জাতির সংবাদ ডটকম।।
নওমুসলিম স্বামীর মু্ক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন নওমুসলিম স্ত্রী। আজ ৬ মার্চ, ২০২৪ ইং, রোজ-বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের ২য় তলায় জহুর আহমদ চৌধুরী হলে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য রাখেন জান্নাতুল ইসলাম স্নেহা নামক এক নওমুসলিম নারী। তিনি তার স্বামী নওমুসলিম ইব্রাহিম ওমরের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারপূর্বক মুক্তি দাবী করেন।
সংবাদ সম্মেলনে নওমুসলিম জান্নাতুল ইসলাম স্নেহা বলেন, আমি জান্নাতুল ইসলাম স্নেহা, আমার পূর্ব নাম- স্নেহা সাহা, পিতা- দেবাশীষ সাহা, মাতা- ঝিনি সাহা; স্থায়ী ঠিকানা- হোল্ডিং নং: ৩৬৪, জয়নাব কলোনী, রুমাঘাটা, ডাকঘর: সদর – ৪০০০, থানা: কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, জেলা: চট্টগ্রাম। আমার বর্তমান ধর্ম- ইসলাম, পূর্বধর্ম- সনাতন। জাতীয়তা- বাংলাদেশী। আমার জন্মতারিখ- ১৭ ই জুন ২০০৫। মহান আল্লাহ তা’আলাকে একমাত্র উপাস্য মেনে, আল্লাহর সর্বশেষ প্রেরিত রসূল মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সত্য জেনে, ইসলামের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে গত ০২/১১/২০২৩ তারিখে স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে ‘ইসলাম’ ধর্ম গ্রহণ করি।
নওমুসলিম জান্নাতুল ইসলাম স্নেহা বলেন, আমি প্রাপ্ত বয়স্কা এবং সাবালিকা, বিধায় আমার আইনত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পূর্ণ জ্ঞান এবং অধিকার রয়েছে। ‘ইসলাম’ ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে আমি বিজ্ঞ প্রথম শ্রেণির চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ঢাকা থেকে ‘সনাতন’ থেকে ‘ইসলাম’ ধর্মে পরিবর্তন সংক্রান্ত ‘হলফনামা’ সম্পন্ন করি। যার রেজিস্ট্রার্ড ক্রমিক নম্বর: ১৮, তারিখ: ০২/১১/২০২৩। অতঃপর আমি, আমার বর্তমান ধর্ম তথা ইসলাম পালনের সুবিধার্থে এবং মুসলিম পারিবারিক আইন অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রয়াসে গত ০৫/১১/২০২৩ তারিখে ইসলামিক শরীয়াহ অনুযায়ী, রেজিস্টার্ড কাবিননামা মূলে– নিজ ইচ্ছায়, স্বজ্ঞানে, সুস্থ শরীরে, সুস্থ মস্তিষ্কে, বিনা প্ররোচনায় মো: ইব্রাহিম ওমর’কে বিয়ে করি। আমার স্বামী: মো. ইব্রাহিম ওমর, পূর্ব নাম- বিশ্বজিৎ রায়; পিতা: বিশু রায়; মাতা: মুকুল রানী রায়; স্থায়ী ঠিকানা: ডগর মুড়া, সাভার পৌরসভা, ওয়ার্ড নং-০৭, থানা- সাভার, জেলা- ঢাকা; তিনি নিজেও প্রায় আড়াই বছর পূর্বে ‘সনাতন’ ধর্ম থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
নওমুসলিম জান্নাতুল ইসলাম স্নেহা বলেন, আমাদের বিয়ের বিষয়টি আমার মা-বাবা এবং আত্মীয়-স্বজন জানতে পারেন এবং তারা আমার সংসার ভাঙার পায়তারা শুরু করেন। আমাকে জোরপূর্বক পূর্বের ধর্ম গ্রহণ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে এবং আমার স্বামীকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। এমতাবস্থায় নিরুপায় হয়ে আমি আমার স্বামীর সহযোগিতায়– আমার এবং আমার স্বামী মো. ইব্রাহিম ওমরের নিরাপত্তার স্বার্থে ০৭/১১/২০২৩ তারিখে ‘সাভার মডেল থানায়’ একটি সাধারণ ডায়েরী বা জি.ডি. করি। জিডি নম্বর- ৪২৪, তারিখ: ৭/১১/২০২৩।
নওমুসলিম জান্নাতুল ইসলাম স্নেহা বলেন, পূর্বোক্ত ঘটনাগুলোর প্রায় আড়াই মাস পরে, আমি যখন স্বাচ্ছন্দে আমার স্বামীর বাড়িতে দিনযাপন করছিলাম; আমার মা, বাদী হয়ে ১৪/০১/২০২৪ তারিখে চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু দমন আইনে আমাকে অপহরণ করা হয়েছে এই অজুহাতে আমার স্বামী মো. ইব্রাহিম ওমরের নামে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করে।
নওমুসলিম জান্নাতুল ইসলাম স্নেহা বলেন, আমার মায়ের দেয়া মামলাতে কিন্তু ভিকটিম আমি নিজেই। মামলার মাধ্যমে আমার মা দাবী করে, আমাকে নাকি ফুসলিয়ে অপহরণ করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। আমি সমস্ত দেশবাসীকে সুস্পষ্ট করে বলতে চাই–আমি স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে, বিনা প্ররোচনায় ইসলামের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে ‘ইসলাম’ ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছি। এবং স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে, বিনা প্ররোচনায় মো. ইব্রাহিম ওমরকে বিয়ে করেছি। ‘ইসলাম’ ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য এবং মো. ইব্রাহিম ওমরকে বিয়ে করার জন্য আমাকে কেউ জোর করেনি, ভয় দেখায়নি, ধমক দেয়নি কিংবা টাকা পয়সার লোভও দেখায়নি– সুতরাং এখানে অপহরণ করার তো প্রশ্ন-ই আসে না!! তাই, প্রকৃতপক্ষে এই অভিযোগটিই একদমই অবান্তর!!
