কত নাগরিকদের মৃত্যু হলে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন হবে দ্রুত সংশোধনের দাবিতে রিকশা র‌্যালি

শুক্রবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৫

জাতির সংবাদ ডটকম।। 

১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, তামাক নিয়ন্ত্রণ সংশোধনের পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হলেও, বিগত এক বছরের আইনটি পর্যালোচনা শেষ হয়নি। অথচ এই সময়ের মধ্যে তামাকজনিত রোগে মারা গেছে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ এবং পঙ্গুত্ব বরণ করেছে ৪ লাখেরও বেশি । তামাকের ব্যবহার হ্রাসে তৈরি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি পূণরায় সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সিগারেট কোম্পানিগুলো এই ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন পূণরায় সংশোধন করা হলে রাজস্ব হ্রাস হবে, বহুলোক কর্মসংস্থান হারাবে বলে মিথ্যা তথ্য প্রচার করছে। অথচ আইন সংশোধন করার পরও ২০ বছরে সিগারেট খাতে রাজস্ব আয় বেড়েছে ১৪ গুণ। এ আইনের ফলে ব্যাপকভাবে পরোক্ষ ধূমপানে কমে গেছে। যাতে উপকৃত হয়েছে নারী ও শিশু। শুধু তাই নয় সিগারেট কোম্পানিগুলো আইনের দূর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে দেশে নিকোটিন পাউচ অনুমোদনের চেষ্টা করছে, যা দেশের তরুণ সমাজকে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা। র‌্যালি হতে তামাক কোম্পানিগুলোর মিথ্যা প্রচারণায় বিভ্রান্ত না হয়ে, মানুষের জীবন বাঁচাতে দ্রুত আইন সংশোধনের আহবান জানানো হয়।

আজ ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের উদ্যোগে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধনের দাবিতে রিকশা র‌্যালির আয়োজন করা হয়। প্রত্যাশা মাদক বিরোধী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ভারপ্রাপ্ত সমন্বয়কারী হেলাল আহমেদের সভাপতিত্বে র‌্যালিতে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ শাগুফতা সুলতানা, ডাস্ এর টিম লীড আমিনুল ইসলাম বকুল, পরিবেশ কর্মী আবু নাসের অনীক, তামাক নিয়ন্ত্রণকর্মী আবু রায়হান এবং বিভুতি ভূষণ। অবস্থান কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন প্রায় শতাধিক রিকশাচালক।

২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন এবং ২০১৩ সালে আইন সংশোধনের পর পাবলিক প্লেস বিশেষ করে হোটেল রেষ্টুরেন্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, বৃদ্ধি পেয়েছে এসি পাবলিক পরিবহনও। সুতরাং আইন সংশোধনের প্রেক্ষিতে রেস্টুরেন্টের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং কর্মসংস্থান হারানোর তথ্য প্রচার করা হলেও তা নিতান্তই অবান্তর। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর ২০২১ সালের ‘হোটেল ও রেস্টুরেন্ট জরিপ’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১০ সালের তুলনায় ২০১১ সালে এই খাতের সংখ্যা ৫৮ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে এই খাতে কর্মসংস্থান দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। বিবিএস-এর প্রতিবেদন অনুসারে, গত ১১ বছরে এই খাতে প্রায় ১১ লাখ ৬৮ হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়ায় আগামী প্রজন্মকে তামাক গ্রহণে নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে সিগারেটের সকল ধরণের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১৯৯৯ সাল থেকে ২০০৫ পর্যন্ত সিগারেটের বিজ্ঞাপন ছিল বাংলাদেশের গণমাধ্যমের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। সরকার ২০০৫ সালে সিগারেটের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করে, কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে অন্যান্য নানা ধরণের বিজ্ঞাপন গণমাধ্যম প্রচার করছে। দেশের অন্যতম খ্যাতিসম্পন্ন বেসরকারি আর্কাইভস সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রায়ান আর্কাইভস তাদের জরিপের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালে মোট বিজ্ঞাপনের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৩৮ হাজার ৫৩৪টি। সেখানে মোট ৪৭ লাখ ৬৭ হাজার ইঞ্চি বিজ্ঞাপন ছাপা হয়। বিজ্ঞাপনের রেট অনুযায়ী যার বাজারমূল্য ২ হাজার ৪৯৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। একই বছর দেশের ৩৬টি টেলিভিশন চ্যানেলের ওপর জরিপ চালিয়ে রায়ান আর্কাইভস মোট ৮৬৪ জন বিজ্ঞাপনদাতাকে শনাক্ত করে। টিভি চ্যানেলগুলোতে এ বিজ্ঞাপনদাতারা সব মিলিয়ে বিজ্ঞাপন দেন ১ কোটি ৬ লাখ ৯১ হাজারটি। এর বাজারমূল্য ৫ হাজার ১৬৮ কোটি ৪৪ লাখ টাকা।সব মিলিয়ে প্রিন্ট ও টিভিতে দেয়া বিজ্ঞাপনের বাজারমূল্য প্রায় ৭ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। দেখা যাচ্ছে, আইন সংশোধন করার পরও বিজ্ঞাপন থেকে প্রাপ্ত আয় কমে নাই বরং বেড়েছে।

