কেউই চান না ই-কমার্স এর জন্য নতুন কোনো আইন

মঙ্গলবার, ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৩

জাতির সংবাদ ডটকম।। 

কেবল ই-কমার্স ব্যবসায়ীরাই নয়, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবি, প্রযুক্তি পেশাজিবী, নারী ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা কেউই চান না ই-কমার্স এর জন্য নতুন কোনো আইন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আইনের যে খসড়াটি করা হয়েছে তা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাধা সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন তারা। পুরোনো আইন সংশোধন এবং ভোক্তা অধিকার আইন ও প্রতিযোগিতা আইনের ব্যবহারের মাধ্যমেই এই খাতে শৃঙ্খলা আনয়ন ও বিকাশ সম্ভব বলে মনে করেন আইন বিশেষজ্ঞরা। অধিকাংশই মনে করেন এটা সংবিধান ও সাংবিধানিক অধিকারের সঙ্গে সাঙ্ঘর্ষিক।

ই-কমার্স অ্যাসোয়েশন অব বাংলাদেশের আয়োজনে রবিবার এফবিসিসিআই হলে অনুষ্ঠিত খসড়া আইন নিয়ে অংশীজনদের সভায় এমন অভিমত ব্যক্ত করেন সবাই। সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআই সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন,  প্রতিবেশী বা উন্নত দেশগুলোতে যেভাবে ই-কমার্স ব্যবসা চলছে বাংলাদেশেও সেভাবে ব্যবসা করতে দেয়া উচিত। কিন্তু অংশীজনদের ছাড়াই এই আইনের খসড়া করা হয়েছে। আইন তৈরিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে কোনো টেকনিক্যাল কেউ নেই। আর আইন করলে আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। আপনারা চাইলে আমরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও মুখ্য সচিবকে চিঠি দিবো। আমরা ব্যবসায়ীরা কমপ্লায়েন্স ব্যবসা করতে চাই। তবে হাত-পা বেঁধে নয়।

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ব্যারিস্টার তানজিম উল আলম বলেন, সমস্যা হলেই সরকারের পক্ষ থেকে নতুন একটি আইন করা হয়। এটা দয়িত্ব এড়িয়ে চলা। আইন কখনো গন্ডগোল মেটাতে পারে না যদি তা বাস্তবায়নযোগ্য না হয়। এই আইনের দরকার নেই। কেননা এর সবকিছুই বিদ্যমান আইনে আছে। এটি ব্যবসায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। ডিজিটাল কমার্স করলে তিন বছরের জেল। কিন্তু মুদি দোকানে করলে কোনো শাস্তি নেই। এটা হয় না। এই আইন একটি অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তার চাকরি দেয়ার বন্দোবস্ত। আমরা আদৌ চাই না।

 

ই-ক্যাব সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওয়াহেদ তমালের সঞ্চালনায় সভার শুরুতেই একটি উপস্থাপনা পেশ করেন ই-ক্যাব সহ-সভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপন ও পরিচালক আম্বারিন রেজা। উপস্থাপনায় জানানো হয়, দেশের মোট খুচরা বিক্রয়ের ১-২ শতাংশই আসে ই-কমার্স থেকে। প্রস্তাবিত ডিজিটাল বাণিজ্য (কমার্স) আইন ২০২৩ নিয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে তারা আরো জানানো, বর্তমানে ১৬টি আইনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ই-কমার্সের বিস্তৃতি। এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে ২১টি কর্তৃপক্ষ। এমন আইন আর কর্তৃপক্ষের বেড়াজাল এড়িয়ে ই-কমার্স খাতকে সুরক্ষায় নেয়া হয় ৫টি বিকল্প উদ্যোগ। ভারতীয় আইনসহ যুক্তরাষ্ট্রের আইনের সঙ্গে খসড়া আইনের তুলনা করারা পাশাপাশি খসড়া আইনটি সংবিধানের অধিকার লঙ্ঘন করেছে। এটি বাস্তব সম্মত নয়।

আইনের খসড়া নিয়ে আলোচনায় ই-ক্যাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আব্দুল হক অনু, প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসের, চালডাল ডিরেক্টর ইশরাত জাহান, রবি আজিয়াটার প্রতিনিধি সাঈদ আহমেদ, আইএক্সপ্রেস তাজুল ইসলাম, ই-ক্যাব অর্থ সম্পাদকব আসিফ আহনাফ, দারাজ সিওও এবং ই-ক্যাব পরিচালক খন্দকার তাসফিন আলম, ক্যাব সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য কাজী আব্দুল মান্নান, আইনজীবী মাহফুজুর রহমান মিলন, ই-ক্যাব প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইকবাল মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

 

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্যে বিক্রয় ডটকম ঈশিতা শারমীন বলেন, ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য চ্যালেঞ্জের। ফেসবুকও একটি মার্কেট প্লেস। তারওপর এই আইন কীভাবে কার্যকর হবে? একটি আইনের ছাতার নিচে সবাইকে আনা হোক।

 

বিকাশ সিসিও আলী আহম্মেদ বলেন, ফেসবুক-কে কেন্দ্র করে অনেকেই মৌসুমী ব্যবসা করে। কিন্তু নতুন খসড়া অনুযায়ী, ডিবিআইডি নেয়ার বিধানের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসাই গড়ে উঠবে না। পেমেন্ট গ্রহণের ক্ষেত্রেও একই ধরনের সমস্যা হবে।

 

বিআইজেএফ সভাপতি নাজনীন নাহার বলেন, অতিমারিতে ই-কামার্সের অবদান বেশি। এর ৫১ শতাংশই নারী। আইনটি যে হারে খরচ বাড়াবে তাতে পুরো ব্যবসাই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুব্রত বড়ুয়া বলেন, আলদা কর্তৃপক্ষ না করে প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিকার আইনই যথেষ্ট। আইনটি পণ্য কেন্দ্রিক হলেও সেবা উপেক্ষিত। ওয়্যার হাউস, কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট বাস্তব সম্মত নয়।

 

নারী উদ্যোক্তা ও সহজ ডটকম ব্যবস্থাপনা পরিচালক মালিহা কাদির বলেন, আমি মনে করে বিদ্যমান আইনেই দোষীদের শাস্তি দেয়া যায়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ যথেষ্ট। অফলাইন ও অনলাইন ব্যবসায় এক হলেও ডিজিটাল সেবার জন্য কিছু উদ্যোগ ভালো লেগেছে। আলাদা করে দরকার নেই।

 

হাইব্রিড মডেলে অনলাইনে এই সভায় যুক্ত ছিলেন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা সোনিয়া বশির কবির, আইএসপিএবি সভাপতি ইমদাদুল হক, বাক্কো সভাপতি ওয়াহিদ শরীফ,বেটার স্টোরিজের প্রতিষ্ঠাতা মিনহাজ আনোয়ার প্রমুখ।

 

সভাপতির বক্তব্যে ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, চুরি মানেই চুরি। এটা অনলাইন বা অফলাইনে আলাদা হওয়া দরকার নেই। অংশীজনদের মত নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আমরা এই আইন চাই না। ই-কমার্স সেল থাকার পর নতুন করে কর্তৃপক্ষ গঠনের কোনো দরকার নেই।