প্রান্তিক খামারীদের ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন

সোমবার, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৩

জাতির সংবাদ ডটকম।।

৬ ফেব্রুয়ারি, সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ হলে বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন (বিপিএ) এর উদ্যোগে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রান্তিক খামারীদের ডিম ও মুরগির উৎপাদন খরচ তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সভাপতি সুমন হাওলাদার। তিনি বলেন, সংবাদ সম্মেলন শেরে বাংলা বিশ্ববিদ্যলয়ের পোল্ট্রি সাইন্সের প্রফেসর জনাব আনোয়ারুল হক বেট স্যারের গবেষণায় প্রান্তিক খামারিদের ডিম ও মুরগির বর্তমান উৎপাদন খরচ বের করেছেন তা আনুষ্ঠানিক ভাবে সাংবাদিক ভাইদের জানানো হল। প্রান্তিক খামারীদের একটি ডিম উৎপাদন খরচ ১১.১১ পয়সা, ১ কেজি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন খরচ ১৪৮ টাকা, ১ কেজি সোনালী মুরগি ২৬২ টাকা। যাতে করে ডিম ও মুরগির সঠিক বাজার রিপোর্ট করে তুলে ধরতে সহায়ক হবে এবং প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন খরচ ভোক্তাদের সামনে তুলে ধরবেন। সকল সাংবাদিক ভাইদেরকে বলবো প্রান্তিক খামারীরা যাতে ডিম ও মুরগির ন্যায্য বাজার মূল্য পেতে পারে সে জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই। শেখ হাসিনার নির্দেশ খুদা হবে নিরুদ্দেশ। ভোগ্যপন্য উৎপাদন করে তাদের সহযোগিতা করে উৎপাদন বাড়ানো। ১৬কোটি মানুষের প্রোটিনের যোগান দাতা পোল্ট্রি খামারিরা আজ কেন খামার বন্ধ করে দিচ্ছে জানতে চাই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে। দেশের উন্নয়ন হয়েছে কর্পোরেটদের ভাগ্য বদল হয়েছে। নিঃস্ব হয়েছে ডিম মুরগি উৎপাদন কারী প্রান্তিক বেকার যুবক ও নারী উদ্যোক্তা গণ। কর্পোরেটদের সরকার সকল সুযোগ সুবিধা দিলেও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারীগণ অবহেলিত কেন প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন কে ধরে রাখতে হবে তা না হলে কর্পোরেটদের কাছে জিম্বি হয়ে পড়বে ভোক্তা ও খামারিগণ। এই শিল্পে জড়িত আছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৫০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান। এই শিল্প যদি ধ্বংস হয়ে যায় বেকারত্ব বেড়ে যাবে এবং ডিম ও মুরগির সংকট দেখা দিবে। তাই এদেরকে যেভাবে হোক টিকিয়ে রাখতে হবে। জিম্মি হয়ে আছে গুটিকয়েক কর্পোরেট কোম্পানীর কাছে। পোল্ট্রি ফিড মুরগির বাচ্চা, ডিম ও মুরগির বাজার। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর শিল্প পোল্ট্রি শিল্প কিন্তূ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্ব অবহেলায় আজ প্রান্তিক পর্যায়ের খামারীরা ধ্বংসের দারপ্রান্তে।

