কোরবানীর পশু পালনে নারীদের ভূমিকা ও বিক্রয় অধিকার প্রসংগে

বৃহস্পতিবার, জুন ৬, ২০২৪

 

    ।। সৈয়দা রাশিদা বারী ।।

রমরমা ব্যবসা হয় সাধারণত দেশের ৬৪ জেলার সবগুলো পশুহাটে। দেশের অর্থ খাতের উন্নয়নে অন্তত কুরবানীর সময়ে পুরুষের পাশে নারীরও একটা ভূমিকা থাকতে পারে। আর নিশ্চয়ই সেটা থাকলে মন্দ হয় না। কয়েকটি গরুর হাটের নাম যেমন গাবতলী গরুর হাট, ঢাকা জেলা, বাথলী গরুর হাট, মানিকগঞ্জ জেলা, আলাউদ্দিন নগর গরুর হাট, কুমারখালী থানা, কুষ্টিয়া জেলা, বানিয়াপাড়া গরুর হাট,  ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা, কুষ্টিয়া জেলা।

 

তদন্তে দেখা গেছে যে,  ১০৬ বছর বয়সী পশু হাটেরও হদিস আছে। কিš‘ কোন হাটের কোথাও নারীর কোন স্পেইস নেই। আমি এখন সেই রাজধানী ঢাকার সবচেয়ে বড় এবং একমাত্র ¯’ায়ী পশুর হাটের সামান্য বিবরণ দি”িছ। এই হাটের প্রতিষ্ঠাতা এবং উদ্বোধক জমিদারের নায়েব বিদ্যা অনুরাগী ও দানশীল ব্যক্তিত্ব মুন্সি লাল মিয়া। তিনি ১৯১৭ সালে এখানে প্রথম পশুর হাট বসিয়ে ছিলেন। সেই সময়ে হিন্দুদের প্রভাব বেশি থাকায় গো হত্যা নিষেধ ছিলো। আমাদের কুষ্টিয়ার বিখ্যাত উপন্যাসিক বিষাদ সিন্ধুর লেখক মীর মোশাররফ হোসেন তার গো জীবন রচনায় বুঝতে পারা যায় তিনিও গো হত্যার বিরুদ্ধে ছিলেন।

 

হ্যাঁ ১৯৩১ সালে মিরপুর মাজার রোড ৩১.৯০ একর জমি ওয়াকফ করেন লাল মিয়া। ওয়াকফ এর শর্ত ছিল প্রজন্মরা এই জমির আই ইনকাম খেতে পারবে কিš‘ বিক্রি করতে পারবেনা। সুন্দর একটি উদ্যোগ। এই মহান ব্যক্তি  মৃত্যু বরণ করেন ১৯৪১ সালে। তার দানকৃত জমিতে আছে তার মাজার, মসজিদ, ঢাকা মানিকগঞ্জ মহাসড়ক, বাস স্টেশন এবং তার প্রতিষ্ঠিত দুধ মেহের দাতব্য চিকিৎসালয়, এই বৃহৎ পশু হাট ইত্যাদি। তখন এখান থেকে প্রতি পশু বাবদ ৪আনা খাজনা নিয়ে মানুষের সেবায় ওই দাতব্য চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা হতো। হাট বসত সপ্তাহে ১দিন। আর এই হাটের রাজস্ব আয় সরকারিভাবে শুরু হয় স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে। সেই থেকে ইজারাদাররা ইজারা নিয়ে এই হাট পরিচালিত রাখছে। এখানে গরু রাখার ¯’ানে, গরু বাধার বাঁশের আড় বানানো রয়েছে। গরু রাখতে ব্যাপারীদের গরু প্রতি বর্তমান ৮ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়।

 

বলা যায় এই হাটে কোরবানি ছাড়াও গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ সমানে সবসময় বিক্রি হয়। অন্তত প্রতিদিন ৩০-৪০ টি তো অবশ্যই হয়। পশুর মধ্যে গরুর একটা ভালো ব্যবসা এই কুরবানির ঈদকে ঘিরে হয়। তখন অসংখ্য পশু এখানে বিক্রি হতে দেখা যায়।

 

নারী-পুরুষের হাতে পালা পশু ছাড়াও এখানে আসে টাঙ্গাইলের সরকার ক্যাটেল ফার্ম থেকে ইন্ডিয়ান বলদ। তবে ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আমদানি বন্ধ করা রয়েছে। তারপরও মাঝেমধ্যে দুই চারটা চোখে বাধছে।

 