তিনি আরো বলেন, একজন স্বাধীন নাগরিক হিসেবে আমি আমার পছন্দের ধর্ম পালনে কেনো বাধাগ্রস্থ হবো? আমি আমার স্বামী এবং সংসার নিয়ে কেনো অনিশ্চয়তায় থাকবো? আমার স্বামী মো. ইব্রাহিম ওমরের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি সম্পূর্ণভাবে মিথ্যা এবং সাজানো। আমি বিজ্ঞ আদালতের কাছে আমার স্বামী মো. ইব্রাহিম ওমরের জামিন মঞ্জুর এবং এই মামলাটি মিথ্যা বিবেচনা করে খারিজ করে দেওয়ার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। আমি বিজ্ঞ আদালতে আমার দেওয়া ২২ ধারা জবানবন্দিতে পরিষ্কার বলেছি এবং এখনও বলছি, ‘আমি স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হয়েছি। স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছি। আমি আমার স্বামীর কাছে থাকতে চাই। আমার মা-বাবার কাছে যেতে চাই না’। অতএব, আমার নির্দোষ স্বামীকে জামিন দিয়ে উক্ত মিথ্যা মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হোক– রাষ্ট্রের কাছে এটাই আমার একান্ত চাওয়া।
জান্নাতুল ইসলাম স্নেহা বলেন, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে ‘তৃতীয় ভাগ’ তথা ‘মৌলিক অধিকার’, অনুচ্ছেদের ৪১-এর (ক) তে বলা আছে, ‘রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকের যেকোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের পূর্ণ অধিকার রহিয়াছে’। আমি রাষ্ট্রের একজন প্রাপ্ত বয়স্কা এবং সাবালিকা নাগরিক। এতদসত্ত্বেও, আইনের মধ্যে থেকেও ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার জন্য আমাকে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে। আদালত প্রাঙ্গণে আমাকে হেনস্থা করা হয়েছে। বিজ্ঞ আদালত যখন আমার দেওয়া ২২ ধারা জবানবন্দি বিবেচনা করে, আমাকে নিজ জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছিলেন, তখন চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গনে আমার পরিবার-পরিজনসহ কিছু উগ্রবাদী, চরমপন্থীদের মদদ-পুষ্ট’রা হট্টগোল শুরু করে এবং উস্কানিমূলক শ্লোগান দিতে থাকে। এক পর্যায়ে আমাকে টানাটানি করা হয় এবং আমাকে জোরপূর্বক অপহরণের চেষ্টা করা হয়। উপস্থিত প্রশাসন এবং আমার আইনজীবীর সহায়তায় আমি নিরাপদ অবস্থানে পৌঁছায়। পরিস্থিতির বিড়ম্বনায় পড়ে এবং সার্বিক বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমার নিরাপত্তার স্বার্থে বিজ্ঞ আদালত আমাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার তথা সেইফ কাস্টডিতে পাঠিয়ে দেয়। পরবর্তীতে শুনানীর মাধ্যমে বিজ্ঞ আদালত আমাকে নিজ জিম্মায় মঞ্জুর করেন। বর্তমানে আমি নিজ ইচ্ছায়, আমার স্বামীর বাড়িতে নিরাপদে অবস্থান করছি।
জান্নাতুল ইসলাম স্নেহা বলেন আমি প্রশাসনকে বলতে চাই, এই উগ্রপন্থী সন্ত্রাসী এবং তাদের মদদ-দাতাদের চিহ্নিত করে, আইনের আওতায় নিয়ে আসাটা, সময়ের দাবি। এরা এই দেশ এবং দেশের জনগণের সাংবিধানিক অধিকার হরণ করছে। আমি স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছি এবং স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছি। এটি আমার ব্যাক্তিস্বাধীনতা এবং সাংবিধানিক অধিকার। আমার এই ব্যাক্তিগত ইস্যুকে তারা উস্কানি দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার দিকে নিয়ে যাওয়ার পায়তারা করা হচ্ছে। এদের আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনের সর্বোচ্চ সহযোগিতা কামনা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, ইব্রাহিম ওমরের ভাই মুহম্মদ আল আমীন, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি অ্যাডভোকেট মাছুমা জামায়েলসহ আরো অনেকে।