আইন সংশোধনি খসড়ায় স্থানীয় সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন গাইডলাইনে স্কুল, হাসপাতাল, খেলাধুলার স্থানের কাছে তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অনেক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই তা বাস্তবায়ন করেছে। তামাক ব্যবহারকারীদের সচেতন করার লক্ষ্যে প্যাকেটের গায়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সর্তকবানী বৃদ্ধি করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৫০% স্বাস্থ্য সর্তকবাণী রয়েছে। যা ৯০% করার প্রস্তাব করা হয়েছে। খুচরা শলাকায় অতিরিক্ত দামে সিগারেট বিক্রয় করায় প্রতিবছর সরকার ৩ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এক্ষেত্রে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়ায় একক শলাকার সিগারেট বিক্রয় বন্ধে

 

প্যাকেট ছাড়া বিক্রয় বন্ধ করা প্রস্তাব করা হয়েছে। তরুণ সমাজে ই-সিগারেটে আসক্তি মহামারী হিসেবে বেড়ে যাবার আশঙ্কায় ই- সিগারেট নিষিদ্ধ করা হয়েছে । ইতিমধ্যে সরকার প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ই- সিগারেট আমদানি নিষিদ্ধ করেছে।

র‌্যালিতে বক্তারা বলেন, ২০১৯ সালে প্রকাশিত ‘ইকোনমিক কস্ট অব টোব্যাকো ইউজ ইন বাংলাদেশ: আ হেলথ কস্ট অ্যাপ্রোচ’ শীর্ষক গবেষণা ফলাফলে দেখা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় ও উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। অধূমপায়ীদের রক্ষায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে জনসমাগমস্থল ও গণপরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ বিলুপ্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়নি । ফলে তামাক কোম্পানিগুলো এ

কার্যক্রমের অজুহাতে নীতিপ্রণেতাদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সার্বিক তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে। কাজেই এফসিটিসির আলোকে বিদ্যমান আইনটি সংশোধন করে তামাক কোম্পানির ‘করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা’ বা সিএসআর কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে ।

বক্তারা আইন শক্তিশালীকরণের মাধ্যমেই বহুজাতিক তামাক কোম্পানির অপকৌশল প্রতিহত করে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও অসংক্রামক রোগজনিত মৃত্যু কমিয়ে এনে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মতামত তুলে ধরেন। অবস্থান কর্মসূচি থেকে তারা আগামী প্রজন্মকে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা এবং তামাকজনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবিলায় করার জন্য বিদ্যমান এই আইনের একটি যুগোপযোগী ও দ্রুত সংশোধন জরুরি বলে মনে করেন।