
নিজস্ব প্রতিবেদক :
নির্বাচন জোটবদ্ধ নাকি দলগতভাবে হবে সেটা যখন চূড়ান্ত হয়নি তখনেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপির কাছ থেকে আসন ছাড় পেয়ে ঢাকা-১৩ সংসদীয় আসন থেকে মনোনয়ন পেতে দৌঁড়ঝাঁপ শুরু করেছেন জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ।
যে দলটি ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গঠিত হয়েছে। বলতে গেলে দলটি মূলত একব্যক্তি কেন্দ্রীক অর্থ্যাৎ ববি হাজ্জাজের দল হিসেবেই পরিচিত।
যদিও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঢাকা-১৩ সংসদীয় আসন থেকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও অবিভক্ত ঢাকা মহানগর বিএনপির জনপ্রিয় নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম। ইতিমধ্যে তিনি উক্ত সংসদীয় আসন থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে ভোটের মাঠে নেমেছে। দলের বাইরে থাকা জনসাধারণের মাঝেও আস্থা-নির্ভরতার প্রতীক হয়ে সাড়াও ফেলেছেন।
স্থানীয় বিএনপিসহ সর্বসাধারণের ভাষ্য; ঢাকা-১৩ সংসদীয় আসনে বিএনপির সফলতা কেবলমাত্র হতে পারে আবদুস সালামের হাতধরে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা-১৩ আসন থেকে আবদুস সালাম নয় বরং এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ মনোনয়ন পাচ্ছেন। যদিও ববি হাজ্জাজের রাজনৈতিক দল বিএনপির সঙ্গে পথচলা সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও নেই। তারপরও ত্রয়োদশ নির্বাচন ঘিরে বিএনপি যে সকল রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে ‘এক ব্যক্তি কেন্দ্রীক’ পরিচিত তাদেরকে বিশেষ ছাড় দিতে যাচ্ছে বিএনপির হাইকমান্ড এমন গুঞ্জন রয়েছে। যার ধারাবাহিকতায় ঢাকা-১৩ সংসদীয় আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভবনায় এগিয়ে ববি হাজ্জাজ। এমনকি শুধুমাত্র ববি হাজ্জাজে থেমে নেই; আলোচনা রয়েছে মনোনয়ন পেতে পারেন মাওলানা মুমিনুল হকও। সেক্ষেত্রে হয়তো বা বিএনপির হাউকমান্ড তাদের দলের প্রার্থী আবদুস সালামকে টেকনোক্রেট কোটায় মন্ত্রীর আশ্বাস দিতে পারেন। অথবা অন্য কোনো আসন থেকে আবদুস সালামকে মনোনয়ন দিতে পারেন।
তবে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলছেন, ঢাকা-১৩ সংসদীয় আসন নিজেদের রাখতে হলে আবদুস সালামের বিকল্প নাই। কারণ তিনি দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তাই এই আসনে ববি হাজ্জাজকে দেওয়া মানে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ পাওয়া। শুধু এটাই নয়; বিএনপির হাইকমান্ডের অন্তত ঢাকার ২০টি সংসদীয় আসনে বিএনপির দলীয় প্রার্থীর বাইরে না যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ রাজধানী ঢাকা হাতছাড়ার পরিণতি কী সেটা নিশ্চিয়ই স্মরণ থাকবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, ববি হাজ্জাজ শেখ পরিবার অর্থ্যাৎ আওয়ামী লীগের আত্মীয়। ববি হাজ্জাজের বোন ন্যান্সি জাহারা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য (শেখ ফজলুল করিম সেলিমপুত্র) শেখ ফজলে ফাহিমের স্ত্রী। এবং বাংলাদেশের জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থের মা শেখ রেবা রহমান শেখ মুজিবুর রহমানের ভাইঝি ও শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বোন। মূলত আন্দালিব রহমান পার্থ শেখ পরিবারকে রাজনীতিতে টিকিয়ে রাখতে নিজের পাশাপাশি এবার ঢাকায় ববি হাজ্জাজ যেন মনোনয়ন পেতে পারেন সে বিষয়ে বিএনপির হাইকমান্ডের সঙ্গে তদবির করে যাচ্ছেন। অথচ এই পার্থ নিজেই বিএনপি যখন রাজনৈতিক সংকটে তখন জোট থেকে বেরিয়ে যান শেখ পরিবারের পরামর্শক্রমে। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত ও শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর বিএনপির সঙ্গে অতীত সখ্যতাকে কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
এদিকে ববি হাজ্জাজ জানান, বিএনপির সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে ঢাকা-১৩ আসনের বিষয়ে তাকে নিশ্চিত করা হয়েছে। আমি এলাকায় কাজ শুরু করেছি।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাষ্য, আগামী নির্বাচনে বিএনপি দলগত এককভাবে অংশগ্রহণ করবে এটা প্রায় নিশ্চিত। তবে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের অগ্রাধিকার থাকবে। যেহেতু এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি নির্বাচন জোটবদ্ধ নাকি দলগতভাবে হচ্ছে। অন্য দলের প্রার্থীও বিএনপির কাছ থেকে আসন ছাড় চাইতে পারেন কিন্তু সেটাও তো একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে হতে হবে। কিন্তু সবাই যদি এখন ঢালাওভাবে নিজেকে বিএনপির আসনগুলোতে ভাগাভাগিতে অংশীজন হতে চান তাহলে বিষয়টি বিএনপির তৃণমূলে বুমেরাং হিসেবে দেখা দেওয়ার শঙ্কা থাকে। তাছাড়া ওয়ানম্যান আর্মি শো রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের যদি বিএনপিকেই বিজয়ী করে আনতে হয় তাহলে ঢাকায় কেন? তাদের তো নিজ নিজ এলাকাতে ছাড় দেওয়া যেতে পারে। ঢাকায় তাদের ছাড় দিয়ে ঢাকার রাজনীতিতে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থাকে দুর্বল করতে হবে কেন?
তারা বলেন, সবাই যদি বিএনপির কাছ থেকে ছাড় পেয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তাহলে তো সেটা নির্বাচন হবে না; হবে সিলেকশন। আমরা প্রত্যাশা করবো যারা ধানের শীষ প্রতীক ছাড়া নিজ দলের ব্যানার ব্যবহার করে নির্বাচনের ভোট লড়াই করতে চান তাদের বিষয়ে ভেবে সিদ্ধান্ত নিলে ভবিষ্যত রাজনীতির জন্য ভালো হবে।