জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণে জ্বালানি সুবিচার প্রতিষ্ঠায় ক্যাব প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি উপস্থাপন করেন- অধ্যাপক এম শামসুল আলম  জ্বালানী উপদেষ্টা,ক্যাব 

রবিবার, জুন ৩০, ২০২৪

মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন:- রবিবার (৩০ জুন) সিরডাপ এ টি এম শামসুল হক অডিটোরিয়ামে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর উদ্যোগে ক্যাব প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানী রূপান্তর নীতি ও কর্মপরিকল্পনা নাগরিক সংলাপে তিনি জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণে জ্বালানি সুবিচার প্রতিষ্ঠায় ক্যাব প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি উপস্থাপন করেন।

 

উক্ত নাগরিক সংলাপে সভাপতিত্ব করেন, মোহাম্মদ গোলাম রহমান , বক্তব্য রাখেন ডঃ এম শামসুল আলম, প্রফেসর বদরুল ইমাম, প্রফেসর ইজাজ হোসাইন, প্রফেসর এম এম আকাশ, সামছুল হুদা, এডভোকেট ইকবাল হাবিব, প্রফেসর ডঃ মুহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান,সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।

 

১/, পৃথিবীর জ্বালানির প্রায় সর্বাংশের উৎস সূর্য হলেও পৃথিবী জুড়েই ভূমি ও সাগর অভ্যন্তরে যে পরিপুরক জ্বালানি সম্পদ বিদ্যমান, সে সম্পদের মালিকানা রাষ্ট্রের তথা জনগণের। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান অত্যন্ত স্পষ্টভাবে জনগণের এই মালিকানা ও অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু যারা জ্বালানি সম্পদ জনগণের নামে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য ও সমর্থনে লেনদেন করে থাকেন, তারা জনগণের অধিকার খর্ব করে কতিপয়ের দুর্ভেদ্য অধিকার বা অলিগার্ক (Oligarch) সৃষ্ট করেছেন।

 

২,/তাদের মাধ্যমে ক্ষমতাবান এলিটগণ লাভবান হোন বলেই তারা জনগণের অধিকার ও জনগণের সাথে প্রহসন একাকার করে ফেলেছেন। কেবল অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েই সংবিধান দায়িত্ব শেষ করেনি, সম্পদ রক্ষার দায়িত্বও জনগণকে প্রদান করেছে। কাজেই তাত্ত্বিকভাবে হলেও জ্বালানি সুরক্ষায় দায়িত্ব সকল নাগরিকের। সুতরাং পাইপলাইনে স্থলভাগের গ্যাস রপ্তানি, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন ও রপ্তানি, তদুদ্দেশ্যে কয়লানীতি প্রণয়ন, সাগরের গ্যাস এলএনজি করে রপ্তানি, এবং কয়লা ও জ্বালানিজাত পণ্য (সার, ইস্পাত ও বিদ্যুৎ) রপ্তানি প্রকল্পে টাটার বিনিয়োগ প্রস্তাব- এসবের বিরুদ্ধে জনগণ যেভাবে আন্দোলনে নামে এবং রুখে দেয়; ঠিক সেইভাবে জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণের জন্য জ্বালানি সুবিচার প্রতিষ্ঠায় জনগণ তথা ভোক্তা সাধারণকে আন্দোলনে নামতে হবে।

 

৩./জ্বালানি নিরাপত্তার ঘাটতিতে জীবন বিপন্ন হওয়া কেবল সময়ের ব্যাপার- এই ঘাটতি সৃষ্টি করা সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের শামিল-যার দায় অবশ্যই রাষ্ট্র এবং সরকারের উপর বর্তায়। জ্বালানির অধিকার মৌলিক মানবাধিকার কি না এ-বিতর্কের আর কোনো অবকাশ নেই। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান, চিকিৎসা- এই রকম যত ধরণের মৌলিক অধিকারের কথাই বলা হোক না কেন, কোনোটির ঘাটতিই জ্বালানির ঘাটতির মত এত বেশি বিপদজনক নয়। উষ্ণমণ্ডলীয় দেশের অধিবাসী বলে হিটিং এনার্জি’র আবশ্যকতা নিয়ে আমাদের অধিকাংশের ধারণা নেই। শীতার্ত অঞ্চলে এমনকি ঘরের ভেতরে তাপমাত্রা সহনসীমার নিচে নেমে গেলে মৃত্যু অনিবার্য। কাজেই কাম্য জ্বালানি সরবরাহ রাষ্ট্রকে নিশ্চিত করতে হয়, নইলে দুর্ভাগ্যজনক অনিবার্য মৃত্যুর দায় নিতে হয়। ব্যক্তি কখন এমন মৃত্যুন্মুখ অবস্থায় পড়ে? যখন জ্বালানি অবিচার তাকে জ্বালানি দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেয়। তাই সর্বমহলের জ্বালানি দারিদ্র সম্পর্কে তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক ধারণা থাকা প্রয়োজন।রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবয়ব বিশেষ করে জ্বালানি খাত যদি লুষ্ঠণমূলক শোষণের চিত্র ধারণ করে, তাহলে দুটি বিষয় অত্যন্ত নির্মমভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়ে: একটি জ্বালানি অবিচার এবং অন্যটি জ্বালানি দারিদ্র্য। এ দু’টি নিবিড়ভাবে পরস্পর সম্পর্কিত। অর্থাৎ জ্বালানি অবিচার থেকে জ্বালানি দারিদ্র্য উদ্ভুত। জ্বালানি দারিদ্র্য নাগরিকের সার্বিক সক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস করে বলে জ্বালানি অবিচার ক্রমবর্ধমান হারে বিস্তার লাভ করতেই থাকে।

 

8./ সাধারণভাবে জ্বালানি দারিদ্র্য হচ্ছে আধুনিক জ্বালানি সেবাসমূহে প্রবেশাধিকারের অভাব। ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরাম। মনে করে জীবনমান উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন- এই উভয়েরই একটি মৌলসূত্র হচ্ছে জ্বালানি সেবায় প্রবেশাধিকার।

মৌলিক মানবাধিকারের প্রত্যেকটি উপাদানই সম্পূর্ণভাবে জ্বালানি নির্ভর। খাদ্য, বাসস্থান, বন্ধ, শিক্ষাসহ যে প্রতিপাদ্যই সামনে আনা হোক না কেনো, প্রত্যেকটিই জ্বালানি নির্ভর। কেবল বাসস্থানের কথাই যদি বলা হয়, জ্বালানি দারিদ্র্য ‘হাউসহোল্ড এনার্জি ইনসিকিউরিটি’ সৃষ্টি করে। জ্বালানি দারিদ্র্যের দৃশ্যমান সাধারণ কারণ জ্বালানি অবকাঠামোতে প্রবেশাধিকারে সীমাবদ্ধতা। অবকাঠামো- যেমন পাওয়ার প্ল্যাট, পরিবহন/সঞ্চালন লাইন, গ্যাস ও তরল জ্বালানি পরিবহন পাইপলাইন। আবার সেসব কিছুর সাথে সংযুক্ত থাকাই প্রবেশাধিকারের জন্য যথেষ্ট নয়।

 

৫/ যে মূল্যহারে জ্বালানি সরবরাহ হচ্ছে বা সরবরাহের জন্য প্রস্তাবিত, তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে কি না, সে বিবেচনা অপরিহার্য। যদি তা না হয়, তাহলে ভৌত অবকাঠামোগত প্রবেশাধিকার সেই সব মানুষের কাছে সম্পূর্ণ অর্থহীন। জ্বালানি দারিদ্র্য কার্যত জ্বালানি নিরাপত্তাহীনতারই বহিঃপ্রকাশ। জ্বালানি দারিদ্র্যের বেড়ে যাওয়া মানে জ্বালানিতন্ত্র কাজ করছে না।

 

