ধর্মগুরু নারায়ন ১৬ বছর কলেজে অনুপস্থিত থেকেও বেতন তুলেছেন !

রবিবার, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৫

বিশেষ প্রতিনিধিঃ
‘ধর্মগুরু’র প্রভাবে বছরের-পর-বছর কলেজে অনুপস্থিত থেকেও খুলনার ডুমুরিয়ার পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয়’র কর্মচারি নারায়ণ চন্দ্র রায় সরকারি বেতন ভাতা উত্তোলন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে কলেজটি এমপিও ভুক্ত হওয়ার পর থেকেই ডুৃুমুরিয়া উপজেলার শোভনা ইউনিয়নের জিয়েলতলা গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র রায়, কে-৪২১২২৯ ইনডেক্সধারী ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারি হিসাবে সরকারি বেতন-ভাতা তুলছেন। ২০০২ সালে সাবেক অধ্যক্ষ অপূর্ব বৈদ্য’র সময়ে নারায়ণ রায় ওরফে নারায়ণ গোষ্মামী ওরফে নারায়ণ গোসাই সপ্তাহে ২-৩ দিন হাজিরা দিতো। কিন্তু ২০১০ সালে অধ্যক্ষ অপূর্ব বৈদ্য-কে জোরপূর্বক সরিয়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ সুভাষ সরদার অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে নারায়ণ গোসাই কলেজে হাজির হওয়া প্রায় বন্ধই করে দেন। তবে মাসের শেষে ১ দিন যেয়ে সারা-মাসের হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতন নিতে থাকে। বিগত ১৬ বছর ধরে এভাবেই সব ঠিক-ঠাক চলছিলো। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতে চলতি বছর কিছু শিক্ষক-অভিভাবকের প্রতিরোধের প্রেক্ষিতে গত জুলাই ও আগষ্ট-’২৫ মাসে গোসাই আর হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে পারেননি। কিন্তু তাতে কি ? সরকারি বেতন তুলতে কোনো অসুবিধাই হয়নি। এই বিষয়টির সঙ্গে অধ্যক্ষ সুভাষ সরদারের ক্ষমতার দাপট’র বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক’র কাছে এলাকাবাসী, অভিভাবক ও শিক্ষক-কর্মচারীর পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, জিয়েলতলা গ্রামের পরিতোষ মন্ডল তার ৮ম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়েকে গত ১৭ জুলাই ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে নারায়ণ গোসাই’র নামে ডুমুরিয়া থানায় মামলা করলে পুলিশ গত ২৭ আগষ্ট তাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পল্লীশ্রী মহাবিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, সরকারি সকল নিয়ম-আদেশ উপেক্ষা করে ২০১০ সালে গায়ের জোরে সুভাষ বাবু অধ্যক্ষের চেয়ার দখল করার পর থেকে নারায়ণ গোসাই স্বরাজ-স্বাধীন হয়ে যায়।
কলেজ কমিটির অভিবাবক প্রতিনিধি হামিদুর রহমান বলেন, নারায়ণ গোসাই তো কলেজে না এসেই বেতন নেয়। তাছাড়া সবার ওপরে একটা খবরদারী চালায়, ভাব দেখায়, সেই যেন প্রিন্সিপাল।
অধ্যক্ষ সুভাষ সরদার বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর নারায়ণ গোসাই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের প্রশ্রয়ে এমন একটা পরিবেশ তৈরি করে, যে-কারণে তাকে হাজির হতে চাপ দেওয়া খুব সমস্যা বুঝে একজন বিকল্প মানুষ দিতে বলি। তখন অমৃত বিশ্বাস নামের একজনকে ডেপুটেশনে দেয়। আর স্বাক্ষর না করলেও জুলাই-আগষ্ট মাসের বেতন ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (ই.এফ.টি) সিস্টেমের কারণে তার একাউন্টে টাকা ঢুকে গেছে। তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ওই টাকাটা বাংলাদেশ ব্যাংকে ফেরত দেবো।
গভর্ণিং কমিটি সভাপতি মাওলানা মোক্তার হোসেন বলেন আমি খুব-দ্রুতই মিটিং ডেকে গোসাইর বিরুদ্ধে রেজুলেশন করতে প্রিন্সিপালকে বলেছি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর খুলনা’র উপ-পরিচালক ড. সাজ্জাত হোসেন বলেন, এ বিষয়টিতে গভর্ণিং বডিই ব্যবস্থা নিতে পারে। তারা রেজুলেশন করে আমার কাছে পাঠালে প্রায়োজনিয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।