জুলাই-৩৬ হল ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি টিনার নেতৃত্বে সাংবাদিকদের উপর হামলা

রবিবার, জুলাই ১৩, ২০২৫

মিজানুর রহমান, ইবি প্রতিনিধি:

 

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া ও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

 

শনিবার (১২ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃসেশন খেলাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা মারামারিতে জড়ান। এসময় ভিডিও করতে গেলে সাংবাদিকদের মোবাইল কেঁড়ে নেন জুলাই-৩৬ হল ডিবেটিং সোসাইটির সভাপতি আফসানা পারভীন টিনা। এরপর তার উস্কানিতেই সাংবাদিকদের উপর দলবদ্ধ হামলা করে বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

 

হামলাকারীরা হলেন, অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নাহিদ হাসান, মিনহাজ, সৌরভ দত্ত, পান্না এবং ২০২২-২৩ বর্ষের সাইফুল ইসলাম, হৃদয়, রাকিব, অজিল, মশিউর রহমান রিয়নসহ ১০-১৫ জন শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে ভুক্তোভোগী সাংবাদিকরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও জাতীয় দৈনিক আমাদের বার্তার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক আরিফ বিল্লাহ এবং একই বিভাগের একই সেশনের শিক্ষার্থী ও জাতীয় দৈনিক আজকালের খবরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রবিউল আলম এবং একই সেশনের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও বার্তা২৪- বিশ্ববিবিদ্যালয় প্রতিনিধি নুরে আলম।

 

ভুক্তভোগী আরিফ বিল্লাহ বলেন, “ফুটবল মাঠে দুই পক্ষের হাতাহাতির ঘটনাটি আমি সংবাদ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে মোবাইলে ভিডিও করতেছিলাম। এ সময় আফসানা পারভীন তিনা আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। ঘটনার কারণ জানতে চাইলে একযোগে ২০-২৫ জন শিক্ষার্থী আমাকে ঘিরে ধরে অকথ্য গালাগালি ও শারীরিকভাবে মারধর করে।”

 

এদিকে নুর আলম তাকে রক্ষা করতে গেলে তাকেও মারধরের শিকার হতে হয়। তিনি বলেন, “আমি ভিডিও করতে গেলে ১৫-২০ জন শিক্ষার্থী আমাকে ক্যামেরা বন্ধ করতে বলে মারধর করে। এসময় কয়েকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে। এর কিছুক্ষণ পরে অন্য সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে আসলে তাদের ওপর ফের হামলা চালায় তারা। আমি হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।”

 

হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে রবিউল আলমকেও হামলার শিকার হতে হয়। রবিউল আলম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে হট্টগোলের শব্দ শুনে সেখানে গিয়ে দেখি আমার সহকর্মী সাংবাদিক আরিফ বিল্লাহকে কিছু শিক্ষার্থী ঘিরে মারধর করছে। আমি ভিডিও ধারণের চেষ্টা করলে কয়েকজন আমার ওপর চড়াও হয়। তারা আমার মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং বলে, “ওরে ধর, ভিডিও থাকলে ডিলিট দে।”

 

তিনি আরও বলেন, এরপর তারা আমাকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে থাকে। অর্থনীতি বিভাগের নাহিদ ইসলাম আমার তলপেটে লাথি মারে, এতে আমি মাটিতে পড়ে যাই। ঘটনাস্থল থেকে আমাকে শাখা সমন্বয়ক এস এম সুইট, সহ সমন্বয়ক গোলাম রাব্বানীসহ কয়েকজন উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পাঠান। এর আগে, ২০ এপ্রিল বৈশাখীয়ানা মেলায় একটি সংবাদ প্রকাশের পর নাহিদ ইসলাম আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।”

 

এদিকে এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিকরা, প্রক্টর ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মাঠে উপস্থিত হন। এসময় ইনকিলাব প্রতিনিধি রাকিব রিফাত উত্তেজিত হয়ে এগিয়ে গেলে তাকেও মারধর করা হয়।

 

ভুক্তভোগীরা জানান, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে এ ধরনের হামলা এবং হুমকির আলোকেও আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সুষ্ঠু বিচার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাই। এছাড়াও এ ঘটনায় প্রায় ৩ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও আরিফ বিল্লাহর মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা যায়নি।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক এস এম সুইট, রোভার খন্দকার সায়েম এবং ডিবিসি প্রতিনিধি নাজমুল হোসেন। তারা জানান, তাদের সামনেই আরিফ বিল্লাহকে ফের মারধর করা হয়। পরে সবাই মিলে আহতদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যান।

প্রত্যক্ষদর্শী ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন বলেন, আমি বাইরে হট্টগোলের আওয়াজ শুনে এগিয়ে যাই, তখন দেখি কয়জন মিলে একজন সাংবাদিককে মারতেছে। অপরদিকে আরেক সাংবাদিক আমার পিছন থেকে ওইদিকে যাচ্ছিল। তারপর সে ভিডিও করা শুরু করলে তার ভিডিও বন্ধ করতে একদল এসে বলে এবং তাকে মারতে উদ্ধত হয়। এবং একজন এসে তার পেটে লাথি মারে। কয়েকজন কিল-ঘুষি মারে।

এ বিষয়ে অভিযুক্তদের একজন অর্থনীতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের নাহিদ হাসান বলেন, ‘আমাদের বিভাগের আন্তঃসেশন খেলা হচ্ছিল। তখন বল আউট হওয়া না হওয়া নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা হয়। জুনিয়র একজন স্যরি বলে সমাধান করা হয়। এসময় আমি সাংবাদিক কাউকে মারিনি। আমার গলা ধরেছে তখন আমি কী করব!’ এ কথা বলেই তিনি উত্তেজিত হয়ে প্রতিবেদকের কল কেটে দেন।

 

আরেক অভিযুক্ত শিক্ষার্থী, আফসানা পারভিন তিনাকে একাধিকবার কল দিলেও পাওয়া যায়নি।

 

অর্থনীতি বিভাগের সভাপতি ড. পার্থ সারথি লস্কর বলেন, আজকে অর্থনীতি বিভাগের আন্তঃশিক্ষাবর্ষ খেলা ছিল। সেখানে ২০১৯-২০,২০২০-২১, ২০২১-২২, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের খেলা ছিল। শুনেছি মারামারি ঘটনা ঘটেছে। তবে সেখানে ঠিক কি হয়েছে জানি না। বিষয়টি নিয়ে বসে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।