৬./জ্বালানিতন্ত্র হচ্ছে কোনো নির্দিষ্ট অর্থনীতিতে বা সমাজে জ্বালানি আহরণ এবং ব্যবহার ও ভোগের দক্ষ প্রক্রিয়া।অথবা জ্বালানিতন্ত্র মানে জ্বালানি আহরণ থেকে চূড়ান্ত ব্যবহারকারী পর্যন্ত সরবরাহের কাম্য পদ্ধতি।অথবা জ্বালানিতন্ত্র হচ্ছে দীর্ঘ ও ধারাবাহিক একটি প্রক্রিয়া যা প্রাথমিক জ্বালানি আহরণ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত জ্বালানি হিসেবে দক্ষ ব্যবহারের নিশ্চয়তা দেয়। সবগুলোর মূলসূত্র একই। যে প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি জ্বালানি দারিদ্রদ্র্য রোধ করেনা, বাড়ায়। সে প্রক্রিয়ার উন্নয়ন কোনোভাবেই জাতীয় প্রত্যাশা নয়। অলিগার্কদের প্রত্যাশা।

 

৭./জ্বালানি দারিদ্র্য সম্পর্কে জ্ঞাতব্য:

কোনো ব্যক্তিকে জ্বালানি দরিদ্র বলা যাবে, যদি-

১. রান্নার প্রয়োজনে বছরে মাথাপিছু ৩৫ কিলোগ্রাম এলপিজি না পায় বা ব্যবহার করে এবং

২. মাথাপিছু বার্ষিক ১২০ ইউনিট বিদ্যুৎ না পায় বা ব্যবহার করে।

জ্বালানি দারিদ্র্যের এই মাপকাঠিতে আমরা আমাদের দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করিনি। সে লক্ষ্য অর্জনে বিদ্যমান জ্বালানিতন্ত্র উন্নয়ন বা রূপান্তরের জন্য জ্বালানি নীতি প্রণয়ন ও অনুসরণ ব্যতিত দারিদ্রদ্র্য বিমোচন হবে না। স্মার্ট বাংলাদেশও নয়।

৮./জ্বালানি হচ্ছে জনগণের মৌলিক মানবাধিকার। কোনো ভোক্তা খাবেন না ঘরের হিটিং চালাবেন, না বৈদ্যুতিক বাতি জ্বালাবেন- এসব পৃথকভাবে বাছাই করার সুযোগ নেই। যাই করুন প্রত্যেকটিতেই জ্বালানি সম্পৃক্ত। জ্বালানি সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত না করা হলে মিলেনিয়াম ডেভেলাপমেন্ট গোল (SDG) অর্জন সম্ভব নয়। তদুপরি ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের মত সক্ষমতাও অর্জন করা সম্ভব হবে না। শীতপ্রধান দেশে জ্বালানি দাবিদ্রা সরাসরি মৃত্যুর কারণও হয়। আমদানি এবং/অথবা সরবরাহ ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মূল্যহার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে না থাকায় আমরা জ্বালানি অধিকার বঞ্চিত ও জ্বালানি দারিদ্র্যের শিকার। অথচ বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আইন ১ও বিভিন্ন আইন, বিধি ও। 2024/06/30 14:40 রাষ্ট্র সেই ও প্রবিধানসমূহ দ্বারা। অধিকার সংরক্ষণ নিশ্চিত করেছে।

 

৯/ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ আইন ২০১০ দ্বারা জ্বালানি খাত উন্নয়নে প্রতিযোগিতাবিহীন বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং বিইআরসি আইন ২০০৩ এর ৩৪ ধারা পরিবর্তন দ্বারা গণশুনানি রস করে মূল্যহার নির্ধারণের ক্ষমতা সরকার নিজের হাতে নেওয়ায় সরবরাহ ব্যয় ও মূল্যহার উভয়ই অন্যায় ও অযৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ন্যূনতম ব্যয়ে জ্বালানি সরবরাহ ও ন্যায্য মূল্যহারে ভোক্তার জ্বালানি প্রাপ্যতা বিপন্ন এবং ভোক্তা জ্বালানি অধিকার বঞ্চিত। এই পরিস্থিতি জনগণকে চরম জ্বালানি দারিদ্র্যের মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।

 

