
জাতির সংবাদ ডটকম।।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজারো শহীদ রক্ত দিলো, আমরা রাতদিন এক করে আহত নিহতদের চিকিৎসা করার চেষ্টা করলাম। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ কিংবা ক্যাজুয়ালিটি ইউনিট রক্তে ভেসে গেলো। সব মিলিয়ে একটি স্বৈরাচার, ফ্যাসীবাদের হাত থেকে মানুষ মুক্তি পেলো। আজ একবছর পর আমরা কি পেলাম? এমন প্রশ্ন রেখে ডাঃ সানজিদা বলেন, এতো কিছুর পর দেশের মানুষ কিংবা আমরা কি পেলাম? যত পরিবর্তন বা সংস্কারের বক্তব্য আমরা শুনলাম তা আজ কতদূর?
ডাঃ পারশা গণঅভ্যুত্থানকালীন ভয়াবহ পরিস্থিতির স্মৃতিচারণ করে বলেন, এতো নারী আন্দোলনে অংশ নিলো, দেশ গড়ার এই সময় এসে তারা আজ কেন নিবৃত? নারীদের সম্মান ব্যতীত একটি দেশ কল্যানকর রাষ্ট্র আকারে গড়ে উঠতে পারেনা বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আজ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী নারীদের সম্মাননা প্রদান ও সংবর্ধনার জন্য আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারা এমন বক্তব্য রাখেন। যার আয়োজন করে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সকাল ১১ টায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান প্রফেসর ডাঃ মেজর (অবঃ) আব্দুল ওহাব মিনার। নারী বিষয়ক সম্পাদক ফারাহ নাজ সাত্তারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবর্ধনায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, বিশিষ্ট রাষ্ট্র বিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী ও এবি পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের প্রধান, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি। এবি পার্টি নারী বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ সানজিদা আক্তার, ডাঃ পারশা রহমান, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নুর নিরভানা বৃষ্টি, শহীদ নাঈমার মা মিসেস আইনুন নাহার, শহীদ সুমাইয়া আক্তারের মা আসমা বেগম, শহীদ শাহীনুর বেগমের মেয়ে খাদিজা বেগম , শহীদ নাসিমা আক্তারের বোন কোহিনূর বেগম।
গণঅভ্যুত্থানে নারীদের উজ্জ্বল ভুমিকার কথা উল্লেখ করে এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ফ্যাসীবাদ পতন আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা, আমাদের মায়েরা, বোনেরা কারফিউ ভঙ্গ করে মিছিল করেছে। আমি দীর্ঘ সময় ধরে শহীদদের পরিবারের অনুভূতি শুনছিলাম, ডাক্তার বোনদের বক্তব্য শুনছিলাম। এগুলো আমাদের শুনতে হবে, বুঝতে হবে, কিভাবে একটি স্বৈরাচারী ফ্যাসীবাদের পতন হয়েছিলো। দেশের মানুষ মুক্তির নেশায় কতটা ত্যাগ করেছিলো। তিনি গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সকল নারীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানান।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, আমি ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে থেকে পত্র পত্রিকায় লিখেছি, টকশোতে কথা বলেছি। তখনই আমি বলেছিলাম, শেখ হাসিনা একটি ফ্র্যাঙ্কেস্টাইন শাসন চালু করতে চলেছে। এইযে শেখ হাসিনা একটি কর্তৃত্ববাদী শাসক থেকে ফ্যাসীবাদি শাসকে পরিনত হলো এর জন্য আমরাও কম দায়ী নই। এদেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো, তথা কথিত বুদ্ধিজীবীরা সবকিছু দেখেও চুপ ছিলো। এতো হত্যা, গুম, খুনের পর তথাকথিত বন্ধু রাষ্ট্র হাসিনা ও তার দোসরদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়েছে। শুধু আশ্রয় দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি এখন তারা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্টের জন্য সকল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যেই ফ্যাসীবাদিদের পতনে দেশের নারীরা জীবন দিলো, প্রতিরোধ গড়ে তুললো, চিকিৎসা দিলো কিন্তু এখন আমার সেই নারী বোনেদের আর চোখে পরে না। মুক্তিযুদ্ধেও আমরা একই চিত্র দেখেছি, কিছু মানুষ যুদ্ধ না করেও সার্টিফিকেট নিয়েছে, সুযোগ সুবিধা নিয়েছে। এখন এই গণঅভ্যুত্থানের পরও অনেক মানুষ ক্রেডিট নিতে ব্যস্ত, সরকারি নানা সুবিধা আদায়ে সচেষ্ট কিন্তু আন্দোলনের সেই অগ্নিকন্যারা আমাদের মাঝ থেকে নিরবে সরে যাচ্ছে। তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অংশ নেয়া নারীরাও মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী নারীদের মতো হারিয়ে যেতে বসেছে। এটা আমরা হতে দিতে পারিনা, আমরা আশা করি এবি পার্টির মাধ্যমে আগামী দিনে ব্যাপক সংখ্যক নারীরা সংসদে গিয়ে দেশের ও নারী সমাজের উন্নয়নে অগ্রনী ভুমিকা রাখবে।
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর মিনার বলেন, গণঅভ্যুত্থানে আমাদের ডাক্তার সানজিদা, পারশা যে ভুমিকা রেখেছে তা অনন্য। আমরা আন্দোলনের সময় শত শত মানুষকে শুধু হাসপাতালে যেতে দেখেছি, সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার পরিবেশও ছিলোনা। তৎকালীন স্বৈরাচার লাশ গণকবর দিয়েছে, আহত, নিহতের কোন হদিস করা সম্ভব হয়নি। তিনি শহীদদের পরিবারের প্রতি গভীর সম্মান প্রদর্শন করে বলেন, আপনাদের ভার বইবার শক্তি আমাদের নাই। তিনি এবি পার্টিতে নারীদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি বলেন, জুলাই আন্দোলনের এক বছর যেতে না যেতেই আমরা আন্দোলনে অংশ নেয়া নারীদের ভুলে যাচ্ছে। সেই সময়ের অগ্নিকন্যারা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। তাহলে আমরা কি বুঝবো প্রয়োজনেই শুধু নারীদের গুরুত্ব।
সংবর্ধনা শেষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সকল নারীদের সম্মাননা প্রদান করেন ড. দিলারা চৌধুরী সহ উপস্থিত নেতৃবৃন্দ।