জাতির সংবাদ ডটকম।।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আয়োজিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন বিষয়ক সভায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) এনবিআর এর সম্মেলন কক্ষে সভাটি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে এনবিআরের চেয়াম্যান বরাবর পাঠানো এক চিঠিতে “আয়োজিতব্য মতবিনিময় সভায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়” বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সভায় আমন্ত্রণ পাওয়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং তিনটি তামাক বিরোধী সংগঠনও অংশগ্রহণে অপারগতা জানিয়েছে।
সম্পতি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ আরো শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এই উদ্দেশ্যে তারা ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪-এর খসড়া প্রণয়ন করেছে। প্রণীত এই খসড়ার ওপর আলোচনার জন্য মতবিনিময় সভাটির আয়োজন করে এনবিআর। উল্লেখ্য, একই দিনে একই বিষয়ে আইন সংশোধনে ওপর মতামত প্রদানের জন্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে বিভিন্ন তামাক কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে অপর একটি সভার আয়োজন করেছিলো এনবিআর। পরে এই সভার তারিখ পরিবর্তন করে ৮ অক্টোবর নির্ধারণ করেছে বলে জানা যায়।
এনবিআর চেয়াম্যানকে পাঠানো স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বাংলাদেশে তামাক চাষ, তামাকজাত পণ্য উৎপাদন ও বিপণনের সাথে জড়িত বিভিন্ন বহুজাতিক/আন্তর্জাতিক/দেশীয় প্রতিষ্ঠানসমূহকে মত বিনিময় সভায় আমন্ত্রণ জানানো উদ্বেগজনক ও অনভিপ্রেত বলে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, স্টেকহোল্ডার বা অংশীজন মূলত তারা, যার কোন লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য অর্জনের সহযোগী। বাংলাদেশ সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশ্য তামাকজনিত রোগ ও মৃত্যু কমানো, জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন এবং দেশকে তামাকমুক্ত করা। অপরদিকে, তামাক কোম্পানির লক্ষ্য হচ্ছে মুনাফা অর্জন। কোম্পানিগুলো কিশোর তরুণদের তামাক সেবনে উৎসাহিত করে ব্যবসা বাড়াতে চায়। সুতরাং তামাক কোম্পানি ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তথা বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। তামাক ব্যবসার সাথে সম্পৃক্তদের স্টেকহোল্ডার বা অংশীজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘এফসিটিসি’ চুক্তি স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন করেছে। তামাক কোম্পানির সাথে সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরণের যোগাযোগ এফসিটিসি’র পরিপন্থী। সে কারণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-কেও তামাক চাষ, তামাকজাত পণ্য উৎপাদন ও বিপণনের সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠানসমূহের সাথে সভা না করার বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট এর সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, তামাক ও তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদন ও বিপণনের সাথে জড়িত কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান কোন ভাবেই সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টার স্টেকহোল্ডার হতে পারে না। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি মূলত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রণীত এবং তারাই আইনটি শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে। এখানে সরকারের অন্য একটি প্রতিষ্ঠান স্টেকহোল্ডার সভা আয়োজন করছে এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে মতামত প্রদানের জন্য; বিষয়টি কতটা যৌক্তিক বা আদৌ তাদের এখতিয়ারভুক্ত কিনা তা ভেবে দেখতে হবে।