আজ ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, সকাল ১১:৩০ টায় বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা) এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিবিবি) ট্রাস্টের সমন্বিত উদ্যোগে ‘‘কোম্পানির হস্তক্ষেপ ও আইনের দুর্বলতায় বাড়ছে তামাকের আগ্রাসন: হুমকিতে জনস্বাস্থ্য’’ -শীর্ষক ভার্চুয়াল টকশোতে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুমোদন করায় অন্তর্বর্তী সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে আলোচকবৃন্দ।
অনুষ্ঠানটিতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জনস্বাস্থ্য বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর জনস্বাস্থ্য বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এর পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রোমেন রায়হান, প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এর নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট এর বিভাগীয় প্রধান (স্বাস্থ্য অধিকার বিভাগ) সৈয়দা অনন্যা রহমান এবং সঞ্চালনায় ছিলেন ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের সহকারি প্রকল্প কর্মকর্তা কৃষ্ণা বসু।
আলোচকবৃন্দ অধ্যাদেশে,‘পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ, বিজ্ঞাপন, প্রচার ও প্রদর্শন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধকরণ, মোড়কে স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা ৭৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি, নিকোটিন পাউচসহ নতুন পণ্যকে তামাকজাত দ্রব্যের সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্তকরণের বিষয়টি যুক্ত করায় সরকারকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কার্যকর পন্থা খুচরা শলাকা বিক্রয় নিষিদ্ধকরণ এবংবিক্রেতাদের লাইসেন্সিং/নিবন্ধন ব্যবস্থা অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
আলোচকদের মতে, খুচরা শলাকা বিক্রয়ের কারণে শিশু-কিশোর ও স্বল্প আয়ের মানুষ সহজেই তামাক পণ্য ক্রয় করতে পারে এবং ক্রেতাদের জন্য খুচরা শলাকা কেনার সুযোগ রাখা হলে স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা প্রদানের বিধানটি সেভাবে কাজে লাগানো যায় না। যা তামাক নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কোম্পানির কর ফাঁকি ও অবৈধ বাণিজ্য রোধে লাইসেন্সিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি সরকারের নিয়মিত নজরদারি এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে বিক্রি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহনের ক্ষেত্রে সহায়ক। একটি শক্তিশালী আইনে কর ফাঁকি, অবৈধ বাণিজ্য ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের কাছে বিক্রি রোধে এসব বিধান সংযুক্ত করা জরুরি।
আলোচকবৃন্দ আরো বলেন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় ধোঁয়াবিহীন তামাকজাতদ্রব্য ব্যবহারের কারণে অকাল প্রসবের ঝুঁকি ৩.৮ গুণ বেড়ে যায়। প্রায় আড়াই বছর ধরে জনসংখ্যাভিত্তিক ক্যান্সার রোগিদের নিবন্ধনকৃত তথ্য থেকে জানা যায় মোট ক্যান্সার আক্রান্তদের ৪৬% তামাক ব্যবহারকারী।
গ্লোবাল টোব্যাকো ইন্টারফেয়ারেন্স ইনডেক্স-২০২৫ এর তথ্যানুসারে, নীতিতে তামাক কোম্পানির প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। উক্ত গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় ১০০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৬৬ তম। এ ক্ষেত্রে Foreign Direct Investment (FDI) গ্রহণের পূর্বে সরকারকে সর্তক থাকতে হবে। স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশ বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সকল নীতি কোম্পানির প্রভাবমুক্ত রাখতে তামাক কোম্পানি থেকে সরকারের শেয়ার প্রত্যাহারের পাশাপাশি সকল মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও সরকারী সংস্থাকে ফ্রেমওয়ার্ক কনভেশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর অনুচ্ছেদ ৫.৩ অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।