১০./ ১৯৫০ এর দশকে প্রথম জ্বালানি অধিকারের কথা বলা হলেও ব্যাপক আলোচনায় এসেছে এবং আন্দোলনে পরিণত। হতে আরো দীর্ঘসময় নিয়েছে। জ্বালানি অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে ফ্রেমওয়ার্ক তাতে তিনটি স্তর ও কয়েকটি মাত্রা প্রদর্শন করা হয়েছে। স্তর (Stages) তিনটি:১. ফান্ডামেন্টাল,২. ইনক্রিমেন্টাল, এবং ৩. সাপ্লিমেন্টাল।আর মাত্রাসমূহের (Dimensions) মধ্যে রয়েছে:(ক) জ্বালানিতে প্রবেশাধিকার,(খ) জ্বালানি সেবায় প্রবেশাধিকার,(গ) জ্বালানি দক্ষ উৎপাদনে প্রবেশাধিকার,(ঘ) জ্বালানি ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকার, এবং(ঙ) জ্বালানি ব্যবহার ব্যয় নির্বাহের অধিকার/সক্ষমতা।

চলমান জ্বালানি রূপান্তরে নতুন আইন প্রণয়ন ও আইন পরিবর্তন দ্বারা জ্বালানি সুবিচার প্রতিষ্ঠায় বড় বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। তাতে দুর্নীতি সম্প্রসারণ ও সুরক্ষা পাচ্ছে। তাই জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণের বিষয়টি মূলত ফান্ডামেন্টাল। ফলে জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণের বিভিন্ন মাত্রা পর্যালোচনার পর্যায়ে নেই।

 

১১./ সরকারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের কারণে জ্বালানি খাতে দুর্নীতির সবচেয়ে বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। জ্বালানি সরবরাহ চেইনের পুরোটাই এককভাবে নিজের হাতে থাকলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলি হয়ে উঠে অপ্রতিরোধ্য দুর্নীতির পরিচালক। আবার সরকারের দুর্নীতির অংশীদার হিসেবে যখন ব্যক্তি মালিকানাখাত এগিয়ে আসে সেখানেও কার্যত কোনো প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তার অংশগ্রহণ হয় না, হয় লেনদেন ও আঁতাঁতের মাধ্যমে। ফলে একচেটিয়াবাদের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রাইভেট সেক্টর ইনফ্রাস্ট্রাকচার নেটওয়ার্কের একাধিক গবেষণা ও সমীক্ষায় এই সত্যটি উঠে এসেছে। পাবলিক ও প্রাইভেট জ্বালানি খাতের এই মিশ্রণটির যতো জটিলতাই থাকুক, এর একচেটিয়া ক্ষমতা এবং দুর্নীতিপরায়ণতা খুব কমই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়।

 

১২. অন্য যে কোনো অবকাঠামো খাতের তুলনায় এই খাতটিতে নগদ অর্থসৃষ্টির সুযোগ অনেক বেশি। অশুভ লুন্ঠনমূলকা আদায়ও যে কোনো খাতের চেয়ে বেশি। বিশ্বব্যাংক এ-খাতের দুর্নীতি তিনটি বিভাজন সনাক্ত করেছে: 2024/06/50)1 এই সুনীতি- যেমন মিটার রিডার ও কারিগরি কর্মচারীদের দুর্নীতি,

২) মাঝারি দুর্নীতি- কোম্পানি ম্যানেজার ও মধ্যস্তর আমলার নিজেদের এবং তাদের প্রশ্রয়ে সংগঠিত দুর্নীতি, এবং

(৩) মহাদুর্নীতি বা গ্র্যান্ড করাপশন কোম্পানিকে একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার দেবার বিনিময়ে পরক্ষ বা প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক ক্ষমতা বলে গোষ্ঠীর নামে ও নিজের নামে বিশাল অঙ্কের অর্থ তুলে নেওয়া, যার

বড় অংশই সুবিধাদানকারীর নির্ধারিত বৈদেশিক একাউন্টে পাচার হয়ে যায়।

প্রাথমিক বিনিয়োগ পর্ব থেকেই এর শুরু। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে নাইকো চুক্তি’র দুর্নীতি তার বড় প্রমাণ।

 

১৩./এ্যান্ড করাপশনের স্কেল এতই বড়, নেপথ্যে ক্ষমতাবানদের প্রশ্রয় ছাড়া এটি করা দুরূহ। নব্বইয়ের দশকে ইউক্রেনে সংগঠিত গ্র্যান্ড করাপশনের উদাহরণ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক এবং এই ইঙ্গিতও দিয়েছে যে, ছোট ও মাঝারি দুর্নীতি যত সহজে চোখে পড়ে, গ্র্যান্ড করাপশনের বেলায় তা ঘটে না। রাষ্ট্র তা আড়াল করে থাকে। তারপরও কোনো নাগরিক কিংবা সরকারের বা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরের কেউ মুখ খুললে তাকে স্তব্ধ করার মতো শক্তির অভাব ঘটে না। দক্ষিণ এশিয়া দেশসমূহে গ্র্যান্ড করাপশনের ইঙ্গিতও দেয়া হয়েছে। এখন সময় এসেছে, বাংলাদেশে জ্বালানি খাত উন্নয়নে প্রতিযোগিতাহীন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মহাদুর্নীতির অভিযোগগুলি জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত করার স্বার্থে বিচারের আওতায় আনা।

 

১৪./প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি (সংশোধিত) ২০২৪-এ জ্বালানি নিরাপত্তা নিম্নরূপে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতায় নিরবচ্ছিন্ন মানসম্পন্ন জ্বালানি প্রাপ্যতা। আর জ্বালানি রূপান্তরকে বলা হয়েছে, জ্বালানি বিষয়ক জাতীয় প্রত্যাশা বা রূপকল্পের বাস্তবায়নে জ্বালানিখাতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনামাফিক নানামুখী পরিবর্তনের পথ নকশা। কিন্তু জ্বালানি বাণিজ্যের কায়েমী স্বার্থবাদী মহল দরিদ্র ভোক্তার জ্বালানি নিরাপত্তার কথা কখনো ভাবেনি, বরাবরই ভেবেছে জ্বালানি ব্যবসায় বিনিয়োগ ও পরিসেবায় সর্বোচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করার কথা। সরকার লাইফ লাইন মূল্যহারে বিদ্যুৎ দিলেও জ্বালানি দারিদ্রদ্র্য ভোক্তা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম দেয় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০-২৫ টাকা।

 

১৫./জ্বালানি রূপান্তর অধিক্ষেত্রের পরিচিতি নির্ণায়ক হচ্ছে জ্বালানি সুবিচার। জ্বালানি সুবিচার হচ্ছে জ্বালানিখাতে বিরাজমান প্রকাশ্য ও গুপ্ত অবিচার এবং অসাম্য প্রতিরোধে গৃহীতব্য কল্যাণমুখী বহুস্তর পদক্ষেপ।অথবা জ্বালানি খাতে ন্যায্যতা ও সাম্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জ্বালানি আহরণ থেকে শুরু করে চূড়ান্ত ব্যবহার ও ভোগ পর্যন্ত সকল ওরে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ।অথবা জ্বালানি খাতে উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, বিতরণ ও মূল্য নির্ধারণ পর্যন্ত সকল স্তরে প্রাতিষ্ঠানিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা। এখানে প্রতিটি ক্ষেত্রে মূল সুর একই।

বাংলাদেশে চলমান জ্বালানি রূপান্তরে কতটা জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত হয়, তা নিয়ে সংসদে আলোচনা করার জন্য এই নাগরিক সংলাপ থেকে মাননীয় সাংসাদের প্রতি অনুরোধ জানানো হলো

এটা

১৬./১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে জ্বালানি নীতি প্রণীত হয়। তার ঘোষিত উদ্দেশ্যসমূহ ১৯৯৬ থেকে ২০২৪- এই আটাশ বছর পর বিরাজমান বাস্তবতায় বিশ্লেষণ করা আজ অনিবার্য হয়ে উঠেছে। তাতে দেখা যায়:

উদ্দেশ্য ১: অঞ্চলভিত্তিক আর্থ-সামাজিক শ্রেণিভেদে জ্বালানি চাহিদা পূরণ। (বাস্তবতা। এটি এখনো সরকারের একটি ‘উইশফুল থিংকিং’ (Wishful thinking) হিসেবে রয়ে গেছে। জ্বালানি চাহিদার একাংশ অসমভাবে পূরণ করা হয়।)

উদ্দেশ্য ২: উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যেন জ্বালানি স্বল্পতার কারণে বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য টেকসই আর্থিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে যথাযথ জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। (বাস্তবতা: জ্বালানি স্বল্পতার কারণে সকল কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত। জ্বালনি নিরাপত্তা অনিশ্চিত। আর্থিক প্রবৃদ্ধি নিম্নগামী। জ্বালানি বিতরণ ও বণ্টনে গ্রামাঞ্চল বৈষম্যের শিকার।)

