
জাতির সংবাদ ডটকম।।
রোগ আর মৃুত্য কমাতে দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ডায়বেটিক সমিতি (বাডাস) এর শতাধিক চিকিৎসক। বাডাস সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক একে আজাদ খান, বারডেম মহাপরিচালক অধ্যাপক মির্জা মাহবুবুল হাসান এবং ডেন্টাল সার্জারি বিভাগের ভিজিটিং প্রফেসর অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরীসহ বারডেম হাসপাতালের শতাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আইন সংশোধনের আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্য, অর্থ এবং বাণিজ্য উপদেষ্টাকে পত্র প্রদান করেছে।
এ বিষয়ে ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, দেশে মানুষের মাঝে তামাক ব্যবহারজনিত রোগ বাড়ছে যা দেশের হাসপাতালগুলোতে ভারাক্রান্ত করে ফেলছে। একই সাথে বাড়ছে আকাল মৃত্যু এবং ব্যক্তিগত চিকিৎসা ব্যয়। দেশে চিকিৎসা ব্যয়ের ৭০ শতাংশ রোগীর পকেট হতে খরচ করতে হয়। রোগ ও চিকিৎসা ব্যয় এভাবে বাড়তে থাকলে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। দেশে মানুষের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে তামাক নিয়ন্ত্রণে সকল মন্ত্রণালয়কে একসাথে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি থেকে প্রেরিত চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাণঘাতি ক্যান্সার, হৃদরোগ, স্ট্রোক, সিওপিডি, ডায়বেটিসসহ অসংক্রামক রোগে মানুষের অসুস্থতা এবং মৃত্যুহার বেড়ে গেছে। বর্তমানে ৬৭ শতাংশ মৃত্যু ঘটছে অসংক্রামক রোগে, যার অন্যতম কারণ ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য সেবন। দেশে বর্তমানে ৩৫% (৩ কোটি ৭৮ লক্ষ) মানুষ বিড়ি, সিগারেট, জর্দা, গুল, সাদাপাতা সেবন করেন। তামাকজনিত রোগে দেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে! পরোক্ষ ধূমপানেও প্রতিবছর ২৬ হাজার অধূমপায়ী (সিংহভাগই শিশু ও নারী) প্রাণ হারায়! তামাক খাত থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের চাইতে তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যয় হয়। তামাকের আগ্রাসনে স্বাস্থ্য খাতে চাপ ও রোগের চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহে ব্যক্তি এবং পরিবার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থা হতে উত্তোরণে কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সরকারের ৩৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ‘যৌথ ঘোষণা’ স্বাক্ষর জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় একটি মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করে, তরুণদের তামাকসহ সকল ক্ষতিকর নেশা থেকে সুরক্ষা প্রদানে দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের আহ্বান জানানো হয়েছে। এতে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ৩৫টি মন্ত্রণালয়ের স্বাক্ষরিত ঘোষণা বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে এবং মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা সুস্থ-সবল প্রজন্ম গড়তে তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন, সে বিষয়টিও অর্জন করা যাবে। দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশে এর সুফল পাবে।
চিঠিতে আরো বলা হয়, বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তামাক নিয়ন্ত্রণ উদ্যোগের ঘোরতর বিরোধীতা করছে তামাক কোম্পানিগুলো। শিশু, কিশোর-তরুণদেরকে তাদের মৃত্যুপণ্যের ভোক্তা বানানোর অপচেষ্টা বন্ধ করা প্রয়োজন। একই সাথে অর্থ ও বানিজ্য মন্ত্রণালয়কে তামাক খাতের রাজস্বের চাইতে জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিতে হবে সবকিছুর উপরে।
চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত সুপারিশ করা হয়-
১) সকল পাবলিক প্লেস ও পাবলিক ১০০% ধূমপানমুক্ত রাখা;
২) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের সীমানার ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধ করা;
৩) শিশু, কিশোর-তরুণ ও দরিদ্রদের তামাকের নেশা কমাতে বিড়ি-সিগারেটের একক শলাকা বিক্রির নিষিদ্ধ করা;
৪) ই-সিগারেট, ভেপ, ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসহ সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যহানীকর পণ্য বাংলাদেশে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা;
৫) তামাকজাত দ্রব্যের মোড়ক, কৌটায়, কার্টুনে সচিত্র সাস্থ্য সতর্কবাণীর পরিধি বৃদ্ধি করা।
উল্লেখ্য, বাডাস ও মানস যৌথ চুক্তি স্বাক্ষরের ভিত্তিতে তামাক নিয়ন্ত্রণে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে।