নিম্নতম মজুরির গেজেট বাস্তবায়নের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের স্মারকলিপি প্রদান

মঙ্গলবার, অক্টোবর ২৮, ২০২৫

জাতির সংবাদ ডটকম।।

সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরির গেজেট বাস্তবায়ন এবং ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র প্রদানসহ শ্রম আইন কার্যকর করার দাবিতে বাংলাদেশ হোটেল রেস্টুরেন্ট সুইটমিট শ্রমিক ফেডারেশন (রেজিঃ নং বি-২০৩৭) এর আহবানে দেশব্যাপী স্মারকলিপির অংশ হিসেবে ২৮ অক্টোবর বেলা ১১টায় সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবর পেশ করা হয়। সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. ছাদেক মিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জেলা প্রশাসকের অনুপস্থিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জনাব পদ্মাসন সিংহ বরাবর পেশ করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন সিলেট জেলা হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক রাশেদ আহমদ ভূইয়া, সাবেক সহ-সভাপতি মীর মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন, অন্যতম নেতা জাকির হোসেন, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা কমিটির কোধাধ্যক্ষ আব্দুস সালামসহ প্রমুখ।
এছাড়া একইদিনে কলকারখানা প্রতিষ্টান পরিদর্শনের উপ-মহাপরিদর্শক, উপ-পরিচালক বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়।

স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেন, হোটেল রেস্তোরাঁ সেক্টরে প্রায় ৩৫ লক্ষ শ্রমিক-কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। প্রতিটি শ্রমিক পরিবারের সদস্য সংখ্যা গণনা করে হিসেব করলে দেখা যায় প্রায় দুই আড়াই কোটি মানুষ এই সেক্টরের সাথে সম্পর্কিত। দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে অন্যতম বৃহৎ শ্রমজীবী মানুষদের জীবনমান অত্যন্ত নি¤œমানের পর্যায়ে রয়েছে। এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি দুই শতাংশের নিচে থাকলেও বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি এখনো ৮ শতাংশের উপরে। এর ফলে জিনিসপত্রের দাম যেখানে অনেক কমার কথা সেখানে সকল প্রকার জিনিসপত্রের দাম প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির কারণে দেশের অন্যান্য শ্রমজীবী মানুষের মতই হোটেল ও রেস্তোরাঁ শ্রমিকরা এক দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে। খেয়ে না খেয়ে, অভাব-অনটন ও দু:খ-কষ্টে তাদের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। হোটেল মালিকরা প্রতিনিয়ত তাদের খাদ্য আইটেমের দাম বাড়ালেও শ্রমিকদেরকে নামেমাত্র মজুরি প্রদান করছে। হোটেল শ্রমিকরা যে মজুরি পান তা দিয়ে বর্তমান ঊর্দ্ধগতির বাজারদরে পরিবার-পরিজন নিয়ে একজন শ্রমিক ১০ দিনও চলতে পারেন না। চাল, ডাল, তেল, চিনি, শাক-সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন উর্দ্ধগতির পাশাপাশি বাড়িভাড়া, গাড়িভাড়া বৃদ্ধির কারণে জনজীবন দিশেহারা। এমতবস্থায় গত ০৫ মে ২০২৫ হোটেল-রেস্তোরা শিল্প সেক্টরে সরকারের নি¤œতম মজুরি হার ঘোষণা করে যে গেজেট প্রকাশ করেন তা দিয়ে বর্তমান বাজারদরে ৬ সদস্যদের একটি পরিবারের ভরণপোষণের করা অসম্ভব। কিন্তু তারপরও সরকার ঘোষিত নি¤œতম মজুরি সর্বস্তরে কার্যকর করা হয়নি। শ্রম আইন অনুযায়ী যে মাসে গেজেট ঘোষণা হয় সেই মাস থেকেই ঘোষিত মজুরি কার্যকর করার কথা। অথচ প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হতে চললেও এখনও পর্যন্ত হোটেল ও রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠানসমূহে ঘোষিত গেজেট বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। সরকার ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী মজুরি পরিশোধ করা না হলে বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ২৮৯-ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মালিককে ১ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানাসহ গেজেট অনুযায়ী শ্রমিকের সকল বকেয়া পাওনা পরিশোধ করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া হোটেল-রেস্টুরেন্ট-সুইটমিট শ্রমিকদের শ্রমআইনের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত করা হয়। হোটেল-রেস্টুরেন্ট-সুইটমিট শ্রমিকদের চাকুরির নিশ্চয়তা ও জীবনের নিরাপত্তা নেই। বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ৫ ধারায় নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র, ৬ ধারায় সার্ভিস বই, ২(১০) ধারায় চাকুরীচ্যূতি জনিত ৪ মাসের নোটিশ পে, প্রতিবছর চাকুরীর জন্য ১ মাসের গ্রাচ্যুয়েটি, ১০৩ ধারায় সপ্তাহে দেড়দিন সাপ্তাহিক ছুটি, ১০৮ ধারায় দৈনিক ৮ ঘন্টা সপ্তাহে ৪৮ ঘন্টা কাজ, অতিরিক্ত কাজের জন্য দ্বিগুণ মজুরি প্রদান, ১১৫ ধারায় বছরে ১০ দিন নৈমিত্তিক ছুটি, ১১৬ ধারায় ১৪ দিন অসুস্থাতার ছুটি, ১১৭ ধারায় প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য ১ দিন অর্জিত ছুটি, ১১৮ ধারায় ১১ দিন উৎসব ছুটি প্রদানের আইন থাকলেও শ্রমিকদেরকে এই সকল আইনগত অধিকার হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে। অথচ হোটেল মালিকপক্ষ সরকারী আইনের তোয়াক্কা না করলেও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এব্যাপারে নির্বিকার। শ্রম আইনে স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ ও বাসস্থানের বিধান থাকলেও শ্রমিকদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে ও থাকতে বাধ্য করা হয়। শ্রমিকরা দৈনিক ১০/১২ ঘন্টা অমানবিক পরিশ্রম করে অর্ধাহারে-অনাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়। যার কারণে হোটেল-রেস্টুরেন্ট-সুইটমিট শ্রমিকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্মারকলিপিতে নেতৃবৃন্দ নি¤েœাক্ত দাবিসমূহ উত্থাপন করেন।
দাবিসমূহঃ-
১। ০৫ মে ২০২৫ হোটেল-রেস্টুরেন্ট শিল্প সেক্টরে সরকারের নি¤œতম মজুরি হারের গেজেট (নং-৪০.০০.০০০০.০১৬.২৩.৪১ তারিখঃ ০৫ মে ২০২৫) অবিলম্বে সকল ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন করতে হবে।
২। সকল হোটেল রেস্টুরেন্ট ও সুইটমিট শ্রমিকদের বাংলাদেশ শ্রমআইন-২০০৬ (অদ্যাবধি সংশোধিত) এর ধারা ২(২ক) এবং বাংলাদেশ শ্রমবিধি-২০১৫ এর বিধি-১১১(৫) অনুযায়ী উৎসব বোনাস প্রদান এবং ৪ দিনের মজুরিসহ উৎসব ছুটি প্রদান করতে হবে।
৩। ৮ ঘন্টা কর্মদিবস, নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র প্রদানসহ শ্রমআইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে।
৪। যখন-তখন বিনাবেতনে বেআইনীভাবে শ্রমিকদের চাকুরিচ‚্যত বা ছাঁটাই করা যাবে না।
৫। আইনগতভাবে ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম পরিচালনায় কতিপয় মালিকের পক্ষ থেকে বাঁধা প্রদান ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।