উদ্দেশ্য ৩: নিজস্ব জ্বালানি সম্পদ উন্নয়ন ও যৌক্তিক ব্যবহার নিশ্চত করা। (বাস্তবতা: নিজস্ব জ্বালানি সম্পদ উন্নয়ন প্রতিশ্রুতি উপেক্ষিত। ‘কুইক রেন্টাল’ ও ‘আদানি’ ধাচের প্রকল্পই তার প্রমাণ)

উদ্দেশ্য ৪: ইউটিলিটিসমূহের টেকসই পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা। (বাস্তবতা: ইউটিলিটিসমূহ দক্ষ জনবল ও সুশাসন সংকটে। পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা স্বার্থসংঘাতের শিকার। ভোক্তারা ইউটিলিটির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রতিকার পায়না। ফলে টেকসই পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত নয়, অনিশ্চিত।)

উদ্দেশ্য ৫: পরিবেশ বান্ধব টেকসই জ্বালানি উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা। (বাস্তবতা: এটি মূলত আলোচনার টেক্সট-এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ।)

উদ্দেশ্য ৬: জ্বালানি খাত ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নে সরকারি ও ব্যক্তি উভয় খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। (বাস্তবতা: বেসরকারি বা ব্যক্তিখাত মূলত লুণ্ঠনমূলক অলিগার্কদের হাতে জিম্মি। সরকারি খাত মনোপলির শিকার। রেগুলেটরি সিস্টেম অকার্যকর। এসব নিয়ে সরকার উদ্বেগহীন।)

 

১৭./১৯৯৬’র জ্বালানি নীতির প্রতি রাষ্ট্রীয় উপেক্ষা এর বাস্তবায়ন রহিত করেছে এবং নীতিটি কেবল একটি কাগুজে দলিল হিসেবে রয়ে গেছে। আসলে চলমান জ্বালানি খাত রূপান্তর নীতি ও আদর্শহীন এবং জনস্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক। অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ ন্যায় ও নীতি বহির্ভূতভাবে সকল যুক্তিযুক্ত আপত্তি উপেক্ষা ও ভোক্তার হাহাকারে কর্ণপাত না করে জ্বালানি সংকট মোকাবেলার অপরিহার্যতার দোহাই দিয়ে বছরের পর বছর সক্রিয় রয়েছে এবং জ্বালানি খাতে লুণ্ঠনমূলক বাজার বজায় রেখেছে। এই আইন ভোক্তাকে তার ন্যায্য জ্বালানি অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে, প্রতিযোগিতা অপসারণ করে একচটিয়াত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। সর্বোপরি

 

আইন ভোক্তা শোষণ প্রতিষ্ঠিত করে, রাষ্ট্রীয় জ্বালানি সম্পদ সুরক্ষা বঞ্চিত রেখে এবং প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থাকে বিকৃত করে লুণ্ঠন অব্যাহত রাখতে একটি সনদে পরিণত হয়েছে। উদ্দেশ্যমূলক জনস্বার্থবিরোধী নিষ্পেষণধর্মী এই আইনটিকে লুণ্ঠনমূলক উদ্দেশ্যে সংকটের অজুহাত সৃষ্টি করে টানা ১৪ বছর সক্রিয় রাখা হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ৫ বার মেয়াদ বৃদ্ধির পর ২০২৬ সাল থেকে পুনরায় মেয়াদ বর্ধিত করার অজুহাত খোঁজা হবে। অর্থাৎ সংবিধানের মানবাধিকার, জ্বালানি অধিকার, ভোক্তা অধিকার, সামাজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি এই আইনের কাছে তুচ্ছ ও তাচ্ছিল্যের বিষয়। জনস্বার্থ বিরোধী হওয়া স্বত্ত্বেও এই আইন কেন এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ- এই প্রশ্নটি ভোক্তাদের ভাবায়।

 

