জাতির সংবাদ ডটকম।।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’-এ রূপ নিয়েছে। বুধবার দুপুরের মধ্যে তা উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া মেঘমালার অগ্রভাগ বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রবেশ করেছে। যার প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আজ মঙ্গলবার ও কাল বুধবার উপকূলসহ সারা দেশে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের তিনটি বন্দর এবং কক্সবাজার উপকূলকে ৪ নম্বর সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় হামুনের পূর্বাভাসে এসব কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়টি গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ছয়টায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬৭০ কিলোমিটার পশ্চিম ও দক্ষিণ–পশ্চিম এবং মোংলা ও পায়রা বন্দর থেকে ৫৪০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর ও উত্তর–পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। এটি ঘণ্টায় ১৪ কিলোমিটার গতিতে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও বরিশাল উপকূলের দিকে এগোচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, হামুনের প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকালই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রাজধানীতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হয়েছে দেশের উপকূলীয় এলাকায়ও।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। উপকূলের নৌযান এবং মাছ ধরার নৌকাগুলোকে উপকূলের নিরাপদ স্থানে থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাগরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’-এ পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে বিপুল মেঘমালাও তৈরি হয়েছে। যার অগ্রভাগ বাংলাদেশের উপকূলে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ফলে রাত (গত রাত) থেকে উপকূলসহ সারা দেশে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়তে পারে।
হামুন বাংলাদেশের উপকূল থেকে ৬০০ কিলোমিটারের মতো দূরে সৃষ্টি হয়েছে। এটি দ্রুত (ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার) উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। ফলে এই ঘূর্ণিঝড় তীব্র শক্তি অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছে না।
এই আবহাওয়াবিদ জানান, আগামীকাল দুপুরের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূলে আঘাত হানতে পারে। ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর বৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, হামুনের প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকালই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রাজধানীতে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হয়েছে দেশের উপকূলীয় এলাকায়ও।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, এর আগের শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘সিডর’ ও ‘আইলা’র সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় হামুনের বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। আগের ঘূর্ণিঝড়গুলো বাংলাদেশের উপকূল থেকে গড়ে এক হাজার কিলোমিটার দূরে সৃষ্টি হয়। পাঁচ থেকে সাত দিন ধরে শক্তি অর্জন করতে করতে তা উপকূলের দিকে আসে। ফলে সেগুলোর শক্তি ও বাতাসের গতি ছিল বেশি। তবে হামুন বাংলাদেশের উপকূল থেকে ৬০০ কিলোমিটারের মতো দূরে সৃষ্টি হয়েছে। এটি দ্রুত (ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার) উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে। ফলে এই ঘূর্ণিঝড় তীব্র শক্তি অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাচ্ছে না।
গতিমুখ অনুযায়ী হামুন চট্টগ্রাম ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার মাঝখান দিয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে এটি শেষ পর্যন্ত আঘাত হানবে কি না, তা নিশ্চিত করেননি ভারতের আবহাওয়াবিদেরা।
ঘূর্ণিঝড় হামুনের বিষয়ে পূর্বাভাস দিয়েছে ভারতের আবহাওয়া বিভাগও (আইএমডি)। গতকাল সন্ধ্যায় আইএমডির দেওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, গতকাল রাতের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ উপকূলের দিকে অগ্রসর হতে শুরু করার কথা। গতিমুখ অনুযায়ী হামুন চট্টগ্রাম ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার মাঝখান দিয়ে উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে এটি শেষ পর্যন্ত আঘাত হানবে কি না, তা নিশ্চিত করেননি ভারতের আবহাওয়াবিদেরা।
আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় ‘তেজ’
আরব সাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘তেজ’ ভারতীয় উপকূল থেকে আরও দূরে সরে গিয়ে ইয়েমেন ও ওমান উপকূলের দিকে এগোচ্ছে। আজ তা ওই দুটি দেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে এর প্রভাব বাংলাদেশে খুব বেশি পড়বে না বলে মনে করছেন বাংলাদেশের আবহাওয়াবিদেরা।
কক্সবাজারের টেকনাফের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের বৈরী আবহাওয়ার কারণে সোমবার বেলা তিনটার মধ্যে ফিরে আসার নির্দেশনা দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে এই নির্দেশনার কথা জানিয়ে দ্বীপে মাইকিংক করা হচ্ছে। পাশাপাশি আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে টেকনাফ–সেন্ট মার্টিন পথে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।
পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি সামান্য উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এই নিম্নচাপের প্রভাবে সেন্ট মার্টিনের আবহাওয়া এখন গুমোট হয়ে আছে। সাগর ক্রমেই উত্তাল হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৩ নম্বর সতর্কসংকেত থাকায় মঙ্গলবার থেকে সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজ, স্পিড বোট, কাঠের বোট বা যে কোনো জলযান চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে অবস্থানরত সব পর্যটকদের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ত্যাগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সেন্ট মার্টিনে মাইকিং করে দ্বীপের সবাইকে সতর্ক করা হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, টেকনাফের দমদমিয়া জেটিঘাট থেকে আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কেয়ারি সিন্দাবাদে ১৮০, কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইনে ২৭২ ও এমভি বার আউলিয়ার ৭২৭ জন পর্যটক সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বেড়াতে গেছেন। জাহাজগুলো বেলা ১টার মধ্যে সেন্ট মার্টিন জেটিতে পৌঁছায়। আগের দিন গতকাল রোববার বেড়াতে গিয়ে রাতযাপনের জন্য ছিলেন প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক পর্যটক।
সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, প্রশাসনের নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদ ও বিচ কর্মীদের সমন্বয়ে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে মাইকিং করার পাশাপাশি হোটেল, মোটেল ও রিসোর্টগুলোতে নির্দেশনা পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিকেল আড়াইটার মধ্যে তিনটি জাহাজ পর্যটকদের অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। বেলা তিনটায় জাহাজ তিনটি টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা হবে।
দ্বীপের আবহাওয়া সম্পর্কে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, গতকাল রাত থেকে খুব বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া এখন একধরনের গুমোট হয়ে আছে। সাগর ধীরে ধীরে উত্তাল হচ্ছে।
কেয়ারি সিন্দাবাদের ব্যবস্থাপক (হিসাব) মো. শাহ আলম ও এমভি বার আউলিয়া জাহাজের টেকনাফের ব্যবস্থাপক মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে তিনটি জাহাজ সেন্ট মার্টিন দ্বীপে রয়েছে। বেলা তিনটায় সেগুলো সেন্ট মার্টিনে অবস্থান করা পর্যটকদের নিয়ে ফিরে আসবে। বেলা আড়াইটার আগে সবাইকে জাহাজে অবস্থান নেওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।
ঢাকার মালিবাগ থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক রায়হান হাসান বলেন, ‘পরিবারের নয়জন সদস্য নিয়ে আজ বেড়াতে এসেছিলাম। আগাম হোটেল বুকিং ও জাহাজের টিকিট করা ছিল। তিন রাত থাকার কথা থাকলেও কোনো রাত না কাঠিয়ে ফেরত যেতে হচ্ছে। কিন্তু হোটেলে টাকা তো আর ফেরত পাওয়া গেল না। এটা একধরনের পর্যটক হয়রানি।’