আরমান বাদল ।।
রাজধানীর হাজারীবাগে ঢাকা দক্ষিণ সিটির পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য গণকটুলী সিটি কলোনিতে ফ্ল্যাট-রুম বরাদ্দে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সিটি কলোনির রাম মন্দিরের পেছনে নির্মিত ফ্ল্যাট-রুমগুলো কর্মরত ক্ষতিগ্রস্ত পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের নামে বরাদ্দ না দিয়ে অদৃশ্য ইশারায় চিহ্নিত মাদক কারবারি ও মাদক মামলার আসামিদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে তারা কেউই ক্ষতিগ্রস্ত নন। এমন অনেক পরিবার কৌশলে দুটি ফ্ল্যাট বাগিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীদের দাবি, জরুরি ভিত্তিতে ডিএসসিসি’র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সরেজমিন তদন্ত করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া ও ভোগ-দখলকারীদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ নিয়ে সিটি কলোণিতে বেশ কিছুদিন ধরে দুটি গ্রুপের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর পুরান ঢাকার হাজারীবাগের গণকটুলি সিটি কলোনিতে ডিএসসিসিতে কর্মরত পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের প্রতিটি পরিবারের জন্য আবাসন সুবিধা নিশ্চিতে বিভিন্ন ফ্ল্যাট ও রুম বরাদ্দ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ । কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে গণকটুলি সিটি কলোনিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বরাদ্দ যে ফ্ল্যাটগুলো দেওয়া হয়েছে তাতে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি রয়েছে। এসব ঘটনা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন সিটি কলোনির ভুক্তভোগী কয়েকজন বাসিন্দা। ভুক্তভোগী স্বপন প্রামাণিক জানান, গণকটুলি সিটি কলোনির রাম মন্দিরের পেছনে যাদেরকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তারা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না, তাদের কারও ঘর ভাঙ্গা হয়নি। তারা হলেন কলোনির চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক মামলার আসামি। তারা ডিএসসিসি’র সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে একেক ফ্যামিলিতে দুই রুমের ফ্ল্যাট বাগিয়ে নিয়েছে। যাদের ডিএসসিসিতে চাকরি আছে, তাদের ঘর ভাঙা হয়েছে, তারাই মূলত: ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংখ্যা ৭০ থেকে ৮০ জন। তারাই ঘর পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। জানা যায়, গণকটুলি সমাজকল্যাণ যুব সংঘের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ও ধিরেস চন্দ্র দাস তাদের প্রত্যেকের আগের বিল্ডিংয়ের উপর-নিচেও ঘর বা ফ্ল্যাট রয়েছে। অথচ তারা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে নতুনভাবে গড়ে ওঠা ভবনে একেকজন চারটা করে ঘর পেয়েছেন। ডিএসসিসিতে কাজ না করলেও তাদের আত্মীয়-স্বজনের প্রতিটি পরিবারকে থাকার জন্য ভুয়া নামে তিনটা করে দুইটা করে ঘর বরাদ্দ পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ তাদের চাকরি নিয়েও নানা সমস্যা রয়েছে। বহিরাগত ও স্থায়ী বাসিন্দা না হয়েও বনরাজ দাস নতুন করে ফ্ল্যাট বাগিয়ে নিয়েছেন। তিনি আগের পুরনো বিল্ডিংয়ে দুইটা ঘর পেয়েছেন। ওই বিল্ডিংয়ের নিচেও তার একটা ঘর রয়েছে। রাম মন্দিরের পেছনে গড়ে তোলা ভবনেও নিজের নামে দুটি ফ্ল্যাট বাগিয়ে নিয়েছেন।
গৃহহীন ভুক্তভোগী পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা জানান, যারা এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত নীরিহ পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ডিএসসিসিতে কর্মরত ও তাদের ঘর ভাঙায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের জন্য ফ্ল্যাট বা রুম বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হোক। একই সঙ্গে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বা সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে গণকটুলি সমাজ কল্যাণ যুব সংঘের সভাপতি ও সেক্রেটারিসহ অন্যান্য পরিবারের যারা একাধিক ফ্ল্যাট বা ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন, তাদের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে এবং তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ডিএসসিসি প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন গণকটুলি সিটি কলোনির ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী ও কর্মরত পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা।