মারুফ সরকার :
ছাত্র-জনতার বিপ্লবে আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে পতিত সরকারের কতিপয় দোসর। এই ব্যাপারে প্রশাসন বিচক্ষণতা ও সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করলেও কুচক্রী মহল থেমে নেই। সম্প্রতি চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়েছেন এস.এম আনোয়ার সাদাত নামে আওয়ামীপন্থী একজন ব্যবসায়ী। তিনি কে.কে অটোমোবাইলস এবং মতি টাওয়ার ও মতি কমপ্লেক্সের স্বত্বাধিকারী।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতার পর যখন চট্টগ্রামে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজমান ঠিক তখনই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালান পতিত সরকারের এই দোসর। গত মঙ্গলবার (৩রা ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে তার মালিকানাধীন চকবাজারস্থ মতি টাওয়ার এবং মতি কমপ্লেক্সের সামনে আর.জি.বি ডিসপ্লে বোর্ডের “মতি টাওয়ার এবং মতি কমপ্লেক্স দোকান মালিক ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে সম্মানিত ক্রেতা সাধারণকে স্বাগতম এবং মার্কেটের বিভিন্ন তলার ব্যবসায়িক পরিচিতি ” সংবলিত লিখা পরিবর্তন করে দেওয়া হয় ” হিন্দুত্ববাদ নিপাত যাক, হয় শরীয়াহ নয় শাহাদাত।” উক্ত মার্কেট ২টির সাধারণ ব্যবসায়ী এবং সচেতন মহলের ধারণা এই স্লোগানের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যখন একত্রিত হয়ে দাঙ্গা সৃষ্টির প্রস্তুতি নেয় তখন সচেতন মহলের চাপের কারণে ঐদিন বিকেলে আর.জি.বি ডিসপ্লে বোর্ড বন্ধ করা হয়।
এই ঘটনার কারণে হিন্দু ধর্মালম্বীদের মধ্যে উক্ত মার্কেটের প্রতি এক ধরণের ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন ব্যবসায়ীরা।
চকবাজার এলাকার কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ বলেন, আনোয়ারের সাথে আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ছিলো। এমন কোন এম.পি-মন্ত্রী নেই যার সাথে তার সুসম্পর্ক ছিলো না। গাড়ী আমদানিতে মন্ত্রীদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তিনি দ্রুত আঙুল ফুলে কলাগাছ হন। জুলাই -আগষ্ট আন্দোলনে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতন ঠেকাতে তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করেন। এখন হিন্দু- মুসলমান দাঙ্গা সৃষ্টিসহ বিভিন্ন ধরনের অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে।
উক্ত মার্কেট ২টির দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দরা বলেন, আমাদের মার্কেটে ৪২৫টি দোকানের প্রায় ১৫০০ জন দোকান মালিক-কর্মচারী মুসলমান -হিন্দু সবার মধ্যে এতদিন সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বজায় ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করে এই ধরনের একটা উস্কানির কারণে আমাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বিনষ্ট হয়। এছাড়া এই উস্কানির কারণে হিন্দু ক্রেতারা আমাদের মার্কেটে কেনাকাটা করতে আসতে চাইবে না। যার প্রভাব সকল ব্যবসায়ীদের উপর পড়বে। এই ব্যাপারে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চকবাজার থানায় অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত এস.এম. আনোয়ার সাদাত বলেন, তিনি চকবাজার এলাকায় থাকেন না। ডিজিটাল এলইডি ডিসপ্লেতে উস্কানীমূলক স্লোগান সম্পর্কে তিনি অবগত নন। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপির সাথে সুসম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন একজন ব্যবসায়ী হিসাবে তার সাথে সবার সুসম্পর্ক থাকা স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দলীয় প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি অস্বীকার করেন।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, এই ঘটনায় একটি অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি তদন্তাধীন।