জাতির সংবাদ ডটকম।।
দারিদ্র, ক্ষুধা ও অসমতা মুক্ত সমাজ জাতিসংঘের স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজির প্রধান উদ্দেশ্য। যার মূলনীতি হলো; উন্নয়নে কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবেনা। প্রধান কৌশল হলো প্রাতিষ্ঠান ও ব্যাবস্থাগত রুপান্তরের মাধ্যমে স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ। জাতিসংঘের উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০ অর্জনে বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ এবং এসডিজি অর্জনে জাতীয় লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণাসহ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় সমন্বিত কর্মসূচী বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।
এসডিজি’র মধ্যবর্তী পর্যালোচনায় জাতীয় জনসম্মিলন উপলক্ষে শনিবার সকালে (২ সেপ্টেম্বর ২০২৩), জাতীয় প্রেস ক্লাবে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু কোভিড-১৯, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রভাব এসডিজি অর্জনের ধারাবাহিকতাকে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্থ করেছে। কোভিড–১৯ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আরো দারিদ্র্য এবং বিপন্নতার মুখোমুখি হয়েছে। একই সঙ্গে বাজার নির্ভর বিদ্যমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দূর্বলতাকে অতিমারী প্রকট ভাবে চিহ্নিত করেছে।
ইউক্রেন সংঘাত বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে, যা বাণিজ্য, সরবরাহ শৃঙ্খলা এবং পণ্যের মূল্যকে প্রভাবিত করেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন সত্ত্বেও বর্তমান প্রেক্ষাপটে এমন এক সংকটময় সন্ধিক্ষণে উপনিত হয়েছে যেখানে ক্ষুধা, দারিদ্র, বৈষম্য ও জলবায়ু সংকট এসডিজির অর্জনকে বাধাগ্রস্ত করছে। এবছর জাতিসংঘের উন্নয়ন এজেন্ডা ২০৩০ বাস্তবায়নের মধ্যবর্তী সময় অতিক্রম করছে এবং ১৮-১৯ সেপ্টেম্বর এসডিজি শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হতে যাচ্ছেন বিশ্বনেতৃবৃন্দ। এরকম প্রেক্ষাপটে এসডিজি অর্জনে নতুন কৌশল ও সমন্বিত কর্মপ্রচেষ্টা গ্রহন সহ আন্তর্জাতিক সংহতি জোরদার না করা হলে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনের চ্যলেঞ্জসমূহ মোকাবেলা করা দুঃসাধ্য হবে।
ক্ষুধা, দারিদ্র ও বৈষম্য থেকে মুক্তি:
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সংঘটিত অর্থনৈতিক সংকোচন, বৈশ্বিক সংঘাত, বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত বাংলাদেশে দারিদ্র্য হ্রাসে অর্জিত অগ্রগতিকে উল্লেখযোগ্য ঝুঁকিতে ফেলেছে। যার প্রভাবে গ্রাম পর্যায়ে দারিদ্র্যের হার ১৮.৭% থেকে ২০.৫% এবং শহর এলাকায় ১৪.৭% থেকে ২০.৫% বৃদ্ধি পেয়েছে; যা ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পথে বিরাট বাধা।
বিশ্বজুড়ে দারিদ্র ও ক্ষুধা সমানুপাতিকভাবে বাড়ছে। বিশ্বের জনসংখ্যার ১০ শতাংশের পর্যাপ্ত খাদ্য নেই, যা এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্বব্যাপী জীবিকা ও বাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা ক্ষুধা ও অপুষ্টি বৃদ্ধি করেছে, যার প্রভাব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর সবচেয়ে বেশি। বৈশ্বিক ক্ষুধা সুচক অনুযায়ী ২০২২ সালের বৈশ্বিক ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতা সূচকে ১২১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪। অন্য দিকে চলতি বছরের ক্ষুধা সূচকে মোট ১০০ স্কোরের মধ্যে বাংলাদেশ পেয়েছে ১৯ দশমিক ৬, যা ২০২১ এর তুলোনায় ০.৫ শতাং বেশি। যা এসডিজি-২ (শূন্য ক্ষুধা) এর অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্থ করে।
বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট, বানিজ্য ভারসাম্যহীনতা, নয়া উদারবাদী অর্থনৈতিক নীতি, সম্পদের কেন্দ্রীভুবন ইত্যাদি কারনে বাংলাদেশে বৈষম্য না কমে (এসডিজি-১০) এর অগ্রগতি চরম ভাবে বাধাগ্রস্থ হয়েছে এবং অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান সময়ে অতি ধনী বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশে পৃথিবীতে প্রথম এবং ধনী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির হারে তৃতীয়। সবচেয়ে দ্রুততম গতিতে কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি, প্যারিস স্কুল অব ইকোনমিকসের বৈশ্বিক অসমতা প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর আয় জাতীয় আয়ের ১৬ দশমিক ২ শতাংশ, সেখানে নিচের সারির ৫০ শতাংশ মানুষের আয়ের অনুপাত ১৭ দশমিক ১ শতাংশ। সম্পদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, শীর্ষ ১ শতাংশ ধনীর সম্পদের পরিমাণ যেখানে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ, সেখানে নিচের সারির ৫০ শতাংশ মানুষের ক্ষেত্রে তা ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার দুফলোর মতে, সঠিক নীতি করা হলে অসমতা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, আবার ভুল নীতির কারণে অসমতা লাগামছাড়া হয়ে যেতে পারে। নয়া উদারনীতিবাদী নীতির ভিত্তিতে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার বাড়ালেও অসমতা বাড়ছে দ্রুত। গিনি গুণাঙ্ক অনুসারে ২০১০ সালে বৈষ্যম্য ছিলো ০.৪৬, যা ২০২২ সালে ০.৫৭ এ উন্নীত হয়েছে, যা এসডিজি-১০ (বৈষম্য হ্রাস) কে প্রভাবিত করে। তাই দারিদ্র মোকাবেলার নতুন কৌশল, অসমতা কমানোর প্রচেষ্টা, সমাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার সম্প্রসারন জরুরি হয়ে পড়েছে।
সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা:
সবার জন্য নিখরচায় বা স্বল্প মূল্যে গুণগত মানের প্রয়োজন মাফিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হলো সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার মূলনীতি। বাংলাদেশে মোট স্বাস্থ্য খাতে খরচের প্রায় ৬৯ শতাংশ যায় ব্যক্তির পকেট থেকে। এসডিজি-৩ অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে এ ব্যয় ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনতে আমাদের দেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু এ ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার, সঠিক কৌশল ও স্বাস্থ্য খাতে উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাব। গ্রমাঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবায় কাঠামো থাকলেও রয়েছে লোকবল সংকট। অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও পরিবার কল্যাণ অধিদপ্তর আলাদাভাবে কাজ করায় সম্পদের ব্যয় বেড়েছে। এর ফলে সমন্বয়হীনতা একদিকে যেমন রোগীর বিপর্যয়মূলক চিকিৎসা ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে অন্যদিকে ২০৩০ সালের মধ্যে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্য অর্জনেও তা বড় চ্যালেঞ্জ। স্বাস্থ্যখাতে ব্যক্তির খরচ ৬২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৬৯ শতাংশ।
২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ৫ দশমিক ৪ শতাংশ; যা ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন দৃঢ় রাজনৈতিক অঙ্গীকার, সঠিক কৌশল ও স্বাস্থ্য খাতে উপযুক্ত নেতৃত্ব। অন্যদিকে প্রয়োজন ইমার্জেন্সি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি সেবার জন্য সরকারি–বেসরকারি হাসপাতাল থেকে পরিবারপ্রতি বছরে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকায় সেবার বিধান রেখে একটি সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি প্রণয়ন করা। সকলমানুষের জন্য স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে হলে স্বাস্থ্যসেবা খাতে বরাদ্দ ১৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে।
সামাজিক সুরক্ষাঃ