প্রাণিসম্পদের সহযোগিতায় কর্পোরেট কোম্পানী আরো বড় হচ্ছে, আর প্রান্তিক খামারি দিন দিন ন্যার্য্য মূল্য না পেয়ে লস করে খামার বন্ধ করে দিচ্ছে। প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য পোল্ট্রি স্ট্রোক হোল্ডারদেরকে নিয়ে ২০১০ সালে একটি জাতীয় কমিটি করা হয়। পোল্ট্রি ফিড, মুরগির বাচ্চা, ডিম ও মুরগির কৌশলপত্র তৈরী করা ২০২২ সাল পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। বিপিএর পক্ষ থেকে নভেম্বর ২০২২ এ সরকারের সকল মহলে যোগাযোগ করা হলে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরকে কৌশলপত্রটি ৩০ দিনের সময় দিয়ে বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও এবং তারা একটি মিটিং করেন ৫ই ডিসেম্বর। মিটিংএ সিদ্ধান্ত হয় ৩০ দিনের মধ্যে সমাধান করা হবে। অদ্যাবদী কোন অজানা কারণে এখন পর্যন্ত তারা কৌশলপত্র তৈরী করতে পারেননি। বাংলাদেশে পোল্ট্রি সেক্টর অবহেলিত কেন প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের কাছে জবাব চাই। কর্পোরেট কোম্পানীগুলো ১০% ডিম ও মুরগি এবং পোল্ট্রি ফিড ও বাচ্চা ১০০% উৎপাদন করে। তাই কর্পোরেট কোম্পানীগুলোর কাছে দেশের বৃহত্তর পোল্ট্রি শিল্প জিম্মি হয়ে পড়ছে। প্রান্তিক খামারীগণ ডিম ও মুরগি ৯০% উৎপাদন করেন। ১০% উৎপদন করে কৌশলে কর্পোরেট কোম্পানীগুলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মোবাইল কোর্ট পরিচালনার অনুমতি থাকলেও তারা কোন কোম্পানীকে তদারকি বা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন না। তাই দিন দিন পোল্ট্রি ফিড ও বাচ্চার দাম অযৌক্তিকভাবে বাড়িয়ে দিয়ে কন্ট্রাক খামারে নেয়ার জন্য বাধ্য করেন প্রান্তিক খামারীদের। তাই সরকারের এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিত প্রান্তিক খামারীদের উৎপাদনকে ধরে রাখতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশে আমিষের ঘাটতি দেখা দিবে এবং কর্পোরেট কোম্পানীদের উপর নির্ভর করতে হবে। সকল কর্পোরেট কোম্পানীগুলো স্বেচ্ছাচারীতায় কখনও ডিম ও মুরগির উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়ে খামারীদের লসে ফেলে দেয়। কখনও ডিম ও মুরগির উৎপাদন কমিয়ে দিয়ে মুরগির বাচ্চার উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়ে এবং কখনও ভুট্টা ও সয়াবিন মজুদ করে কৌশলে পোল্ট্রি ফিড ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাট করে। জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে মুরগির বাচ্চার দাম ছিলো ৯ টাকা থেকে ১০ টাকা। আর এখন ফেব্রুয়ারি মাসের ৬ তারিখ। আজকের বাচ্চার দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। তার মানে খামারী যখন বাচ্চা খামারে নিবে তখন বাচ্চার দাম বেড়ে যায় এবং পোল্ট্রি ফিডের দাম বাড়িয়ে দেয়।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রান্তিক পর্যায়ে পোল্ট্রি শিল্পকে রক্ষার জন্য কাজ করতে হবে।

সমাধাণ: ২০০৮ পোল্ট্রি নীতিমালা ও ২০১০ পোল্ট্রি ফিড, ২০১৩ এবং ২০২০ যতগুলো নীতিমালা আছে সবগুলো বাস্তবায়ন করে পোল্ট্রি শিল্পকে রক্ষা করতে হবে। কোন অজানার কারণে পোল্ট্রি নীতিমালা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে সরকারের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।

সকল খামারীকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে সরকারি সকল সুবিধা দিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার ব্যবস্থাপনার পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে সকল প্রান্তিক খামরী উৎপাদন খরচের সাথে সমন্বয় করে বিক্রয় মূল্য পেতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে সকল পোল্ট্রি খামারীদের জন্য সকল ব্যাংকে জামানতবিহীন লোনের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে শিল্প টিকানো সম্ভব।

উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডিম ও মুরগির দাম বেড়ে যায়। তাই সরকারের পক্ষ থেকে মুরগির খাদ্যে প্রান্তিক খামারীদেরকে ভর্তুকি দিয়ে দাম কমিয়ে রাখা সম্ভব। এছাড়া কোন প্রকারেই সম্ভব না।

আরো উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার, সহ-সভাপতি বাপ্পি কুমার দে, সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসাইন, সমাজকল্যাণ সম্পাদক শামসুর রহমান, সহ-দপ্তর সম্পাদক মোঃ শফিউর রহমান রিমন, দপ্তর সম্পাদক মেজবাহ মারফী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাতীয় কৃষি পুরস্কারপ্রাপ্ত জাকির হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক ড. সোহরাব হোসাইন, আলমগীর হোসাইন সহ সকল জেলা থেকে আগত নেতৃবৃন্দ।