
নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নাগরিকদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেছেন, এখন পরিস্থিতি ‘অনেক ভালো’।একই সঙ্গে, যেসব শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে আছে, তাদের শহীদ মিনারে কোনো ইন্টারেস্ট নেই। শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ইন্টারেস্ট ভিন্ন ক্ষেত্রে। চাঁদা আদায় বা এটা সেটায় তাদের ইন্টারেস্ট।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে আজ বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শনে এসে তিনি এ মন্তব্য করেন।
শহীদ মিনারে ব্যাপক জমায়েতের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এজন্যই আমি ভিভিআইপি, ভিআইপিদের বিদায়ের পরে ঢাকাবাসীকে আসার অনুরোধ করছি। তার জন্য আমি সময় নির্ধারণ করে দিয়েছি। আমরা মনে করছি ১২টা ৪০ থেকে ১২টা ৪৫, এসময়ের ভেতরে রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টাসসহ অন্যন্য ভিআইপিদের কার্যক্রম শেষ হয়ে যাবে। তারপর সবার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাবে।
এজন্য আমি সবাইকে অনুরোধ করছি এ সময়টা যেন একটু মেনে আসেন। তাহলে উনাদেরও একটু কষ্ট কম হবে। গ্যাদারিংটাও কম হবে। সবদিক দিয়ে আমরা ইভেন্টের নিরাপত্তা দিতে সক্ষম হবো।
এর আগে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপিত হবে এবং শহীদ মিনারে ‘কয়েক স্তরে একই ধরনের’ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে বলেও জানান তিনি।
কমিশনার বলেন, প্রতিবারের ন্যয় এবারও প্রথমে ভিভিআইপি, ভিআইপি এবং তারপর জনসাধারণ পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন। রাত ১২টা ৪০ মিনিটে জনসাধারণের জন্য পলাশী প্রান্ত অর্থাৎ পশ্চিম পাশ থেকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
সবাইকে অনুরোধ করবো, যারা রাতে আসবেন উনারা যেন আমাদের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে আসেন। আমি সবাইকে অনুরোধ করবো সবাই যেন বেদীতে পুষ্পমাল্য দেওয়ার সময় যথাযথ শৃঙ্খলা মেনে চলেন।
তিনি আরও বলেন, কোনো এক সময়ে সাধারণ মানুষের সমাগম এবং প্রবেশে অনেক ভিড় হয়। ভিড়ের মধ্যে যেন কোনো দুর্ঘটনা না হয় আমরা তার জন্য সচেতন থাকবো। পাশাপাশি যারা আসবেন, তাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ উনারা যেন নিজের নিরাপত্তা, মোবাইল, মানিব্যাগের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা তিন-চার স্তরে নেওয়া হয়েছে। আজ সন্ধ্যায় প্রথমে ৫টায়, পরে রাত ৮টা থেকে ডিএমপির অফিসার ফোর্স নিয়োজিত থাকবেন। আগামীকাল বেলা ২টা পর্যন্ত আমাদের ফোর্স এবং অফিসাররা পুরো এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন।
এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা সংক্রান্ত কোনো ‘আশঙ্কা’ দেখছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, মেটাল ডিটেক্টর, আর্চওয়ে চেকিং এবং ম্যানুয়ালি দেহ তল্লাশির ব্যবস্থা থাকবে। কোনো দাহ্য পদার্থ বা বিস্ফোরক নিয়ে কেউ প্রবেশ করতে যেন না পারে সে ব্যবস্থা থাকবে।
রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ল অ্যান্ড অর্ডার ইজ ভেরি গুড, ইনশাল্লাহ। একটা দুইটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড় কোনো ঘটনা বলতে পারবেন না। আমি মনে করি বিচ্ছিন্ন এক-দুইটি, মেইনলি মোবাইল ছিনতাই ব্যতিত কোন অপরাধ নেই। ল এন্ড অর্ডার কোন সমস্যা নেই, এভরিথিং ইজ নরমাল ইনশাল্লাহ।
উত্তরার ঘটনা উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, একটি ঘটনা সিগনিফিক্যান্ট। দুদিন আগে হয়েছে উত্তরাতে, যেটা ফেইসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সে ঘটনার ৫ জনকেই অ্যারেস্ট করা হইছে। আমরা সাকসেসফুলি ওইটা হ্যান্ডেল করছি। আমার অফিসার, ফোর্স সবাই আমরা মনোবল ফিরে পেয়েছি এবং চমৎকারভাবে কাজ করছি।
জামিনে থাকা ‘শীর্ষ’ সন্ত্রাসীদের কারণে একুশে ফেব্রুয়ারির নিরাপত্তায় কোনো শঙ্কা রয়েছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেসব শীর্ষ সন্ত্রাসী জামিনে আছে, তাদের এরিয়া অব ক্রাইম বা এরিয়া অব অপারেশন এক জিনিস। আর শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ ভিন্ন জিনিস। এখানে তাদের কোনো ইন্টারেস্ট নেই।
তিনি বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ইন্টারেস্ট ভিন্ন ক্ষেত্রে। চাঁদা আদায় বা এটা সেটায় তাদের ইন্টারেস্ট। আর তারা যারা বাইরে আছে আমরা জানি, তাদের আমরা ট্রেস করছি, তারা কোণঠাসার হয়ে আছে। একেবারে তারা যে ফ্রি অপারেশন করতে পারছে এমন কিছু নয়।
শহীদ মিনার কেন্দ্রীক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সরওয়ার বলেন, আমাদের চার পাশে প্রায় এক কিলোমিটার রেডি আছে, যাতে সেখানে গাড়ি প্রবেশ করতে না পারে। যেহেতু এখানে ব্যাপক জনসমাগম হবে। সেজন্য মূলত সাতটা স্থানে রোড বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, শাহবাগ, নীলক্ষেত, শহীদুল্লাহ হল, হাইকোর্ট, চানখাঁরপুল, পলাশী ও বকশিবাজার ক্রসিং দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। এখান দিয়ে মানুষ আসতে পারবে না, একটা ছাড়া। শুধু পলাশী থেকে জগন্নাথ হল হয়ে শহীদ মিনারে যেতে পারবেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দোয়েল চত্ত্বর হয়ে বের হতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, নরমালি সন্ধ্যা ৬টায় সড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এবার সেটাকে পিছিয়ে সর্বশেষ ৯টা বা ৮টায় বন্ধ করা হবে। সেটা নির্ভর করে শাহবাগ এলাকায় কোনো আন্দোলন বা অবরোধ থাকবে কি না… সেটা হলে ক্লিয়ার করে আমরা বন্ধ করবো সর্বশেষ ৯ টায়।