হ্যাঁ বাংলাদেশের সমস্ত পশুর হাটে বর্তমান বাজার আকার ভেদে গরুর বিক্রি ৫৫ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। হাট গুলোতে বর্তমানে নিরাপত্তা ভালো দেওয়া হয়, পুলিশের সার্বিক সহযোগিতা সর্বক্ষণিক থাকে। প্রায় হাটে সেট করা হয় জাল নোট ধরার মানে ভুয়া টাকা সনাক্ত করার মেশিন। এই পশু হাটকে কেন্দ্র করে গরুর খাবার, ডাল, ছোলা, ভুট্টা, গম, ভুষি, খড়, ঘাস ইত্যাদি বিক্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। রমরমা ব্যবসা চলে। এবং মানুষের থাকা খাওয়ার আবাসিক ব্যব¯’া গড়ে উঠেছে। প্রচুর পরিমাণে টিউবওয়েল ও সাপ্লাই পানি উঠাবার ডিপ মেশিনের পানি সরবরাহর সুব্যব¯’া রয়েছে। এগুলো যারা ইজারা নেয়, তারাই পরিচালনা করে। কিš‘ দুঃখজনক যে, সবই পুরুষের জন্য এবং এটা পুরুষ-কেন্দ্রিক, সমস্ত ব্যবসা এখানে পুরুষেরা করছে।

 

সবারই জানা যে, আমাদের দেশ এখন সবকিছুতে বেশ এগিয়ে চলেছে। নারী-পুরুষ  একযোগে কাজ করছে দেশের উন্নয়নে। শুধু এই সেকশন অর্থাৎ কুরবানীর পশু ব্যবসা খাত বাদে। কিš‘ নারীরাই তো পশু খামার গুলোতে পশু লালন পালনে বেশি শ্রম দি”েছন। কেবল এই সেল বাজার বাদে। এখানেই নারী তার লালন পালনকৃত পশু সেল করতে অর্থ স য় উন্নয়নে মার খেয়ে যা”েছন বলে নারী পশুখামারি ব্যাবসিক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানতে পারি। নারী তার পশু পালনের পারিশ্রমিক বুঝে নিতে ব্যর্থ হ”েছন এই বিষয়ে।

 

যখনই সে কোন পুরুষের হাতে তার লালন পালনকৃত পশুটি দি”েছ বিক্রি করার জন্য,  তখনই তার পশু বিক্রির লভ্যাংশর পুরা অর্থ বুঝে নিতে পারছেন না। পিঁপড়ে খেয়ে নি”েছ বলে তারা জানান।

 

দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কুরবানীর পশু পালন এবং সেল বাবদ নারীরাও পুরুষের পাশাপাশি আরও বেশি স্বাবলম্বী হতে পারবেন যদি কর্তৃপক্ষ নারীদের তার লালন পালন করা পশু নিজেদের দায়িত্বে থেকে সেল করার সুযোগ করে দেন।

 

আমি আমার দেশের স¦ার্থে এই বিষয়ে সরকার এর দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। কেন তৃণমূল পর্যায়ের নারীরা এই খাতে সুযোগ পাবেন না? মেয়েরা তো জজ, ব্যারিস্টার, ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ডি সি, মন্ত্রী, এমনকি প্রধানমন্ত্রী হয়ে এই বাংলাদেশই ৪ বারেরবার দেশ শাসন করছেন জননেতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন্।া

 

তাহলে এই বড় রকমের সুযোগ কেন নারীদের দেওয়া হবে না? তারা তো অন্যের হাতে তার আদরের পশুটি বিক্রি করতে দিয়ে দেন। সারা বছর কষ্ট করে, ব্যয় করে অনেক আশা বুকে বেঁধে লালন পালন করছেন। তাদের পশু অন্যের হাতে খাইনা, তখন আঘাত করে। গোসল করাতে পারেনা তখনো পশুর গায়ে আঘাত করে, মারে।  এইজন্য মেয়েরাও অন্তত এই কোরবানির সময়, বছরে একটা সিজন তারা তাদের হাতে পালা পশু নিজে থেকে নিজের হাতে লালন পালন করে সেল করতে চান।

 

তাই তারাও থাকতে পারবেন তাদের পশু নিয়ে, সেভাবেই একটা পরিবেশ বা একটা স্পেইস তারা চান। যেই স্পেসের সবই নারী দ্বারা পরিচালিত হবে। থাকা খাওয়ার আবাসিক হোটেল, খড়, ভুসি বিক্রয় কেন্দ্র দোকান, আরো অন্যান্য এবং গার্ড সিকিউরিটি পুলিশ যাবতীয় সেকশন নারী দ্বারাই চলবে, ঠিক এমনটাই তারা পেতে চান। তারা মনে করেন, কুরবানির পশু আমরা যদি এভাবে বিক্রি করতে পারি, তাহলে তো অনেক নারী ক্রেতাও পাওয়া যাবে। তারাও নারী হতে ভালোভাবে দেখে শুনে বুঝে পছন্দের পশুটি কুরবানীর জন্য নিতে পারবেন।

 

আমি উপলদ্ধি করলাম যে, তাদের এই দাবিটা একেবারে ফেলে দেওয়ার নয়। এটা যুক্তি সংগত, সঠিক এবং মূল্যবান একটি বিষয়, যেটা এড়িয়ে যাওয়া বা অবহেলা করা যাবেনা।

লেখক পরিচিতি: সৈয়দা রাশিদা বারী।সাংবাদিক, কবি ও গীতিকার।