউ যেন ভাগ করতে না পারে।” নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব পরিষ্কার ভাষায় বলেন, “শুধু একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই— আজকে যে চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র চলছে নির্বাচনকে বানচাল করে দেওয়ার, নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়ার, সেই নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়া মানে আমাদের সর্বনাশ হওয়া, এই দেশের সর্বনাশ হওয়া। একটা নির্বাচিত সরকার খুব দরকার।”
তিনি অন্তর্র্বতী সরকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন, “আমরা তাকে সম্মান করি, শ্রদ্ধা করি। তিনি অতি দ্রæত আর কোনো কালবিলম্ব না করে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণের ব্যবস্থা করবেন। দেশে একটি নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করবেন।”
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঠাকুরগাঁও জেলা ইউনিট কমান্ড মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর করিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নাঈম জাহাঙ্গীর এবং সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক আহম্মদ খান।