দেশে কোন রাষ্ট্র ব্যবস্থা নেই, এটা পৈত্রিক ব্যবস্থায় পরিনত হয়েছে- মির্জা ফখরুল

মঙ্গলবার, মে ২৮, ২০২৪

জাতির সংবাদ ডটকম।।

অবসরপ্রাপ্ত সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এবং আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টির আহবায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরীর লেখা ‘ফেনীতে ৩২১ দিন: জেলা প্রশাসক হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা’ বইটির আজ আনুষ্ঠানিক মোড়ক উন্মোচিত হয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে সূচীপত্র প্রকাশনী।

মঙ্গলবার (২৮ মে) বিকেল ৪ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে জনাকীর্ণ এক অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

 

বইয়ের প্রকাশক ও সূচীপত্রের প্রধান নির্বাহী সাঈদ বারীর স্বাগত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবি পার্টির সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বইয়ের মূল্যায়ন এবং সমসাময়িক বিষয়ে বক্তব্য রাখেন অর্থনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, সাবেক ডাকসু ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, কবি ও সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুল হাই শিকদার ও মনোরোগ বিশেক্ষজ্ঞ, এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার। এছাড়া লেখক সোলায়মান চৌধুরী জেলাপ্রশাসক হিসেবে ফেনীতে তার দায়িত্ব পালনকালীন নানা স্মৃতি, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি তুলে ধরেন।

 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সোলায়মান চৌধুরীর বইটি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক। তিনি যে সময়ে ফেনীতে কাজ করেছেন সেটা ছিলো নির্দলীয় সরকার। অনেকেই বলেছেন নির্দলীয় সরকারের কারণেই তিনি ফেনীতে সাহসী ভুমিকা রাখতে পেরেছেন। তাহলে কি রাজনৈতিক সরকারের সময় আমলারা ভালো কাজ করতে পারেনা? অবশ্যই পারে যদি সরকার জনগণের হয়। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার সরকারই সোলায়মান চৌধুরীর মত দক্ষ প্রশাসককে সকল বাধা উপেক্ষা করে সচিব করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, দেশে কোন রাষ্ট্রব্যবস্থা নেই, এটা একটা পৈত্রিক ব্যবস্থায় পরিনত হয়েছে। বর্তমানে মানুষের জন্য সঠিক কাজ করা অত্যন্ত কঠিন বলে তিনি মন্তব্য করেন। আজকের এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরনের জন্য তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভুমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন; আজ বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকে এই সরকারের সকল অপকর্মের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। আমরা রক্ত দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছি কিন্তু পঞ্চাশ বছরেও রাষ্ট্র গঠন করতে পারিনি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এই রাষ্ট্র গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় সামান্য সময় পরই তাকে হত্যা করা হয়। জনাব ফখরুল এই মাফিয়া সরকার হঠাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।

 

অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, বইটি সময়ের আয়না হিসেবে কাজ করবে। তিনি আশা করেন, আমলা হিসেবে সোলায়মান চৌধুরী যেমন দৃঢ়ভাবে কাজ করেছেন রাজনীতিতেও তিনি সফল হবেন। রাষ্ট্রের উপরমহলের আশীর্বাদ ছাড়া সন্ত্রাস করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন এই বইটি তার প্রমাণ। তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিচারপতি লতিফুর রহমান দৃঢ়ভাবে চেয়েছিলেন বলেই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালানো গিয়েছে। আমলাতন্ত্রের সবচেয়ে বড় সর্বনাশ হয়েছে ১৯৯৬ সালে জনতার মঞ্চের মাধ্যমে। তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করে বলেন, জাতি একদিন জেগে উঠবে এবং মুক্তি পাবে ইনশা’আল্লাহ।

 

অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, বর্তমান সরকার গোটা দেশে আজ ভয়ের সংস্কৃতি চালু করেছে। এই সংস্কৃতি চালু হওয়া সম্ভব হয়েছে সোলায়মান চৌধুরীর মতো সৎ, সাহসী আমলারা না থাকার কারণে। এখন দেশের বুদ্ধিজীবীরা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা পর্যন্ত ন্যায়ের পক্ষে দাড়াচ্ছেনা। সঠিক কথা বলতে পারছেনা এই ভয়ের কারণে। সবার ভয় কিছু বললেই বোধহয় আমাকে জেলে যেতে হবে। এই বই আমাদের ভয় কাটাতে সহায়ক হবে।

