নির্বাচন সামনে রেখে খুলনা জেলার ছয়টি আসনে মাঠ গোছানো শুরু করেছেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা

বুধবার, আগস্ট ৬, ২০২৫

জাতির সংবাদ ডটকম।।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে খুলনা জেলার ছয়টি আসনে মাঠ গোছানো শুরু করেছেন বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। বিশেষ করে এখানে ভোটের মাঠ গোছানোর জন্য বহু আগেই তৎপরতা শুরু করেছেন বিএনপির সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী এবং এরই মধ্যে ঘোষিত জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীরা। জামায়াতে ইসলামী জেলার প্রতিটি আসনে একজন প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তবে বিএনপিতে আছেন একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী।
‎জামায়াতের মতো ইসলামী আন্দোলনও জেলার ছয়টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের প্রস্তুতি দেখা গেলেও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) কয়েকটি নতুন রাজনৈতিক দলের জন্য প্রার্থী খোঁজা হচ্ছে।
‎নির্বাচনী এলাকায় চোখ কাড়ছে ব্যানার। চলছে গণসংযোগ।চলছে আগাম হিসাব-নিকাশ।

খুলনা-১ : দাকোপ-বটিয়াঘাটা উপজেলা নিয়ে খুলনা-১ আসনে বিগত ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন আমীর এজাজ খান। অনেকে মনে করছেন, আগামী নির্বাচনে তাঁকে এখানে বিএনপির প্রার্থী করা হতে পারে; যদিও দলীয়ভাবে তিনি কিছুটা পিছিয়ে আছেন। আগে তিনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক থাকলেও গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর জেলা কমিটি ভেঙে মধ্য ডিসেম্বরে মনিরুজ্জামান মন্টুকে আহ্বায়ক এবং আবু হোসেন বাবুকে সদস্যসচিব করে আংশিক কমিটি গঠন করা হয়েছে।

‎কমিটিতে তাঁর স্থান না থাকলেও সম্প্রতি তিনি সক্রিয় হয়ে উঠেছেন দলীয় কর্মকাণ্ডে। এজাজ খানের পাশাপাশি একই আসনে মনোনয়ন পেতে আগ্রহী জিয়াউর রহমান পাপুলও। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে টানানো ব্যানারে তিনি নিজেকে এই আসনের ধানের শীষের কাণ্ডারি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি। এ ছাড়া এ আসনে বিএনপির প্রার্থীতালিকায় শোনা যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা পার্থ দেব মণ্ডল, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি এস এম শামীম কবির ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক আহ্বায়ক তৈয়েবুর রহমানের নাম। এ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী বটিয়াঘাটা উপজেলা জামায়াতের আমির শেখ আবু ইউসুফ আর ইসলামী আন্দোলনের একক প্রার্থী মাওলানা আবু সাঈদ।

খুলনা-২ : খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা নিয়ে গঠিত খুলনা-২ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। পতিত আওয়ামী লীগ আমলে এই আসন আওয়ামী লীগ প্রার্থীর দখলে ছিল। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর এবার আসনটি পেতে চাইছে বিএনপি। এ আসনের সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বিএনপিতে না থাকলেও কর্মকাণ্ড থেকে পিছিয়ে নেই। এই আসনে প্রার্থী হিসেবে নিজেকে প্রচার করছেন নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, সাবেক ছাত্রনেতা শফিকুল আলম তুহিন। শোনা যাচ্ছে, এই আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজেই। আবার কেউ কেউ বলছেন, অন্য কাউকেও প্রার্থী করা হতে পারে। এখানে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে এরই মধ্যে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছেন নগর জামায়াতের সেক্রেটারি ও মহানগর ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল। ইসলামী আন্দোলনের ঘোষিত প্রার্থী হিসেবে মুফতি আমান উল্লাহ বেশ আগে থেকেই নিজেকে সক্রিয় রেখেছেন।

