জাতির সংবাদ ডটকম।।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সম্রাট হোসাইনকে ডেকে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে। অবৈধ ভাবে মাটি কাটার প্রতিবাদ করায় তাকে এবং তার মামাকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকা ওই যুবক।
রোববার (৭ মে) দুপুরে ক্রাইম রিপোর্টারস ইউনিটির (ক্রাব) কার্যালে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। সম্রাট নবাবগঞ্জ উপজেলার কৈলাইল ইউনিয়নের তেলেঙ্গা গ্রামের মো: মোসলেম মিয়ার ছেলে।
তিনি বলেন, নবাবগঞ্জের ইছামতি নদীতে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে একটি চক্র নদী থেকে অবৈধ ভাবে মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রি করে আসছিলো। এ বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট গত ১১ এপ্রিল লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলে ইউএনও কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে তাকে এবং তার মামাকে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে সম্রাট বলেন, আমি দীর্ঘ দিন যাবৎ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আমার বাবা একজন কৃষক হলেও তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সক্রীয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। আমি ঢাকা মহানগরে সরাসরি রাজনীতির সাথে জড়িত হলেও আমার গ্রামের মানুষের কল্যাণে ও উন্নয়ণে কাজ করে যাচ্ছি। এরই ধারাবাহিকতায় আমার থানাধীন ইছামতি নদীতে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে একটি চক্র নদী থেকে মাটি কেটে অন্যত্র বিক্রি করে আসছে। আমি উক্ত বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট ১১/০৪/২০২৩ ইং তারিখে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।
তিনি আরও বলেন, অভিযোগের পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে ফোন দিয়ে বোরিং ড্রেজিংকৃত জমির আশেপাশে আমাদের জমি আছে কিনা সেই কাগজপত্রাদি নিয়ে তার নিজ অফিসে আসতে বলেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মতিউর রহমান আমার মামা মিঠু মোল্লাকে ফোন করে বলে আপনার নামে একটি অভিযোগ আছে আপনারা যদি দেখা না করেন তাহলে আপনাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিব। আমি ও আমার মামা তার ডাকে সারা দিয়ে গত ১৮/০৪/২০২৩ ইং তারিখে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী নিয়ে তার অফিসে গেলে ১৪৪ দ্বারা জারি করে এলাকাবাসীকে বের করে দিয়ে আমাকে ও আমার মামাকে তার নিজ অফিস কক্ষের দরজা বন্ধ করে আমাদের উপর অমানবিক শারীরিক নির্যাতন করেন। আমার দুই কানে অগণিত চর-থাপ্পর মারে এবং আমাকে নিচে ফেলে বুকের উপর পৈশাচিকভাবে অসংখ্য লাথি মারে। তারপরেও তার অমানবিক নির্যাতন কমেনি। আমার বুকের ডান পাশে দুইটা কামর দেয়, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার অফিসের আনসার দ্বারা আমাকে এবং আমার মামাকে সঁড়ি (রশি) দিয়ে বেঁধে উপজেলা অফিস থেকে থানা পর্যন্ত নিয়ে যায় এবং পুনরায় উপজেলা অফিসে নিয়ে এসে নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীর উপস্থিতিতে আমাকে ও আমার মামাকে আনসার দ্বারা দফায় দফায় লাঠি দিয়ে অসহনীয় মারধর এবং অমানবিক শারীরিক নির্যাতন করে।
‘ এমতাবস্থায় আমার বড় মামা সাবেক যুবলীগ নেতা ও বর্তমান আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ রোকন মোল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসের ভিতরে প্রবেশ করিলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে (মোঃ রোকন মোল্লা) ফ্লোরে বসিয়ে অশালীন ভাষায় গালাগালী করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে উপস্থিত উপজেলা আওমীলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক এবং স্থানীয় আওমীলীগ নিরূপায় হয়ে পরেন যা খুবই জঘন্য ও নিন্দনীয় কাজ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসকে একটা টর্চার সেলে রূপান্তার করে এবং আমাকে ও আমার মামাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে ও চাঁদাবাজির মামলা দিবে এবং পরবর্তীতে যাতে আমি উপরোক্ত ঘটনা নিয়ে কোন ভাবে মুখ না খুলি এই প্রেক্ষিতে জোর পূর্বক জবানবন্দি ও মোচলেকায় স্বাক্ষর নিয়ে কৈলাইল ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান বশির আহমেদ-এর জিম্মায় আমাকে ও আমার মামাকে ছেড়ে দেয়। আমি ও আমার মামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে গেলে উপজেলা কর্তকর্তার পালিত সন্ত্রাসী আব্দুর রাজ্জাক হিরু তার সন্ত্রাস বাহিনী দিয়ে আমাকে ও আমার মামাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পৌঁছানোর আগেই আমাদের প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়ায় আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে চিকিৎসা নিতে ব্যর্থ হই। তাৎক্ষণিক ঢাকায় এসে আমি ও আমার মামা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নেই।’ যোগ করেন সম্রাট।
সম্রাট আরও বলেন, উপরোক্ত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আমার রাজনৈতিক জীবনের ক্ষতি এবং আমাদের সামাজিক ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার জন্য চাঁদাবাজির ও বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগকে পুজি করে আমার ও আমার মামার বিরুদ্ধে ভাড়া করা লোকজন দিয়ে আব্দুর রাজ্জাক হিরু নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনে উল্টো মানববন্ধন করেন। সন্ত্রাসী ঘুদু মিয়া ও তার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক হিরু তাদের পালিত সন্ত্রসীবাহিনী দিয়ে আমার পরিবারকে হুমকি দামকি দিয়ে আসছে। বর্তমানে আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
এ সময়ে সম্রাট বলেন, এলাকার জনস্বার্থে ন্যায় বিচার পাওয়ার লক্ষ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেছিলাম। আশা করেছিলাম আমার গ্রামের প্রায় ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) বিঘা ফসলি জমি উক্ত সন্ত্রাসীদের থেকে রক্ষা পাবে এবং বন্ধ হবে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এমন কর্মকাণ্ডে প্রমাণ করে- তিনি ভূমি দস্যু দুখু মিয়া ও তার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক হিক’র সাথে সরাসরি জড়িত।
তবে মারধর এবং হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএনও মতিউর রহমান বলেন, ‘অনৈতিক দাবিকে প্রশ্রয় না দেওয়ায় মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে সম্রাট। সম্রাট এবং তার মামার বিরুদ্ধে প্রতারনার অভিযোগ রয়েছে।’