খুলনার পাইকগাছার কপিলমুনির জাফর আউলিয়া মাদ্রাসার অধ্যাপক মোঃ মুজিবুর রহমানকে বিদায় সংবর্ধনা

বুধবার, সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৫

পাইকগাছা প্রতিনিধিঃ

কপিলমুনির জাফর আউলিয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদ্রাসার বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোঃ মুজিবুর রহমানকে বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের ইতি টেনে অবসরে গেছেন তিনি। একজন সফল ও জনপ্রিয় শিক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠানকে ঘিরে মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

গত রবিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক, জমিদাতা পরিবারবর্গ এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা এ বিদায় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। তারা সবাই এককণ্ঠে বলেন—“স্যার, আপনি আমাদের গর্ব। আজীবন আমাদের সম্মানের জায়গায় থাকবেন। আপনার জন্য আমাদের দোয়া ও শুভকামনা নিরন্তর।”

শিক্ষার্থীরা তাদের প্রিয় শিক্ষকের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, মুজিবুর রহমান শুধু একজন শিক্ষকই ছিলেন না, তিনি ছিলেন অভিভাবকের মতো পথপ্রদর্শক। কঠোর পরিশ্রম আর আন্তরিক প্রচেষ্টায় তিনি ছাত্রদের মনের অন্ধকার দূর করেছেন। তাঁর কাছে শিক্ষা মানে কেবল বইয়ের জ্ঞান নয়, বরং সুশিক্ষা, নীতি-নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের চর্চা।

অভিভাবক এবং জমিদাতা পরিবারবর্গ জানান, মুজিবুর রহমানের মতো সৎ, নির্লোভ ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক সমাজে খুব কমই দেখা যায়। তিনি মাদ্রাসার উন্নয়নে যেমন অবদান রেখেছেন, তেমনি শিক্ষার্থীদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। তাঁর বিদায়ে কেবল শিক্ষার্থীরাই নয়, পুরো এলাকাবাসী শোকাহত।

মাদ্রাসার শিক্ষক সহকর্মীরা বলেন, দীর্ঘদিন একসঙ্গে কাজ করার স্মৃতি আজ বিদায়ের দিনে সবার মনে গভীর আবেগ জাগিয়েছে। তাঁর কর্মদক্ষতা, সহকর্মীদের প্রতি আন্তরিকতা এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান মাদ্রাসা পরিবার কখনো ভুলবে না।

অধ্যাপক মোঃ মুজিবুর রহমান আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “আজ আমার জীবনের সবচেয়ে আবেগপূর্ণ দিন। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে অনেক ভালোবাসা, সম্মান ও শ্রদ্ধা পেয়েছি। ছাত্র, সহকর্মী, অভিভাবক এবং এলাকাবাসীর ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় সম্পদ। আমি চলে যাচ্ছি, কিন্তু আমার হৃদয়ে এই প্রতিষ্ঠান ও তোমাদের প্রতি ভালোবাসা অটুট থাকবে।”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই তার এই বক্তব্যে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অনেকেই অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন, এমন একজন গুণী শিক্ষকের বিদায় মেনে নেওয়া কঠিন।

শেষে দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে। সবাই তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করেন এবং অবসরের পরের জীবনে শান্তি ও আনন্দময় সময় কাটুক এই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

এমন একজন শিক্ষক, যিনি শিক্ষা, চরিত্র গঠন ও মানবিকতাকে সমানভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন, তার বিদায় কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তবে তার রেখে যাওয়া শিক্ষার আলো আগামীর প্রজন্মকে পথ দেখাবে—এটাই সবার বিশ্বাস।