নিজস্ব প্রতিবেদকঃ পাহাড় কাটা নিয়ে ‘টম অ্যান্ড জেরি’ খেলতে পারবেন না বলে মন্তব্য করেছেন বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, পাহাড় কাটা বন্ধে আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এটা নিয়ে ‘টম অ্যান্ড জেরি’ খেললে চলবে না। পাহাড় কেটে পুনরায় সৃষ্টি করা সম্ভব নয়।
চট্টগ্রাম নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে আজ রোববার (১৯ জানুয়ারি) পলিথিনবিরোধী এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “চট্টগ্রামে পাহাড় কাটার বিষয়ে টম অ্যান্ড জেরি খেলা আর চলবে না। আমি আসব-যাব, পাহাড় কাটা বন্ধ হবে। কাল আবারো পাহাড় কাটা হবে। ওরা রাতেও পাহাড় কাটে। রাতের বেলা পাহাড় পাহারা দিতে হবে। এটা সবার দায়িত্ব। এটা সরকারের আইন।”
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই সভায় সভাপতিত্ব করেন মেয়র শাহাদাত হোসেন। স্বাগত বক্তব্য দেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ তৌহিদ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. জিয়াউদ্দীন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের উপমহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আহসান হাবীব ও নগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. হুমায়ূন কবির। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সিদ্ধার্থ শংকর কুন্ডু পলিথিন ও প্লাস্টিক দূষণের ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বিভাগীয় কমিশনারসহ সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘তারা রাতে পাহাড় কাটে। রাত জেগে পাহারা দেবেন। এটা আপনার দায়িত্ব। এটা সরকারের আইন। ৯টা-৫টা অফিস কোনো প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী করতে পারে না। কেউ বলতে পারবে না আমার অফিস টাইম ৯টা থেকে ৫টা। তাকে সব সময় প্রজাতন্ত্রের সেবায় থাকতে হবে।’
সভায় রিজওয়ানা হাসান বলেন বলেন, ‘বিভাগীয় কমিশনার পাহাড় কাটার একটা তালিকা তৈরি করে দিয়েছেন। আমরা বারবার বলেছি তালিকায় মালিকদের নাম দেবেন, তারা দেননি। এখন বলছি, তালিকা পূর্ণ করে মালিকদের নাম দিন। পাহাড় যখন কাটবে মালিককে গ্রেপ্তার করবেন, শ্রমিকদের নয়। দুজন মালিককে গ্রেপ্তার করবেন, পাহাড় কাটা বন্ধ হবে। এই টম অ্যান্ড জেরি খেলা আর আমাকে দিয়ে খেলাবেন না।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘ঢাকায় রাত দুইটার সময় এসএমএস আসে আপা অমুক জায়গায় পাহাড় কাটা হচ্ছে। আমি ঘুম ভাঙিয়ে তিনটার সময় সেটি পাঠাই। ওনারা আবার লোক জোগাড় করতে করতে ছয়টা। পাহাড় কাটা শুরু হয়েছে রাত ১১টায়, সাতটার মধ্যে পাহাড় কাটা শেষ।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আপনি যদি গাছ কেটে ফেলেন গাছ লাগাতে পারবেন। নদী দখল করে ফেললে দখলদার উচ্ছেদ করতে পারবেন। আপনাদের মধ্যে যদি কারও পাহাড় কেটে ফেলার পর পাহাড় সৃষ্টি করার জাদু থাকে তাহলে আমাকে বলে দেবেন। যদি জাদু জানা না থাকে তাহলে পাহাড় কাটতে দেওয়া যাবে না। আপনারা তালিকায় মালিকের নাম দেবেন। সব মালিককে আপনারা রেজিস্ট্রি ডাকে চিঠি পাঠাবেন, এটা আপনার পাহাড় আপনি আর কাটবেন না। সরকারি আইনে অপরিহার্য জাতীয় প্রয়োজন ছাড়া পাহাড় কাটা নিষেধ।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘মালিকদের নাম ধরে চট্টগ্রামের শীর্ষ পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞপ্তি দেবেন। এই দাগ-খতিয়ানে পাহাড় আছে এগুলো কাটা যাবে না। তারপর চট্টগ্রাম শহরের কোথায় কোথায় পাহাড় আছে একটা স্বেচ্ছাসেবক দল তৈরি করেন। বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিডিএ, বন বিভাগ, সিটি করপোরেশন পুলিশ সব সংস্থার প্রতিনিধি নিয়ে এটা করতে হবে। চট্টগ্রামকে সাতটা ভাগে ভাগ করে ফেলেন। এই সাতটা কর্মকর্তা সাতটা ভাগের দায়িত্বে থাকবে।
পাহাড় কাটার বিষয় নিয়ে বক্তব্যের পাশাপাশি উপদেষ্টা পলিথিন ব্যবহার নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘পলিথিনের বিকল্প অনেক আছে। একসময় আমাদের দাদা বাবারা চটের ব্যাগ নিয়ে বাজারে যেতেন। এখন আর সে কথাটা আমাদের মনে নেই। এখন বাজারে গেলে সব পণ্যের জন্য পলিথিন দিচ্ছে। সরকার আইন করেছে বলে নয়, আপনার ভবিষ্যতের জন্য, সন্তানের জন্যই এটা মানতে হবে।’
পলিথিন বন্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘সবাইকে যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব নিতে হবে। ব্যানার বর্জন করতে হবে। আমাদের উৎপাদন এবং বিপণন দুটিই বন্ধ করতে হবে। আপাতত প্লাস্টিকের বলপয়েন্ট কলম ব্যবহার করা হবে হয়তো। পর্যায়ক্রমে সব প্লাস্টিক বন্ধ করতে হবে।’
সভায় শব্দদূষণ প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমরা সহসাই একটা প্রচারণা শুরু করে দেব হর্নের বিরুদ্ধে। আপনারা যারাই গাড়িতে উঠবেন, উবারে উঠবেন, চালককে বলবেন হর্ন বাজাবেন না। আপনারা বলবেন, আপনি উপদেষ্টা হয়েছেন শব্দদূষণ বন্ধ করেন। আপনি হর্ন বাজাবেন আর আমি বন্ধ করব! আপনি এসে আমাকে বরং বলেন যে, আপনি হর্ন বন্ধ করেছেন কিন্তু শব্দদূষণ বন্ধ হচ্ছে না।’
নেপালের উদাহরণ দিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘হর্নের বিরুদ্ধে আমরা শিশুদের এই প্রচারণায় ব্যবহার করব। নেপালে হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে ধাপে ধাপে শাস্তির বিধান করা হয়েছে। শেষ ধাপে লাইসেন্স বাতিল করা হয়। আমরাও আইন করে দেব।