বিপদাপন্ন জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা, দারিদ্র ও অসমতা হ্রাসকরন সহ সমাজে সংহতি ভিত্তিক সম্পদের পুনবন্টন নীতি এসডিজি অর্জনের বাধা অতিক্রমে সহায়তা করবে। সামাজিক সুরক্ষা বাজেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাজেটে এ খাতে মোট বরাদ্দ ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বরাদ্দ মোট বাজেটের ১৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক ৫২ শতাংশ। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছ সামাজিক সুরক্ষার অর্থের মধ্যে পেনশনসহ অন্যান্য অনেক খাতের অর্থ যুক্ত করার হিসাব নিয়ে। বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে প্রকৃত বঞ্চিত বা অসুবিধাগ্রস্ত মানুষের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী হিসাব করার কথা বলেছে আইএমএফ। সামাজিক সুরক্ষার উপকারভোগীদের নিয়েও কথা উঠেছে। ভাতার জন্য দেয়া টাকার পরিমাণ একজন বিপদাপন্ন মানুষের জন্য বর্তমান বাজার মূল্যর সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ তা দেখা দরকার।
দীর্ঘ দিনের জন দাবির প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে সর্বজনীন পেনশন স্কিম। যেখানে ১৮-৫০ বছর বয়সী সরকারি চাকুরীজীবী ব্যতিত সকল মানুষ এ সুবিধার আওতায় আসতে পরবে। যা নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনিয় উদ্যোগ। এটা নিয়ে মানুষের মনে নানা প্রশ্ন থাকলেও স্বচ্ছতার সাথে এ উদ্যোগ সফল ভাবে বাস্তবায়ন হলে সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশে হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাত্তা বেষ্টনি আওতায় বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুঃস্থ মহিলা ভাতা, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। বতর্মান বাজেট ক্রমবর্ধমান বিপদাপন্নতা মোকাবেলাকে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখী করে তুলেছে। যা এসডিজি ১, ও এসডিজি ১০ কে সরাসরি প্রভাবিত করে। তাই প্রান্তিক মানুষের বিপদাপন্নতা দূরীকরণে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং এর আওতা সম্প্রসারণ অত্যন্ত জরুরি।
জলবায়ু পরিবর্তন:
পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উন্নত দেশগুলো সবচেয়ে বেশি দায়ী হলেও এর জন্য বাংলাদেশের মতো সমুদ্র উপকূলবর্তী উন্নয়নশীল দেশগুলোকে চরম মূল্য দিতে হচ্ছে। বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে বাংলাদেশের অবদান মাত্র ০.১৭% শতাংশ। বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক ২০২২ অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান এখনো সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ৭ টি দেশের মধ্যে (জার্মানওয়াচ, ২০২২) অথচ এর জন্য বাংলাদেশের দায় অতি সামান্য। এখনো পর্যন্ত ভুক্তভোগী দেশসমূহকে পরিবেশ ক্ষতিপূরনের দাবী ধনী দেশগুলো মেনে নিচ্ছেনা। জাতিসংঘের লস এন্ড জেমেজ নীতিমালা অনুযায়ী বাংলাদেশের জলবায়ু ক্ষতিপূরন দাবিতে আন্তজাতিক আন্দোলন জোরদার করা দরকার।
জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় অঞ্চল সহ জলবায়ু ঝুকিপূর্ণ অঞ্চলসমূহে মানুষের বিপদাপন্নতা ও দুর্গতিও বেড়ে গিয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানির লবণাক্ততা বাড়ছে, ফলে সুপেয় পানি পাওয়া যাচ্ছে। বিআইডিএসের গবেষণায় উঠে এসেছে, ওইসব অঞ্চল থেকে মানুষ শহরে চলে আসছে, এবং একই সঙ্গে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে শহরেও। জলবায়ু মোকবেলায় রেজলিয়েন্স তৈরিতে সক্ষমতা অর্জনের জন্য কমিউনিটি ভিত্তিক কার্যক্রমে ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন এবং ভুক্তভোগী মানুষের জন্য।
কর সুবিচারঃ
একটি প্রগতিশীল কর ব্যবস্থায়, সর্বনিম্ন আয়ের লোকেরা সাধারণত ছাড় পায় যখন সর্বোচ্চ আয়ের লোকেরা সর্বোচ্চ কর দেয়। করের দায় ব্যক্তি বা সত্তার আয়ের সাথে বৃদ্ধি পায়। এটি অর্থ প্রদানের ক্ষমতার নীতির উপর ভিত্তি করে। কিন্তু আমাদেরর কর ব্যাবস্থায় প্রত্যক্ষ কর ৩০% এর মতো যা আমাদের প্রতিবেশী ভারতে যা ৫০%। একটি প্রগতিশীল কর ব্যবস্থায় সম্পদশালী বেশি আয়ের মানুষ ও কর্পোরেট কর মিলিয়ে ৬৫% বেশি হওয়া দরকার।