 

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, একটা সরকার ক্ষমতায় থাকতে কত রাহাজানি চলতে পারে তা এই সময় না দেখলে বোঝা যাবেনা। আজকের আওয়ামীলীগ হলো ক্রিমিনাল তৈরীর একটা ফ্যাক্টরি। এই সরকারের আমলে একজন আইজিপি তার চৌদ্দগুষ্টিকে জমিজমা কিনে দিয়েছে। দেশের জনগণ সেনাবাহিনীর প্রতি একটা আস্থা রাখতো এখন সেই বাহিনী প্রধানকে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে দূর্নীতির দায়ে। দেশের বুরোক্র্যাটরাও সব সময় সরকারের দালালী করে যাচ্ছে, এর ব্যতিক্রম মানুষ হলো সোলায়মান চৌধুরী। তার বই পড়ে আমি বুঝতে পেরেছি দেশের জনগণের জন্য এই ধরনের আমলা কতটা প্রয়োজন।

 

কবি আব্দুল হাই শিকদার বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন সোলায়মান চৌধুরী। হাজারীর সাথে কথোপকথন প্রমাণ করে তিনি অন্য ধাতুতে গড়া। এ বইটি একটি থ্রিলার হিসেবে স্বীকৃতি পাবে সব সময়। তিনি বইটির বিভিন্ন দিক উল্লেখ করে বলেন, লেখক কুড়িগ্রামের ডিসি ছিলেন, সেখানকার মানুষ তার জন্য কেঁদেছেন, ফেনীর ডিসি ছিলেন, সেখানকার মানুষ তার জন্য রোজা রেখেছে, দোয়া করেছে। কারণ ডিসি সোলায়মান মানুষের জন্য কাজ করেছেন।

 

বইয়ের লেখক এবং এবি পার্টির আহবায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, মানুষকে জাগিয়ে তুলতে পারলে অনেক কঠিন কাজ করা সম্ভব এটা প্রমাণিত হয়েছে ফেনীতে। রাজনীতি অনেক কঠিন কাজ মন্তব্য করে তিনি বলেন, মানুষকে সাথে নিয়ে কাজ করতে পারলে দেশ নতুন করে জেগে উঠবে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর নিজেকে কঠিন অবস্থায় পড়তে হয়েছিল বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, আমলারা মানুষকে প্রজা মনে করেন এবং নিজেদের আইনের উর্ধ্বে মনে করেন। ডিসি সোলায়মান হিসেবে পরিচিত ফেনীর সাবেক জেলা প্রশাসক, সাবেক সচিব, এবি পার্টির আহ্বায়ক এএফএম সোলায়মান চৌধুরী তার লেখা বইয়ে সন্ত্রাস কবলিত এবং দ্বিতীয় লেবানন হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ফেনীকে কীভাবে এক বছরের কম সময়ে শান্তির জনপদে পরিণত করেছিলেন তার চমকপ্রদ বয়ান তুলে ধরেন। এছাড়া সেই সময়ে ফেনীর ১২ লাখের বেশি মানুষের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা বনে যাওয়া এক গডফাদার কীভাবে এক রাতে বিড়াল বনে গিয়েছিল তার স্মৃতিচারণ করেন।

 

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রচিন্তক শাহ্ আব্দুল হালিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিস, নাগরিক ভাবনার আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা অধ্যাপক আজিজুর রহমান, এবি পার্টির যুগ্ম আহবায়ক বিএম নাজমুল হক, যুগ্ম সদস্যসচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল মামুন রানা, দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক রকিবুল ইসলাম রিপন, লেখক ও সমালোচক জিয়াউল হক শামীম, সিনিয়র সাংবাদিক মহিউদ্দিন মোহন, জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম ভূঁইয়া, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি প্রমূখ।