আবুল কাসেম জামালপুর জেলা প্রতিনিধিঃ
বিএসআরএম এর আর্থিক সহায়তায় উন্নয়ন সংঘের বাস্তবায়নাধীন সমাজের সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী হিজড়াদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জামালপুরে সরকারি ও বেসরকারি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও অন্যান্য অংশীজনদের সাথে মুক্তসংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সিভিল সার্জন ডাঃ প্রনয় কান্তি দাস।
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারি পরিচালক ডাঃ মাহফুজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাকিয়া সুলতানা, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাজু আহমেদ, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইকরামুন নাহার, জেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম খান, জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভেটেনারি সার্জন ডাঃ ওয়ালিফা জাহান, জামালপুর পৌরসভার কাউন্সিলর সাইদা আক্তার, নাছরিন আক্তার, হোটলে মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছালাম আজাদ, এফপিএবির সমন্বয়কারী মাহিনুর সিদ্দিকা, সিঁড়ি সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি আরিফা ইয়াসমিন ময়ুরী, সহসভাপতি দেলু, বন্ধু সোসাল ওয়েলফেয়ারের ব্যবস্থাপক বেলাল হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উন্নয়ন সংঘের মানবসম্পদ উন্নয়ন পরিচালক জাহাঙ্গীর সেলিম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংস্থার সহকারী পরিচালক কর্মসূচি মুর্শেদ ইকবাল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এসডিএইচসি প্রকল্প ব্যবস্থাপক লিটন সরকার। মঙ্গলবার জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত মুক্তসংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সিভিল সার্জন বলেন সুবিধাবঞ্চিত হিজড়া সদস্যরা কোন অবহেলার স্বীকার হবে না। প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্যরা যাতে বিশেষ গুরুত্ব পায় এর জন্য চিঠি দিয়ে ইউএইচএন্ডএফপিওদের অবহিত করা হবে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জাকিয়া সুলতানা বলেন ওদের কারো যদি এক শতাংশ জমিও আবাদ করার মতো থাকে তাহলে আমরা সবজি চাষের জন্য এবং আরো বেশী জমি থাকলে কৃষি কাজের জন্য সবধরণের সহযোগিতা করা করবো।ডিডি সমাজসেবা বলেন জামালপুরে আমরা ৫০ জন বয়স্ক হিজড়াদেরসহ শিক্ষা ও অন্যান্য ২০০ জনকে সমাজসেবা থেকে মাসিক ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী হিজড়াদের উন্নয়নে আমরা বহুমাত্রিক কার্যক্রম বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করছি।যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে যোগ্যতা অনুযায়ী হিজড়া সদস্যদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য সুবিধা প্রদানের আশ্বাস দেন সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম।কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের পক্ষ থেকে সহকারী পরিচালক বলেন কেউ যদি বিদেশ যেতে চায় আমরা সবধরণের সহায়তা করবো।প্রাণিসম্পদ বিভাগ গবাদি প্রাণি পালনের ক্ষেত্রে হিজড়াদের ভেকসিনেশন, প্রশিক্ষণসহ জনকল্যাণে বরাদ্দ যা আছে তার মধ্যে হিজড়াদের সুবিধাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ মাহফুজুর রহমান বলেন জায়গার সংকুলান সাপেক্ষে হিজড়া সদস্যদের জন্য আলাদা টিকেট কাউন্টার খোলা হবে। এছাড়া চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ বিতরণে হিজড়া বন্ধুদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।জামালপুর পৌরসভার দুইজন কাউন্সিলর হিজরাদের পুনর্বাসন ও উন্নয়নে আমরা আমাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করবো। একই আশ্বাস দেন উপস্থিত এনজিও প্রতিনিধিরা।উল্লেখ, হিজড়াদের চলমান আয়ের উৎস এবং কর্মসংস্থানের জন্য বিদ্যমান সুযোগগুলো চিহ্নিত করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে বলে আয়োজক কর্তৃপক্ষ জানান। এ প্রকল্পের আওতায় তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে চাহিদা নিরুপণ নিশ্চিত করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির কাজ শুরু হয়েছে। তাদের মাঝে ইতিমধ্যে ট্রেডভিত্তিক ২৫ হাজার টাকা করে ৮৯ জনকে বিনাসুদে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। তারা সফলাতার সাথে ব্যবসায়ীক লাভ থেকে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করছেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানের চিন্তা করা হচ্ছে। সরকারি, বেসরকারি ও সেবাদানকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারিভাবে আবাসন সুবিধা, পরিবারে তাদেরকে সংযুক্তি করা, সরকারি ভাতা নিশ্চিত করা, বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করাসহ উন্নয়নের মূলস্রোতধারায় সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে তাদের সম্মান ও মানবাধিকার সুরক্ষার কাজ চলছে বলে উন্নয়ন সংঘ সূত্র জানায়।