ভালো হলো ভালোবাসা।যাকে ভালোবাসি তার মন্দ আমরা চাই না। সুতরাং ভালো, মন্দের তালিকা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হলো ভালোবাসার পরিধি ও প্রগাঢ়তা।
মানুষ মন্দ করে প্রেমের অভাবে। ভালো করে প্রেমের ভাবে। জগতের সমস্ত ভালো উৎপন্ন হয়েছে প্রেম থেকে।
জগতের সমস্ত মন্দ উৎপন্ন হয়েছে প্রেমের অভাব থেকে। প্রেমের স্পর্শে মন্দও ভালো হয়ে যায়।
প্রেমহীনতায় ভালোও মন্দ ফল প্রদান করে।
স্বর্গ নরকের পার্থক্য কি?
স্বর্গ প্রেমে পরিপূর্ণ। নরক ঘৃণায় পরিপূর্ণ।
“মরণে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভুবন”- স্বর্গযাত্রা।
“মরণে কাঁদিবে তুমি, হাসিবে ভুবন”- নরকযাত্রা।
যে জীবনে প্রেমের স্বাদ পেলো না, মরণের পরও সে প্রেমের স্বাদ পাবে না।
যার ইহকাল কেটেছে হিংসায়, তার পরকালও কাটবে হিংসায়। প্রেম করা যায়। কম-বেশি সকলেই প্রেম করে। কিন্তু মধুচন্দ্রিমার পর প্রেম থাকে না।
প্রেমে পড়া সহজ- প্রেমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা কঠিন। কারণ প্রেমে চোখ খুলে যায়- দেখা যায় প্রেমাস্পদের ভিতর-বাহির। যতই দেখে ততই খুঁত বের হয়। আকাশের প্রেমিকা তখন হয়ে উঠে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর- রক্ত মাংসের মানুষ। স্বপ্ন ভেঙে যায়। প্রেম কমতে থাকে- ঘৃণা বাড়তে থাকে। খুব কম সম্পর্কই আছে যেখানে একত্রবাসের সঙ্গে প্রেম বাড়ে। বাসনা যাদেরকে একত্রিত করে- বাসনাই তাদের মধ্যে দূরত্ব তৈরী করে।
প্রেম যদি অহংমুক্ত না হয়, তবে তা হৃদয়কে আলোকিত করতে পারে না। হৃদয়ে যদি আলো না থাকে তবে জীবন ভরে যায় ধোঁয়ায়।
‘তুমি ভালোবাসো না, তাই আমিও ভালোবাসি না’, ‘তুমি আমাকে যতটুকু ভালোবাসো, আমিও তোমাকে ততটুকু ভালোবাসি’, আমি তোমার জন্য কতকিছু করেছি- তুমি আমার জন্য কি করেছ?- এইসব অহং-এর উক্তি।
প্রকৃতই যে ভালোবাসে সে প্রেমাস্পদের খুঁত ধরে না। খুঁত থাকলেও ঢেকে রাখে। প্রেমিক জুটি বসবাস করে একজন অন্যজনের পোশাক হয়ে।
প্রেমের মধ্যে যদি তুলনা মিশে যায়, তবে তা হারিয়ে ফেলে হৃদয়কে পবিত্র করার সামর্থ্য। কাদা মিশ্রিত পানি দিয়ে স্নান করা যায় না।
তুলনা, স্বাধীনতা হরণ, ঈর্ষা, সন্দেহ, অবিশ্বাস ইত্যাদি প্রেমের অমৃতকে গরলে পরিণত করে।
যাদের হৃদয়ে বিশ্বাস ও শ্রদ্ধা আছে কেবল তারাই প্রেমের অমৃত পান করতে পারে।
প্রেমের যত্ন করতে হয়। অর্থের জন্য নয়, খ্যাতির জন্য নয়, স্বীকৃতির জন্য নয়- শুধু ভালো লাগার জন্য যে যত্ন, তা-ই প্রেমের যত্ন। অনেকটা ফুল গাছের যত্নের মতো।
যদি প্রেমাস্পদ কিছু করে, তবে প্রেমিক তাঁর কীর্তিকে অনেক বড় করে দেখে এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। যদি নিজে অনেক বড় ত্যাগও করে, তবে তা নিছক দায়িত্ব পালন হিসাবে দেখে।
ফলস্বপরূপ, প্রেমিকের জীবনে উদ্বোধন ঘটে মনুষ্যত্বের।
তাকে আর ভালো-মন্দ খুঁজতে হয় না শাস্ত্রের পাতায়। বরং, প্রেম থেকে সৃষ্টি হয় নতুন শাস্ত্র।
লেখক পরিচিতি :
ডা. জসিম উদ্দীন মাহমুদ তালুকদার, সংগঠক, কবি ও সাহিত্যিক।