জনপরিসেবায় বরাদ্ধ বাড়াতে হলে প্রত্যক্ষ কর বাড়ানো সহ কর ফাঁকি বন্ধ করা দরকার। কর্পোরেটদের দ্বারা বিদেশে মুনাফা স্থানান্তর এবং ব্যক্তি পর্যায়ে কর ফাঁকি প্রবণতা অর্থনীতিকে আরও চাপের মুখে ফেলেছে। যা এসডিজির সার্বিক অগ্রগতিকে চ্যালেঞ্জেরে মুখে ফেলে এবং ক্ষুধা, দারিদ্র ও অসমতা হ্রাসে প্রয়োজনীয় অর্থ যোগানের জন্য বাধা হয়ে দাড়ায়। তাই কর সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে হলে একটি প্রগতিশীল কর ব্যাবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
এসডিজি অর্জনে জরুরি করণীয়
- প্রান্তিক মানুষের বিপদাপন্নতা দূরীকরণে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ এবং এর আওতা সম্প্রসারণ করা সহ সামাজিক সুরক্ষা শক্তিশালী করণ।
- সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক সুরক্ষা সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সবচেয়ে অসুবিধাগ্রস্থ সম্প্রদায়ের জন্য জরুরি খাদ্য সরবরাহ সহ সেবাসামগ্রীর বরাদ্ধ বাড়ানো।
- আদিবাসী মানুষ সহ পাহাড়ের সকল প্রান্তিক মানুষের জন্য কমিউনিটি পর্যায়ে সুপেয় পানিতে অভিগম্যতা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানো।
- অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং স্থয়িত্বশীল আয়ের উত্স তৈরির জন্য দক্ষতা বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য প্রণোদনামূলক কার্জকর কর্মসূচি বাড়াতে হবে।
- জলবায়ু অভিঘাত মোকাবেলায় কমিউনিটি ভিত্তিক সক্ষমতা তৈরি করা বিশেষভাবে উপকূল এবং চরাঞ্চলের প্রান্তিক ক্ষুদ্র কৃষীজিবি পরিবারের জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষির বিকাশে বিশেষ কর্মসুচি।
- বর্তমান সময়ে আয় ও সম্পদ বৈষম্য কমানো জরুরি। প্রয়োজনীয় সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহন সহ একটা ন্যায্য কর ব্যাবস্থা যা মানুষের জন্য কাজ করবে এবং যা এসডিজি অর্জনে কার্যকর ভুমিকা রাখবে।
- সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নে শিক্ষা খাতে জাতীয় আয়ের ৬% বরাদ্ধ নিশ্চিত করা সহ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা বাস্তবায়নের জন্য একটি সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি প্রণয়ন করা এবং জাতীয় আয়ের কমপক্ষে ৩% বাজেট বরাদ্ধ নিশ্চত করা।
- কর্পোরেট কর সহ প্রত্যক্ষ কর আহরন ৬৫% এ উন্নিতকরন এবং স্বল্প আয়ের মানুষের উপর অপ্রত্বক্ষ করের চাপ কমানো সহ একটি প্রগতিশীল কর ব্যবস্থা চালু করা। কর পরিশোধের বিপরীতে নাগরিকরা কী পরিষেবা পাচ্ছে সে বিষয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রক্রিয়া চালু করা।
- মহামারী বিষয়ে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে একটা ন্যায়সঙ্গত বৈশ্বিক চুক্তি সম্পাদন, যা ভবিষ্যতে এরকম পরিস্থিতি মোকাবেলায় সহায়ক হয়।
- পারষ্পরিক সহযোগিতামূলক অংশিদারিত্ব সৃষ্টি সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, সরকার, এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আন্তসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং পারষ্পরিক সহযোগিতা জোরদার করা।
- জলবায়ু ন্যায্যতা, বৈদেশিক দেনা বাতিল এবং বিশ্বব্যাপী কর সুবিচারের পাশাপশি সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা (UHC) এর জন্য অধিপরামর্শ করা।
- বৈশ্বিক অধিপরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দেশের কণ্ঠস্বরকে জোরদার করে, আরও ন্যায়সঙ্গত এবং স্থায়িত্বশীল বিশ্ব ব্যবস্থা বিনির্মাণে বৈশ্বিক নীতিগুলিকে প্রভাবিত করে, যেমন মহামারি অতিমারীর টিকা সহ চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য TRIPS ওয়েভারের পক্ষে সমর্থন আদায়।
- স্থানীয় অধিপরামর্শ সম্পদের ন্যায়সঙ্গত বরাদ্দের ক্ষেত্রে সহযোগিতা স্বাস্থ্য সেবা ও শিক্ষার মতো মৌলিক চাহিদাগুলোতে প্রান্তিক মানুষের অভিগম্যতার নিশ্চিয়তা প্রদান করে। এটা স্থানীয় কমিউনিটিগুলোকে ক্ষমতায়িত করে এবং প্রতিষ্ঠানগুলিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য জবাবদিহি করে।