খুলনায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ হরিলুট; নেপথ্যে সংসদ সদস্যের ভাতিজা

বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৩

খুলনা সংসদীয় আসন ৪ এর রূপসা উপজেলায় দীর্ঘদিন ধরে থাকা পরিত্যক্ত ফিশিং বোট নিয়ে হরিলুট চলছে বেশ কিছুদিন। এর সাথে জড়িত খুলনা-৪ আসনে সংসদ সদস্য সালাম মূর্শেদীর চীফ কো অর্ডিনেটর মোঃ নোমান ওসমানী রিচি, ডক মালিক সাজ্জাদ হোসেন রুম্মান এবং সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রূপসা উপজেলায় রূপসা নদীর পারে রহিমনগরে অবস্থিত সিটি ডক। আর এই সিটি ডকে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে থাইল্যান্ডের একটি ফিশিং বোট। মালিক বিহীন দীর্ঘদিন পড়ে থাকা এই বোটটিকে রাতের আধারে কেটে টুকরো টুকরো করে বিক্রি করে যাচ্ছে এই চক্রটি। প্রশাসন রয়েছে নীরব ভুমিকায়। যেন দেখার কেউ নেই।
এর আগে অবশ্য এই ফিশিং বোটটিকে সরকারের হেফাজতে নেওয়ার জন্য সিটি ডকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজ্জাদ হোসেন রুম্মান আগ্রহ প্রকাশ করেছিলো। তিনি বলেন, প্রায় পনেরো বছর আগে একজন লোক আমাদের ডকে রিপেয়ারের কাজ করার জন্য এই ফিশিং বোটটিকে ডকে নিয়ে আসে। ততকালিন সিটি ডকের প্রোপ্রাইটর বাচ্চু মিয়া রুম্মানের বাবা ২০১০ সালে স্ট্রোক করার পর থেকে ডকের দায়িত্ব নেয় তার পুত্র সাজ্জাদ হোসেন রুম্মান।
রুম্মান জানান, থাইল্যান্ডের এই জাহাজটিকে আমাদের ডকে রিপেয়ার এর কাজের জন্য একজন লোক নিয়ে আসে ২০১০ সালের আগে। তখন আমি এর প্রকৃত মালিককে জানতাম না। তবে রিপেয়ারের কথা বলে সে যখন জাহাজ কেটে বিক্রি করার চেষ্টা করে তখন তাকে বাধা দিলে তারা পালিয়ে যায়। এরপর থেকে আমরা প্রকৃত মালিকের সন্ধান করার চেষ্টা করতে থাকি। সম্প্রতি রূপসা থানার ওসিকে জানালে, ওসি সাহেব একজন এস আই কে পাঠান। এস আই কামরুজ্জামান এসে দেখে গেছেন, কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।
এ বিষয়ে রূপসা থানার ওসির নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। এমনকি কোনো পুলিশ পাঠাননি। রুম্মান এখানে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে। তবে যদি তা সরকারি সম্পদ হয়ে থাকে তাহলে পুলিশ তা জব্দ করবে।
জাহাজের বিষয়ে খোজ নিয়ে জানা যায়, থাইল্যান্ডের ফিশিং ট্রলার মাছ ধরতে গভীর সমুদ্রে ভূল করে বাংলাদেশ সীমান্তে ঢুকে পড়লে নৌবাহিনী সেটি জব্দ করে সরকারি হেফাজতে নেয়। তারপর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে নৌ মন্ত্রনালয়ের হেফাজতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় জাহাজটি একজন ব্যবসায়ী ভাড়ায় চালানোর উদ্দেশ্যে খুলনায় নিয়ে আসে। সিটি ডকে রিপিয়ার করার কথা বলে এখান থেকে কেটে বিক্রি করতে চেয়েছিলো। কিন্তু তা করতে না পেরে ফেলে পালিয়ে যায়। তারপর থেকে সিটি ডক কতৃপক্ষ তাদের ডকেই রাখে।
এদিকে দীর্ঘদিন পরও যখন কোনো দাবীদার পাওয়া যাচ্ছেনা তাই জায়গা খালি করা ও ভাড়ার টাকা উঠানোর জন্য নিজ উদ্যোগে জাহাজ কেটে বিক্রি করছে সিটি ডকের মালিক রুম্মান।
রুম্মান নিজেকে নির্দোশ প্রমান করতে স্থানীয় এমপির প্রধান সমন্বয়ক মোঃ নোমান ওসমানী রিচির সহায়তায় যুবলীগের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে জাহাজটিকে কেটে বিক্রি করা হচ্ছে বলে জানান।
এভাবেই থানা প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতাদের সাথে নিয়ে সরকারি জাহাজ কাটার মহোৎসব চলছে রূপসার সিটি ডকে।
এ বিষয়ে নোমান ওসমানী রিচির বক্তব্য নিতে তার মোবাইলে (০১৭১৪….৪২) একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি।