জাতির সংবাদ ডটকম।।
দেশের উত্তরাঞ্চলীয় জেলা পঞ্চগড়ের সমতল ভূমিতে চা চাষ দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে, ফলে, আগামী এক মাসের মধ্যে এখানে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র চালু হতে যাচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বাসসকে জানান, ‘এক মাসের মধ্যে এখানে তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র চালু করা হবে।’
এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানান তিনি।
দেশের দু’টি চা নিলাম কেন্দ্রের একটি চট্টগ্রামে ও আরেকটি সিলেটের শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত।
পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার সমতল ভূমিসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে চা বাগানের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ, চা চাষে কৃষকদের বেশি অর্থ আয় হচ্ছে।
এই এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার কৃষকদের মধ্যে অন্যান্য ফসলের চেয়ে চা চাষে আগ্রহ বেশি দেখা গেছে।
পঞ্চগড় নিলাম কেন্দ্রে কার্যক্রম শুরু করার পর, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের চা উৎপাদনকারীরা পরিবহন খরচ কমিয়ে লাভবান হবে।
প্রাথমিক পর্যায়ে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এর কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
জহুরুল ইসলাম বলেন, নিলাম কেন্দ্রের কার্যক্রম উৎপাদিত চায়ের মান উন্নয়নে সহায়ক হবে।
ছোট ও বড় আকারে চা চাষের বিকাশের সাথে সাথে এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভিত্তি শক্তিশালী হচ্ছে ও বেশি লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে।
ফলে, গত সাড়ে ১৪ বছরে এসব জেলায় চা বাগান শ্রমিকদের জীবনমানে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
এই দুই জেলার জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত সরকারি নথিপত্রে দেখা গেছে পঞ্চগড় জেলায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ১২,০৭৯ একর জমি চা চাষের আওতায় আনা হয়। ঠাকুরগাঁও জেলায় ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ১,৪৫৭ একর।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে পঞ্চগড় জেলায় চা চাষের জমির পরিমাণ ছিল ৯২৫ একর, যেখানে ঠাকুরগাঁও জেলায় চা চাষের কোন জমিই ছিল না।
দুই জেলা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন এলাকার সমতল জমিতে কৃষক ও বিভিন্ন বড় কোম্পানি চা চাষ করেছে।
নিজ উদ্যোগে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গড়ে উঠছে ছোট-বড় চা-বাগান।
পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ার চা চাষী সোলায়মান ইসলাম বলেন, আমি বাড়ির পাশে দুই বিঘা জমিতে চা চাষ করেছি এবং ২০১৩ সাল থেকে আমার জমিতে চা চাষ করছি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি এবং আমার সন্তানরা আমার বাগানে কাজ করছি। আমরা কয়েক দিন আগে পাতা তুলেছি। এখন, নতুন পাতা গজাচ্ছে। আমি আবার পাতা তুলব।’
একই উপজেলার আরেক চা চাষী মমতাজ বেগম জানান, আগে ধান চাষ করলেও এখন জমিতে চা চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমার মতো ছোট চা চাষীরা, যাদের নিজস্ব কারখানা নেই, তারা অন্য কারখানায় পাতা বিক্রি করে।’
১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে পঞ্চগড়ের মানুষ সমতল ভূমিতে চা চাষের উদ্যোগ নেয়। এরপর ১৯৯৯ সালে এ জেলায় চা চাষ শুরু হয়।
পঞ্চগড়ে এ চাষের সাফল্যের সঙ্গে তা ঠাকুরগাঁও জেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে।
পঞ্চগড় জেলায় যেখানে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে চা উৎপাদন হয়েছিল মাত্র ২,৩০,০০০ কিলোগ্রাম অথচ ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯,০২,৭৪,৬৩২ কিলোগ্রাম।
কর্মকর্তারা জানান, পঞ্চগড়ে একটি বড় চা বাগানসহ মোট বাগানের সংখ্যা ১৭২টি। অথচ, ২০২২-২৩ অর্থবছরে নয়টি বড় চা বাগানসহ মোট বাগানের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৮,৩৫৫টি।
তারা বলেন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে কারখানার সংখ্যা একটি এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ২৬টিতে।
২০০৫-০৬ অর্থবছরে চা বাগানের শ্রমিক ছিল ১,৪৭৫ জন এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরে শ্রমিক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫,০০০ জনে। চা বিক্রি থেকে আয় ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ছিল ১.২ কোটি টাকা, অথচ ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয় ২৮০ কোটি টাকা।