পূর্বাচলের লুটপাট হরিলুট এর নায়ক নায়েব আলী

শনিবার, আগস্ট ১২, ২০২৩

 

 

জাতির সংবাদ ডটকম : দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সরকারি আবাসন প্রকল্প পূর্বাচল নতুন শহর আবাসিক প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। এত বিশাল পরিকল্পনা যেন নায়েব আলী লুটপাটের ক্ষেত্রতে পরিণত হয়েছে। কাজ শুরুর পর প্রকল্পের মেয়াদ এখন পর্যন্ত সাতবার বাড়ানো হয়েছে। এ প্রকল্পের দুর্নীতি ও লুটপাট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নকে কলুষিত করার প্রয়াস মনে করেন অনেকেই। ঢাকা শহরের পাশে গড়ে তোলা নতুন এ শহরে সব ধরনের আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি ছিল রাজউকের। কিন্তু সে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এপর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। নাগরিক পরিষেবা না থাকায় প্রকল্প এলাকা এখনও বাসযোগ্য হয়নি।

গত ২৮ বছরেও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে না পারায় পূর্বাচলে বাড়ি নির্মাণ করছেন না প্লট মালিকরা। সবশেষ প্রকল্পের মেয়াদ দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এই সময়সীমার মধ্যেও প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কি না তা নিয়ে রাজউকের কর্মকর্তারাই সন্দেহে রয়েছেন। কি কারণে কাজ শেষ করতে না পারার প্রথম কারণ হিসেবে করোনাকে দায়ী করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রকল্পের অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে দেশে সাধারণ ছুঁটি ঘোষণা করা হয়। সে সময় লোকবলের অভাবসহ কাজ দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। প্রকল্পের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ হয়েছে বলে দাবি করেছে রাজউক।

রাজউক ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে জনসংখ্যার চাপ কমাতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জের ৬ হাজার ১৫০ একর জমি নিয়ে গড়ে উঠছে পূর্বাচল নতুন শহর। এতে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্লট রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার। এই শহর গড়তে রাজউকের নেওয়া প্রকল্প ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। কাজ পুরোপুরি শেষ না হওয়ায় সেখানে এখনো বসতি গড়ে ওঠেনি। তবে পূর্বাচলে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। রাজউক সূত্রে জানা গেছে, পূর্বাচলে এখন পর্যন্ত ২৯০টি বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আবেদন পড়েছে ৩১৩টি।

প্রকল্পটির মোট আয়তন ৬ হাজার ২২৭ দশমিক ৩৬ একর। ঢাকার খিলক্ষেত, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার জমি নিয়ে প্রকল্পটি গড়া হয়েছে। এতে বিভিন্ন শ্রেণির (আবাসিক, বাণিজ্যিক, প্রশাসনিক, প্রাতিষ্ঠানিক, অন্যান্য) ও আয়তনের মোট ২৯ হাজার ৭৭৬টি প্লট আছে। প্রকল্পে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নগর সেবাকেন্দ্রিক প্লট আছে দুই হাজারের বেশি। এর মধ্যে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক প্লট প্রকল্পের মূল মহাপরিকল্পনা বা নকশা সংশোধন করে তৈরি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে।

এ দিকে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজউক থেকে যে সব প্রকৌশলী,প্রকল্প পরিচালক,প্রজেক্ট ম্যানেজার ও অন্যান্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছিলো তাদের বিরুদ্ধে উঠেছে হাজার কোটি টাকার অনিয়ম- দুর্নীতির অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশন সেব অভিযোগ তদন্ত করছে। অভিযোগের ভিত্তিতে বার বার প্রকল্প পরিচালক,প্রজেক্ট ম্যানেজার ,এস্টেট কর্মকর্তা বদল করা হলেও কার্যত: অনিয়ম -দুর্নীতি বন্ধ করা যাচ্ছে না।

সম্প্রতি এই প্রকল্পে উপপরিচালক (এস্টেট) পদে পদায়ন করা হয়েছে সদ্য পদন্নোতিপ্রাপ্ত নায়েব আলী শরীফকে। তিনি রাজউকের সদস্য (এস্টেট) এর ডান হাত হিসাবে পরিচিত। গোপালগঞ্জ জেলায় তার বাড়ী। আর এ করণেই তিনি রাজউক প্রশাসনে বিশেষ মর্যাদা পেয়ে থাকেন । আর সেই মর্যাদার সুত্র ধরেই পূর্বাচল প্রকল্পে তাকে পদায়ন করা হয়েছে একটা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। এই পদায়নে রাজউকের সদস্য (এস্টেট) এর জোর তদবীর রয়েছে ।