১৮./ কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি (সংশোধিত) ২০২৪ এ বলা হয়েছে ২০১০-এর ওই বিতর্কিত আইনের ক্রমান্বয়ে কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে “চলমান রূপান্তরে জ্বালানি উন্নয়ন ব্যয়হার অন্যায় ও অযৌক্তিক এবং সামঞ্জস্যহীনভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভোক্তা লুণ্ঠনমূলক মূল্যহারে বিদ্যুৎ ও প্রাথমিক জ্বালানি ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ জ্বালানি অধিকার সংরক্ষণকারী সংস্থাসমূহ নিষ্ক্রিয়। ফলে জ্বালানি অধিকার খর্ব হওয়ায় ভোক্তা জ্বালানি সুবিচার বঞ্চিত।” চলমান জ্বালানি রূপান্তরে ক্রমবর্ধমান আমদানি নির্ভরতার খেসারত একইসঙ্গে রাষ্ট্র ও ভোক্তাকে দিতে হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় যুগপৎ ভর্তুকি ও মূল্যহার উভয় বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বাজেটে ভর্তুকি বরাদ্দ ছিল গত অর্থবছরে গ্যাসে ৬ হাজার কোটি টাকা, এবারে ৭ হাজার কোটি টাকা। এরই মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত মূল্যহার বৃদ্ধি হয়েছে একাধিক বার। এবারে বিদ্যুতে ভর্তুকি প্রস্তাব করা হয়েছে ৪০ হাজার কোটি টাকা। গতবারে ছিল ৩২ হাজার কোটি টাকা।

 

১৯/ প্রকৃত অর্থে জ্বালানি খাত কতিপয় লুণ্ঠনপ্রিয় বণিকের অবিশ্বাস্য রকম নিশ্চিত লাভজনক ব্যবসা অব্যাহত রাখতে চলমান রূপান্তরে জ্বালানি খাতে পুঞ্জীভূত আর্থিক ঘাটতি, সে ঘাটতি সমন্বয়ে প্রদত্ত ভর্তুকি এদেশের জনগণের কোন কল্যাণে আসেনি। জ্বালানি বাণিজ্যিকীকরণের উদ্যোগ পুরোটাই এখন ব্যর্থ হতে বসেছে। অলিগার্কের (Oligarch) কতিপয় পছন্দনীয় বণিকের স্বার্থ সমৃদ্ধ করতে চাহিদাকে আমলে না এনে উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়। ফলে তা অনেকাংশে অব্যহত থাকে। ক্যাব প্রস্তাবিত জ্বালানি রূপান্তর নীতিতে বলা হয়েছে, “কেবল ব্যবহৃত ক্ষমতাকে আমলে নিয়ে চাহিদা নির্ধারণ করা হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যয় বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে থাকতো। লুন্ঠনমূলক ব্যয় বৃদ্ধির প্রথম শিকার সাধারণ ভোক্তা, অতঃপর রাষ্ট্র।”

 

২০./চলমান জ্বালানি রূপান্তরে সুবিচার নিশ্চয়নের জন্য ইতিমধ্যে সনাক্ত যে সকল প্রতিষ্ঠিত দুর্নীতি জনসমক্ষে এসেছে সে ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। জন-অসন্তুষ্টি নিরসনের চেষ্টা করা হয়নি। জনস্বার্থ ও রাষ্ট্রীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দেওয়া চুক্তিসমূহও বাতিল করা হয়নি।

 

২১./ক্যাব প্রস্তাবিত জ্বালানি রূপান্তর নীতিতে স্রেডা আইনের অকার্যকরিতা প্রদর্শন করে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে:(ক) লুন্ঠনমূলক ব্যয় ও মুনাফা সমন্বয় হওয়ায় নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের মূল্যহার ন্যায্য ও যৌক্তিক হয় না এবং (খ) প্রতিযোগিতা পরিপন্থী হওয়ায় মূল্যহার অদক্ষ ও একচেটিয়াবাদ প্রতিষ্ঠায় সহায়ক।

