তরুণ পেশাজীবীদের সম্মানে নাবিকের ইফতার ও সেমিনার অনুষ্ঠিত

শনিবার, মার্চ ২২, ২০২৫

মোঃ মোহন আলী।।

সামাজিক আন্দোলন “নাগরিক বিকাশ ও কল্যাণ” (নাবিক) এর উদ্যোগে তরুণ পেশাজীবীদের সম্মানে ইফতার মাহফিল ও সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে “জুলাই গণহত্যার বিচার ও ফ্যাসিবাদী রাজনীতি নিষিদ্ধে জাতীয় ঐকমত্য” শিরোনামের এই সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মুস্তাসিম তানজীর। তিনি বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে সংঘটিত ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ গণহত্যার বিচার এখন সার্বজনীন দাবি হয়ে উঠেছে। দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে এ বিষয়ে এক ধরনের ঐক্য গড়ে উঠেছে। কিন্তু বিচার প্রক্রিয়ার গতি ও কার্যকারিতা নিয়ে এখনও বহু প্রশ্ন রয়ে গেছে।”

 

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নাবিকের সভাপতি ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার ও বিবিসি বাংলার সাবেক সাংবাদিক আকবর হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত সচিব শরিফুল ইসলাম, সোমালিয়ার দারুস সালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আসিফ মিজান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সাইমুম রেজা তালুকদার, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফাহমিদা আকতার, চিন্তক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক রেজাউল করিম রনি, লেখক ও গবেষক জাকারিয়া পলাশ, নাবিকের সহ-সভাপতি বুরহান উদ্দিন ফয়সাল, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ হাসান প্রমুখ।

 

সেমিনারে বক্তারা বিদেশে পালিয়ে থাকা ফ্যাসিবাদী নেতৃত্ব, বিশেষ করে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তাঁরা উল্লেখ করেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)-তে এখনো এই বিষয়ে কোনো মামলা করা হয়নি। অথচ একই আদালতের চিফ প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার করিম খান, ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে আইসিসিতে মামলা দাখিলের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

 

সেমিনারে আলোচকরা বলেন, অতীতে বসনিয়া, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে গণহত্যাকারীদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের নজির রয়েছে। তারা মনে করেন, বাংলাদেশে **আইসিসির মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়া চালু করা হলে আন্তর্জাতিক মহলে চাপ সৃষ্টি হবে এবং আশ্রয়দাতা রাষ্ট্রগুলোর ওপর কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তার সম্ভব হবে।

বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ একমাত্র দল যারা দুই দুইবার জনতার ধাওয়া খেয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগ বিজেপির বাংলাদেশ শাখার মত কাজ করেছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।

 

নাবিকের পক্ষ থেকে বলা হয়, ফ্যাসিবাদী রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়েও জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা জরুরি। জার্মানি, ইতালি ও স্পেনের উদাহরণ টেনে বক্তারা বলেন, এসব দেশে ফ্যাসিবাদী দল ও আদর্শকে সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এমন ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করা হয়।

 

বক্তারা বলেন, “ফ্যাসিবাদের দোসর ও সহযোগীদের চিহ্নিত করা এবং প্রশাসন, পুলিশ ও বিচার বিভাগে তাদের প্রভাব দূর করা ছাড়া প্রকৃত বিচার সম্ভব নয়।”

 

তারা ফ্যাসিবাদ নির্মূলের জন্য জাতীয় ঐকমত্য বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।

 

সেমিনারের সমাপনী বক্তব্যে ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, “জাতির প্রত্যাশা পূরণে এবং ফ্যাসিবাদ নির্মূল করতে হলে বিচারের প্রক্রিয়াকে আরও কার্যকর ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি সম্পন্ন করতে হবে।”

 

সবার জন্য উন্মুক্ত ও তথ্যভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমেই জাতি এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারবে বলে বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।