একাধিক সুত্রে জানাগেছে, নায়েব আলী শরীফ পূর্বাচল প্রকল্পের উপপরিচালক (এস্টেট) পদে যোগদান করেই পুরো প্রকল্পটিকে তার নিজেস্ব তালুক বা জমিদারী স্বত্ত্ব মনে করছেন। যে কারণে তিনি প্রকল্পের প্লট হস্তান্তর, রুপান্তর, আদীবাসীদের প্লট প্রদানে নানা হয়রানি শুরু করেছেন। কাগজপত্রের ত্রুটি ধরে প্লট মালিকদের সীমাহীন নাজেহাল করছেন। আবার দাবী মোতাবেক ঘুস পেলেই সব আপত্তি গায়েব করে দিচ্ছেন। তিনি বরাদ্দপ্রাপ্ত প্লট মালিকদের প্লট বরাদ্দ বাতিল করার হুমকি দিয়েও অনৈতিক অর্থ আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সুত্রগুলো আরো জানায়, উপপরিচালক (এস্টেট) নায়েব আলী শরীফ রাত ১০/১১ টা পর্যন্ত পূর্বাচল প্রকল্পে অবস্থান করেন। এ সময় তিনি প্রকল্পের অফিসটি আনন্দ ফুর্তির কাজে ব্যবহার করেন। এসি ছেড়ে দিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটান। এটি সরকারী সম্পদ ও অর্থের অপচয় করার অপরাধ হলেও তিনি সেটি অবলীলায় করে যাচ্ছেন। প্লট হস্তান্তর বা সেল পারমিশনের ক্ষেত্রে তিনি ৫/৬ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুস দাবী করছেন।

রাজউকের একজন উর্ধ্বতন কমর্কর্তার মানি মেশিন হিসাবে সুপরিচিত উপপরিচালক (এস্টেট) নায়েব আলী শরীফের সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে আরো জানা গেছে, তিনি রাজউকে মাত্র ১০ বছর চাকুরী করেই অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ঢাকা শহরে একাধিক প্লট,ফ্ল্যাট ছাড়াও নিজ এলাকা ও তার শ^শুর বাড়ী এলাকায় প্রচুর সম্পদ ক্রয় করেছেন। গাড়ী ,বাড়ী,প্লট ,ফ্ল্যাট,শপিং মলে দোকান ছাড়াও নামে-বেনামে ব্যাংকে রয়েছে কোটি কোটি টাকা। যা তার চাকুরী জীবনের আয়ের সাথে সংগতিপূর্ণ নয়।রাজউকের নানা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের সাথে কথা বলে তার সম্পর্কে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ পাওয়া যায়। অনেকেই মন্তব্য করেন যে, নায়েব আলী শরীফ সব সময় টপ মেজাজে থাকেন। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথেও ধৃষ্ঠতামুলক আচরণ করেন। কাউকেই তোয়াক্কা করেন না। তাদের আদেশ নিষেধও মান্য করেন না। এমন কি অফিসিয়াল ডেকোরমও পালন করেন না। তিনি নিজেকে সবার বস মনে করেন। তার এ ধরনের আচরণ সরকারী চাকুরী শৃংক্ষলা বিধির সুস্পষ্ট লংঘন হলেও তিনি সেটা গায়ে মাখেন না।

পূর্বাচল প্রকল্পের একাধিক প্লট মালিকদের অভিযোগ, নায়েব আলী শরীফ যে দিন থেকে র্প্বূাচল প্রকল্পের উপপরিচালক (এস্টেট) পদে যোগদান করেছেন তার পরদিন থেকেই তাদের হয়রানি বেড়েগেছে। প্রকল্প এলাকায় নানা প্রকার অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। যে সব প্লট মালিক বাড়ী নির্মাণের পরিকল্পনা নিচ্ছিলেন তারাও থমকে গেছেন। প্রকল্প এলাকার দালালদের সাথে গভীর সখ্যতা গড়ে তুলেছেন নায়েব আলী শরীফ। ফলে যে কোন সময় প্লট মালিক ও দালালদের মধ্যে মারাত্মক সংঘর্ষ বা খুনোখুনীর আশংকা দেখা দিয়েছে। প্লট মালিক ও এলাকাবাসীদের দাবী, অতিসত্তর পূর্বাচল প্রকল্পের উপপরিচালক (এস্টেট) পদ থেকে নায়েব আলী শরীফকে প্রত্যাহার করা হোক। একই সাথে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অনিয়ম-দুর্নীতি,অবৈধ সম্পদ অর্জন ও চাকুরী শৃংক্ষলা বিধি ভংঙ্গের জন্য আইনানুগ ও বিভাগীয় শাস্তমুলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক। কারণ এমন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার লুটপাটের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সারা দেশের সকল উন্নয়ন কুলুষিত হয়েছে।