
জাতির সংবাদ ডটকম।।
তামাক নিয়ন্ত্রণে একটি শক্তিশালী করনীতি প্রনয়ন এবং এটির সঠিক বাস্তবায়ন নিশ্চিতে জাতীয় তামাক কর সেল গঠন করা অত্যন্ত জরুরি। আজ সকাল ১১.৩০ টায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের উদ্যোগে আয়োজিত ‘তামাক কর বিষয়ে তরুণদের ভাবনা ও প্রত্যাশা’ শীর্ষক অনলাইন সভায় উপস্থিত উদীয়মান তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিরা এই দাবি জানান। ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠুন বৈদ্যর সঞ্চালনায় উক্ত আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন ইশরাত জাহান ঐশি (গবেষণা সহযোগী, বিইআর, ঢাবি), ডা. ইফতেখার আহমেদ সাকিব (সভাপতি, বিএমএসএস), মারজানা মুনতাহা (সমন্বয়কারী, আহ্ছানিয়া মিশন ইউথ ফোরাম ফর হেলথ এন্ড ওয়েলবিইং) এবং রাহাত রহমান (ইয়ুথ ভলান্টিয়ার, টিসিআরসি, ডিআইইউ)। সভাটি বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের ফেসবুক পেইজ থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
ইসরাত জাহান ঐশী বলেন, বাংলাদেশ সরকার তামাকের ব্যবহার হ্রাসে কর বৃদ্ধি করলেও দীর্ঘমেয়াদী ও সমন্বিত পদক্ষেপ না থাকায় কর বৃদ্ধির হার যেমন আশানুরূপ নয় ঠিক তেমনি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষাতেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আসছেনা। এ কারণে তরুণ প্রজন্মকে সুরক্ষায় তামাকজাত দ্রব্যের উপর নিয়মিত উল্লেখযোগ্য হারে কর বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ অপরিহার্য। বর্তমান তামাক কর ব্যবস্থা অত্যন্ত জটিল ও বহুস্তরবিশিষ্ট। পাশাপাশি কর আদায় ব্যবস্থা আধুনিক না হওয়ায় কোম্পানিগুলো কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ পেয়ে যায়। এছাড়া মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ খুচরা মূলের সাথে তদূর্ধ্ব শব্দটি যুক্ত থাকার সুযোগে কোম্পানিগুলো প্রচলিত ৪ টি মূল্যস্তরের মধ্যবর্তী দামে একাধিক ব্র্যান্ড বাজারে আনছে। যা তরুণদেরকে প্রয়োজনে সুবিধাজনক মূল্যস্তরবিশিষ্ট ব্র্যান্ডের তামাকাজাত দ্রব্য গ্রহণের অবাধ সুযোগ করে দেয়।
ডা. ইফতেখার আহমেদ সাকিব বলেন, তামাকের ব্যবহার তরুণদের মধ্যে নিকোটিন আসক্তি, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ ও মানসিক সমস্যার প্রবণতা বাড়ছে এবং তামাকের ব্যবহার সকল রোগের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। অধিকাংশ তরুণই কৌতুহল থেকেই ধূমপান ও অন্যান্য তামাকজাত দ্রব্যের প্রতি আসক্ত হচ্ছে যার মূল কারণই সহজলভ্যতা ও নিম্নমূল্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় নিষিদ্ধের বিধান বিদ্যমান আইনে যুক্ত করার পাশাপাশি এটির বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। পরিশেষে তিনি বলেন, নিয়মিত কর বৃদ্ধি এবং বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর চাপ কমানোর পাশাপাশি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তামাকজনিত মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
রাহাত রহমান বলেন, কোম্পানিগুলো তরুণদেরকে তামাকের প্রতি আকৃষ্ট করতে কম দামে নিত্যনতুন ব্র্যান্ড লন্সিং, রঙবেরংয়ের প্যাকেজিং ও বিভিন্ন সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির আড়ালে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করে। এমনকি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণ প্রক্রিয়ায় খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধের বিষয়টি বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে কোম্পানিগুলো। উল্লেখ্য, এই খুচরা শলাকা বিক্রয়ের ফলেই তরুণদের কাছে সিগারেট সহজলভ্য থেকে যাচ্ছে এবং কোম্পানিগুলো নির্ধারিত মূল্যের অধিক মূল্যে বিক্রয়ের সুযোগ পাচ্ছে। সর্বোপরি কর বৃদ্ধিতে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব থাকা সত্ত্বেও এটির বাস্তবায়ন রোধে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নানা উপায়ে লবিং করে কোম্পানিগুলো। এসকল বাধা মোকাবেলায় তরুণ তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মীরা সচেতনতা বৃদ্ধি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সঠিক তথ্য প্রচার এবং নীতি নির্ধারকদের কাছে বাস্তব অভিজ্ঞতা পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
মারজানা মুনতাহা বলেন, কর না বাড়ানোর কারণে তরুণদের কাছে তামাকজাত দ্রব্য সহজলভ্যই থেকে যাচ্ছে এবং কৌতুহলবশত তামাক গ্রহণের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে আকৃষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যা তাদেরকে অন্য নেশাদ্রব্যের দিকে ধাবিত করার পাশাপাশি পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটছে এবং মানসিক চাপ ও সহিংসতা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। তরুণদের মধ্যে তামাক ব্যবহারকে অধুনিকতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে কোম্পানিগুলো নানান অপপ্রচার চালায়। এ থেকে উত্তরণে তিনি সরকার ও সিভিল সোসাইটিকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান। বিশেষ করে নিয়মিত কর বৃদ্ধি, আইন প্রয়োগ এবং তরুণবান্ধব সচেতনতা কর্মসূচি চালু করার বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
সভা শেষে আলোচকরা উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশে এখনো একটি সুনির্দিষ্ট ও সমন্বিত তামাক কর কাঠামো প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে প্রতিবছর কর বৃদ্ধির পরও তামাকজাত দ্রব্য ক্রয়সক্ষমতার মধ্যেই থেকে যাচ্ছে এবং কর ফাঁকির অবাধ সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে কোম্পানিগুলো। ফলে কাঙ্ক্ষিত জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা সম্ভব হচ্ছে না এবং রাজস্ব আয়েও হচ্ছে ঘাটতি। পরিশেষে তারা চলমান আইন শক্তিশালীকরণ প্রক্রিয়ায় কর বৃদ্ধিতে সহায়ক বিষয়গুলো জোরালোভাবে অন্তর্ভুক্ত করে দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।