গৃহকর্মী সাপ্লাই চক্রের টার্গেটে এবার ব্যারিস্টার, টাকা আদায়ে মিথ্যা মামলার অভিযোগ 

রবিবার, আগস্ট ২৪, ২০২৫

 

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

রাজধানীতে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে কথিত কাজের মেয়ে বা গৃহকর্মী সাপ্লাই চক্র। নানা কৌশলে তারা পরিবারের মধ্যে গৃহকর্মী ঢুকিয়ে দিয়ে পরে মিথ্যা নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছে। এবার সেই চক্রের টার্গেট হয়েছেন ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ওমর সোয়েব চৌধুরী। তার বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তবে ব্যারিস্টার ওমর সোয়েবের দাবি, এটি সম্পূর্ণ সাজানো অভিযোগ এবং মূল উদ্দেশ্য আর্থিক ব্ল্যাকমেইল। প্রকৃতপক্ষে একটি দালালচক্র ও অসাধু অভিভাবকদের যোগসাজোসে আমাকে টার্গেট করে মামলা সাজানো হয়েছে। অভিযোগকারীদের মূল্য উদ্দেশ্য ছিল কেবল আর্থিক সুবিধা আদায় করা।

রবিবার (২৪ আগস্ট) ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ওমর সোয়েব চৌধুরীর পক্ষ থেকে দেওয়া এক জবানবন্দিতে আনিত অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করা হয়।

ব্যারিস্টার ওমর সোয়েব বলেন, “কাজের মেয়ের শরীরে আগেই থাকা পুরনো পোড়া দাগ ও আঘাতকে নতুন নির্যাতনের ঘটনা বানিয়ে আমার নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এটি সম্পূর্ণ সাজানো অভিযোগ এবং মূল উদ্দেশ্য আর্থিক ব্ল্যাকমেইল।”

তিনি বলেন, “তিশা বেগম নামের এক গৃহকর্মী ছয় মাস আগে ও সুমাইয়া নামের আরেকজন দুই মাস আগে আমার বাসায় কাজ শুরু করে। মো. রইস নামের এক দালালের মাধ্যমে তারা আমার বাসায় কাজ করতে আসে। সে সময়েই আমরা লক্ষ্য করি যে, তাদের দুজনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে অনেক পুরনো ক্ষতচিহ্ন, আঘাত ও পোড়া দাগ ছিল। তাদের এ অবস্থা দেখে রইসকে জানিয়েছিলাম যে, এই দুইজনকে গৃহকর্মী হিসেবে রাখতে চাই না। সেই সময় দালাল জানিয়েছিল, তিশার বাবা-মা নিয়মিত মারধর করত এবং এলাকায় চুরি করতে গিয়ে গণপিটুনিও খেয়েছে। একইভাবে সুমাইয়ার শরীরেও পুরনো আঘাতের দাগ ছিল, যা আগের কর্মস্থল থেকে হয়েছে। তাদের দুইজনের শরীরের দাগ পুরানো। অভিযুক্তদের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তিশার ডাক্তারি রিপোর্টেও “OLD BURN” উল্লেখ করা আছে, যা সাত মাস আগের দাগকে নির্দেশ করে। তবে রিপোর্টে “৭ মাস আগের” উল্লেখ থাকলেও পরে সেটি কেটে দেওয়া হয়।”

তিনি আরো বলেন, “গত ১৬ আগস্ট তিশার বাবা মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে নিজ হাতে তাদের (তিশা ও সুমাইয়া) নিয়ে যান। সে সময় তিশার বাবাকে স্বেচ্ছায় নগদ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয় এবং তার বোনের বিয়ের উপহার হিসেবে আমার স্ত্রী একটি স্বর্ণের নাকফুল দেই। সেদিন তারা কোনো অভিযোগ তোলা হয়নি। কিন্তু বাড়ি ফিরে তারা ১৭ আগস্ট থেকে আরও টাকা দাবি করা শুরু করে। টাকা না দেওয়াতেই সাজানো ও মিথ্যা মামলা করা হয়। থানায় অভিযোগ করার পর আমাকে তিশার বাবা সরাসরি জানান—“টাকা দিলে অভিযোগ তুলে নেওয়া হবে।” এ বিষয়ে আমার কাছে ভিডিও প্রমাণও রয়েছে। আমার গৃহপরিচারিকা জাহানারা বেগম ও ব্যক্তিগত ড্রাইভার জাহিদ প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য হিসেবে রয়েছেন।”

ব্যারিস্টার সোয়েব অভিযোগ করেন, “পুলিশের আচরণও পক্ষপাতমূলক ছিল। গত ১৮ আগস্ট রাত ৩টার দিকে থানায় হাজির হতে বলা হয় এবং সরাসরি গ্রেপ্তারের হুমকি দেওয়া হয়। অথচ মামলার মূল তথ্য-প্রমাণে অসঙ্গতি রয়েছে। প্রথমে অভিযোগে বলা হয় তিনি একাই নির্যাতন করেছেন, পরে বলা হয় তিনি ও তার স্ত্রী মিলে মারধর করেছেন। সাংবাদিকদের কাছেও ভিন্ন ভিন্ন কথা বলেছে সেই দুই মেয়ে।”

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি আইনজীবী, আমি আইন জানি। যদি সত্যিই নির্যাতন করতাম, তবে কেন তাদের চিকিৎসা না করিয়ে বাবার হাতে তুলে দিতাম?”

সবশেষে ব্যারিস্টার সোয়েব বলেন, “পুরো ঘটনাটি একটি সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ। তারা প্রথমে কাজের মেয়ে সরবরাহ করে, পরে পরিবারের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে সাজানো মামলা দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায়ের চেষ্টা করে। এটি একটি সংঘবদ্ধ দালাল চক্রের কৌশল।”

তিনি আদালত ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেন, “আমার ও আমার পরিবারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো। প্রকৃত অপরাধী এই দালাল চক্রের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

এ প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সোয়েবের স্ত্রী ফাতেমা বেগম সাথী বলেন, “আমার স্বামী কাউকে মারেনি। আমার স্বামী নিজ সন্তানদের সাথেও সময় দিতে পারেন না, অন্যকে মারধরের প্রশ্নই আসে না। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলা দায়ে করা হয়েছে। আমি থানায় গিয়ে এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তিনি আমার কথা শুনেননি। এমনকি অভিযোগকারীদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করার সুযোগও দেননি। তিনি জোরপূর্বক মামলা দায়ের করতে অভিযোগকারীদের সহায়তা করেছেন।”

তিনি আরও বলেন, “আমার স্বামী বা আমরা কাউকে মারিনি, আমাদের ফাঁসানো হচ্ছে। এ ঘটনা সঙ্গে সংঘবদ্ধ দালাল চক্র জড়িত রয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, “মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত জানা যাবে।”

প্রসঙ্গত, গত ১৯ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৪(২)(খ) ধারায় ব্যারিস্টার মুহাম্মদ ওমর সোয়েব চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন তৃশার বাবা জুয়েল মিয়া।