দেশের নতুন ভবিষ্যৎ রচনায় আন্তর্জাতিক সমর্থন চাইলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

সোমবার, আগস্ট ১২, ২০২৪

জাতির সংবাদ ডটকম।।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের নতুন ভবিষ্যৎ রচনার সূচনালগ্নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছে।

এ সময় দেশে নিযুক্ত কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার আশ্বাস দেওয়া হয়।

আজ রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিংকালে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের নতুন ভবিষ্যতের রূপরেখা রচনার এই সময়ে আন্তর্জাতিক মহলে আমাদের সকল বন্ধু ও অংশীদাররা দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং আমাদের জনগণের পাশে থাকবেন।’

তিনি জোর দেন যে কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার চত্বরের নিরাপত্তা এবং সেইসাথে বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা হবে বর্তমান সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার।

তিনি বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে পারি যে কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার চত্বর এবং কূটনীতিকদের নিরাপত্তা আমাদের মূল অগ্রাধিকারগুলোর অন্যতম হয়ে থাকবে। আমরা আমাদের ভূখন্ডে বসবাসকারী সমস্ত বিদেশি নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিতের প্রয়োজনীয়তার প্রতিও সংবেদনশীল রয়েছি।’

উপদেষ্টা বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার এবং স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত ও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সরকার সকল ধর্মীয় ও জাতিগত নৃ-গোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিতে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনো সহিংসতা বা ভয়-ভীতি প্রদর্শন সহ্য করা হবে না।’

উপদেষ্টা উল্লেখ করেন যে সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারই হলো অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

তিনি বলেন, ‘আমরা পুলিশের কার্যক্রম পুনরায় পুরোপুরি শুরু করার জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছি। দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনী পরিস্থিতির চাহিদা অনুযায়ী দয়িত্বশীলতার সঙ্গে জাতিকে সেবা দিয়ে যাবে।’

তৌহিদ হোসেন বলেন, সরকার যত দ্রুত সম্ভব একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুদলীয় নির্বাচনী গণতন্ত্রে মসৃণ উত্তরণের দিকে দৃষ্টি নিবন্ধ রাখবে।

তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম এবং জনগণের গুণগত পরিবর্তন, অর্থবহ সংস্কার এবং স্থায়ী রূপান্তরের আকাক্সক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ এখন এক নতুন সূচনার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের তরুণদের অদম্য শক্তি, সাহসিকতা ও দৃঢ়তায় গভীরভাবে অনুপ্রণিত বোধ করছি। আমাদের তরুণদের স্বপ্ন অনুযায়ী তাদের একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ দেওয়াই হবে সরকারের মধ্যে আমাদের ভূমিকা।

তৌহিদ হোসেন মানবাধিকারের ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে এমন উপদেষ্টাদের অন্তর্ভুক্তির কথা উল্লেখ করে কূটনীতিকদের মানবাধিকারের প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের অঙ্গীকার সম্পর্কে অবহিত করেন।

 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পেছনের প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, “সরকার মানবাধিকার ইস্যুতে সিরিয়াস।”

হোসেন বলেন, সরকার সাইবার ডোমেইনসহ বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি বলেন, ‘একটি ব্যাপক পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সমস্ত রাজনৈতিক দল এখন তাদের মত প্রকাশের জন্য স্বাধীন।’

হোসেন বলেন, তরুণসহ জনগণের আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে সরকার দেশের একটি গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তা খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের ব্যাপারে মনোযোগী।’

তিনি সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত সহিংসতার জন্য ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতির ওপর জোর দেন। এ সময় তিনি স্বাধীন তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার সুবিধার্থে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সাথে সম্পৃক্ত থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।

হোসেন বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার, সুশাসন কায়েম এবং দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিষয়ে মনোনিবেশ করবে।

উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের পর বাজারে নতুন আস্থা ফিরে আসার কিছু প্রাথমিক লক্ষণ দেখেছি।’

তিনি উন্নয়ন সহযোগী, বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে অর্থপূর্ণ সহায়তা প্রদানের আহ্বান জানান।

উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদারদের বাংলাদেশে তাদের আস্থা বজায় রাখতে এবং শ্রমের মান, পরিবেশগত অনুশীলন ও সরবরাহের দক্ষতা উন্নয়নে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসী যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন অব্যহত থাকবে।’

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলাপকালে হোসেন বলেন, সরকার রোহিঙ্গাদের সমর্থনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং তাদের মানবিক প্রয়োজন ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য চলমান আন্তর্জাতিক সহায়তা চাইছে।

ভারতীয় হাইকমিশনার ও চীনা রাষ্ট্রদূতসহ প্রায় ৬৫ জন কূটনীতিক ব্রিফিংয়ে অংশ নেন।