দিলীপ কুমার দাস ময়মনসিংহ।
১৯৬৯’র ২৭ জানুয়ারি ময়মনসিংহের গৌরীপুরে গণঅভ্যুত্থানের মিছিলে তৎকালীন পুলিশের ছুঁড়া গুলিতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন গৌরীপুর সরকারি কলেজের ছাত্র আজিজুল হক হারুন। সেদিন হারুনের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। হারুনের মত্যুতে নির্বাক হয়ে যান মিছিলে অংশগ্রহনকারী তার সহপাঠীরা। এরপর থেকে প্রতি বছর ২৭ জানুয়ারী স্থানীয়ভাবে এদিনটি শহীদ হারুন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৯৬৯ সালের ২৭ জানুয়ারি সারাদেশের ন্যায় স্থানীয় গৌরীপুর মহাবিদ্যালয়, আর. কে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের গোবিন্দ বাড়ীর সামনে আসা মাত্রই তৎকালীন মহকুমা প্রশাসকের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বেপরোয়া লাঠিচার্জ করে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওইদিন গৌরীপুর রেলষ্টেশন এলাকায় জড়ো হয়ে হরতালের ডাক দিয়ে শহরে একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি বর্তমান হারুন পার্ক এলাকায় আসা মাত্রই পুলিশ ও আনসাররা অতর্কিতে টিয়ার গ্যাস এবং গুলি ছুঁড়ে হামলা চালায়। এসময় পুলিশের ছুঁড়া গুলি এসে বিদ্ধ হয় মিছিলে অংশগ্রহনকারী গৌরীপুর মহাবিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের ছাত্র আজিজুল হক হারুনের গলায়। এতে হারুনের রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ। মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফটিয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। এরআগে অনুরূপ ঘটনায় ২০ জানুয়ারি রাজধানীতে শহীদ হন আসাদ ও নবকুমার ইনস্টিটিউটের ৯ম শ্রেনীর শিক্ষার্থী মতিউর রহমান এবং ২৪ জানুয়ারি ময়মনসিংহ শহরে শহীদ হন আলমগীর মনসুর মিন্টু।
শহীদ হারুন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা ইউনিয়নের ছামারুল্লাহ গ্রামের মৃত মিয়া বক্স সরকারের ছেলে। মৃত্যুর পর তাকে নান্দাইল-আঠারবাড়ি সড়কের পাশে সমাহিত করা হয়।
যে স্থানটিতে হারুন গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়েছিলেন সে এলাকায় তার নামে স্থাপন করা হয় শহীদ হারুন পার্ক কিন্তু সেটি আজ বিলীনের পথে। হারুনের মৃত্যুর প্রায় ৪২ বছর পর সাবেক স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম ডাঃ ক্যাপ্টেন (অবঃ) মুজিবুর রহমান ফকিরের উদ্যোগে শহীদ হারুন পার্ক ময়দানে স্থাপন করা হয় শহীদ হারুন স্মৃতিস্তম্ভ। এই স্মৃতিস্তম্ভে প্রতি বছর ২৭ জানুয়ারী হারুনের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে থাকে স্থানীয় লোকজন।