জ্বালানিখাতে বিদ্যমান আইন, নীতিমালা, পরিকল্পনা ইত্যাদির পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিক সমাজ যেসব অসম্পূর্ণতা নির্দেশ করেছে, তার আলোকে প্রণীত হয়েছে বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি (সংশোধিত) ২০২৪। জ্বালানি সুবিচার এবং তার লক্ষ্য এতে বৃহত্তর পরিসরে বিধৃত হয়েছে, যেখানে জ্বালানি সেবাগ্রহীতা হিসেবে সাধারণ জনগণ/ভোক্তা অগ্রাধিকার পেয়েছেন এবং নিম্নে বর্ণিত কৌশলগত বিষয়গুলি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে:(ক) জনগণের জ্বালানি অধিকার ও মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করা,খ) জ্বালানি সরবরাহের সকল পর্যায়ে ন্যায্যতা, সমতা ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত করা,(গ) জনবান্ধব জ্বালানি উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ করা,(ঘ) ভোক্তাবান্ধব জ্বালানি মূল্যহার নির্ধারণ নীতি গ্রহণ করা,(ঙ) টেকসই ভোক্তাবান্ধব জ্বালানি রূপান্তর কৌশল নির্ধারণ করা,(চ) নিয়ন্ত্রণমূলক সিস্টেম উন্নয়ন কৌশল নিধারণ করা,(ছ) ভোক্তাবান্ধব বিনিয়োগ কৌশল নির্ধারণ করা,(জ) জ্বালানি সরবরাহের বিভিন্ন পর্যায়ে দক্ষতা ও সক্ষমতা উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ করা,(ঝ) জ্বালানি দক্ষতা ও সংরক্ষণ উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ করা,(ঞ) মানবসম্পদ উন্নয়ন কৌশলে নির্ধারণ করা,(ট) পরিবেশ ও জলবায়ু সংরক্ষণ উন্নয়ন কৌশল,(ঠ) নীতি ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণ করা এবং(ড) জ্বালানি সুবিচার প্রতিষ্ঠায় আইনি কৌশল নির্ধারণ করা।

 

২৩/ ভোক্তাভেদে জ্বালানি সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে এবং অজ্ঞমানব সমাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্য বিলোপ করতে সুষম বণ্টনের ক্ষেত্রে রাষ্টের প্রদত্ত প্রতিশ্রুতির (অনুচ্ছেদ ১৯, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান) উপর ভিত্তি করেই বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি (সংশোধিত) ২০২৪ কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবিত নীতির সমর্থনে বলা হয়েছে, “বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্থাপিত ক্ষমতাবৃদ্ধি, সেই উৎপাদনে দেশীয় জ্বালানির অনুপাত হ্রাস এবং আমদানিকৃত জ্বালানির অনুপাত বৃদ্ধি অব্যাহত থাকা এবং প্রকৃত ব্যয়ের তুলনায় জ্বালানি অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়া এবং সেই সাথে অব্যবহৃত উৎপাদন ক্ষমতার অনুপাত বৃদ্ধির কারণে আর্থিক ঘাটতি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সে ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে মূল্যহার ও ভর্তুকি উভয়ই বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ফলে অব্যাহত এই ঘাটতি বৃদ্ধির অভিঘাতের শিকার একদিকে অর্থনীতি, অন্যদিকে ভোক্তা অধিকার ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন।”

 

২৪/ ক্যাব প্রস্তাবিত বাংলাদেশ জ্বালানি রূপান্তর নীতি (সংশোধিত) ২০২৪-এর রূপকল্প ও উদ্দেশ্য অধিকতর স্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট এবং ক্রমান্বয়ে বাস্তাবায়নযোগ্য। সর্বোপরি তা পরিবেশ ও জলবায়ু সংরক্ষণ নীতিমালার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ভোক্তার জ্বালানি অধিকার সুরক্ষায় যেন জ্বালানি সুবিচার নিশ্চিত হয় এবং ৪র্থ শিল্পবিপ্লব সফল করার মত জাতীয় সক্ষমতা অর্জিত হয়, সেজন্য ভোক্তা-বান্ধব এমন জ্বালানি রূপান্তর নীতি গ্রহণ অপরিহার্য। বিষয়টি তখনই সরকারের বিবেচনায় আসবে যখন সেটি জনগণ তথা ভোক্তা সাধারণের দাবি হিসেবে তা সামাজিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হবে। আজকের এই নাগরিক সংলাপ সে লক্ষ্য অর্জনে মাইলফলক হবে।