খুলনা-৩ : খালিশপুর, দৌলতপুর ও আড়ংঘাটা-খানজাহান আলী থানার একাংশ নিয়ে গঠিত খুলনা-৩ আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে এখন পর্যন্ত রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। সাবেক ছাত্রনেতা অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলামও ওই আসন থেকে প্রার্থী হতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। এখানে জামায়াতের একক প্রার্থী নগর জামায়াতের আমির ও নগর ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান। এ ছাড়া এনসিপির হয়ে এখানে নির্বাচন করতে পারেন বিএনপির সাবেক প্রার্থী নগর বিএনপির কোষাধ্যক্ষ আরিফুর রহমান মিঠু। আনুষ্ঠানিকভাবে এমন ঘোষণা না এলেও সাম্প্রতিক কিছু কর্মকাণ্ডে এটি অনেকটা স্পষ্ট।  সম্প্রতি খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া সাবেক এমপি আব্দুল গফফার বিশ্বাসও এখানে কোনো দলের প্রার্থী হতে পারেন। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়াল কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

খুলনা-৪ : রূপসা-দিঘলিয়া-তেরখাদা নিয়ে গঠিত খুলনা-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছেন দলের কেন্দ্রীয় তথ্যবিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আজিজুল বারী হেলাল। মাঠে তৎপর বিএনপির সাবেক তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক শরীফ শাহ কামাল তাজও। এই আসনে বিএনপির প্রার্থীতালিকায় রয়েছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পারভেজ মল্লিকও। তিনি সম্প্রতি খুলনাসহ নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে শুরু করেছেন। এখানে জামায়াতের প্রার্থী জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যক্ষ মাওলানা কবিরুল ইসলাম এবং ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব হাফেজ মাওলানা অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ। ঘোষণা না হলেও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন এই আসনে প্রার্থী হতে পারেন। ইসলামী জোট হলে তিনি এবং ইসলামী আন্দোলনের ইউনুস আহমাদ জোটের প্রার্থীর দাবিদার হতে পারেন।

খুলনা-৫ : ডুমুরিয়া-ফুলতলা নিয়ে গঠিত খুলনা-৫ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী সাবেক এমপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। সম্প্রতি নিজেকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রচার করে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি ও বিসিবির সাবেক পরিচালক আলী আসগর লবি। এ আসনে প্রার্থী হতে চাইছেন খুলনা জেলা যুবদলের বর্তমান আহ্বায়ক ইবাদুল হক রুবায়েদ। তিনি কিছুদিন আগে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে এবং আলোচিত বক্তব্য দিয়ে ভাইরাল হয়েছিলেন। তিনি বিভিন্ন খেলার মাঠ, মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে যোগ দিলেও লবির আগমনে তিনি কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন। বিএনপির প্রার্থীতালিকায় আরো আছেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী টিকু রহমান ও শফি মোহাম্মদ খান।এর বাইরেও বিএনপির প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে অধ্যাপক ডা. গাজী আব্দুল হক ও সাবেক যুবদল নেতা মোল্লা মোশাররফ হোসেন মফিজের নাম। এ আসনে ইসলামী আন্দোলনের একক প্রার্থী দলের ডুমুরিয়া উপজেলা শাখার সহসভাপতি মুফতি আব্দুস সালাম। তবে এখানে তাঁর পক্ষে কোনো প্রচারণা নেই বললেই চলে।

খুলনা-৬ : কয়রা-পাইকগাছা নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ আসনে জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন তৎপরতা চালাচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও খুলনা অঞ্চলের সহকারী পরিচালক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। এখানে বিএনপির প্রার্থীতালিকায় রয়েছেন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সহসভাপতি ও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ডাইরেক্টর আমিরুল ইসলাম কাগজী ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু। আলোচনায় রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম, বিএনপি নেতা আব্দুল মজিদ ও ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলামও। ইসলামী আন্দোলনের জেলা সেক্রেটারি হাফেজ আসাদুল্লাহ গালিব এ আসনে দলের ঘোষিত প্রার্থী।