
নিজস্ব প্রতিবেদক: নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উদযাপনে ডিবি সর্বদা নগরবাসীর পাশে থাকবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক। তিনি বলেন, কোনো ফাঁকা বুলি নয় বরং দৃশ্যমান অ্যাকশনের মাধ্যমেই ডিবি ক্রমাগত নগরবাসীর আস্থার প্রতীকে পরিণত হচ্ছে।
শনিবার (২৯ মার্চ) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে ডিবি কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রম সংক্রান্তে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ঈদ আমাদের নিকটবর্তী। ঈদুল ফিতর উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে উদযাপনের লক্ষ্যে ঈদে বাসাবাড়ি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিপণিবিতানের সার্বিক নিরাপত্তায় ডিএমপি সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। মাহে রমজানে নগরবাসী যাতে নিরাপদে ইবাদত বন্দেগি করতে পারে সেজন্য ডিবি যেমন সবসময় পাশে ছিল তেমনি নিরাপদ ও উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উদযাপনে ডিবি সর্বদা নগরবাসীর পাশে রয়েছে।
তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে ঢাকা মহানগর এলাকায় পুলিশি কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে মহানগরে চেকপোস্ট টহল কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ডিএমপির ৫০ টি থানা এলাকায় প্রতিদিন জননিরাপত্তা বিধানে দুই পালায় ডিএমপির ৬৬৭ টি টহল টিম দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া মহানগর এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত স্থানে ডিএমপি ৭১টি পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশকে সহায়তা করার জন্য ইতোমধ্যে অক্সিলারি ফোর্স নিয়োগ করা হয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে। ইউনিফর্ম পুলিশের পাশাপাশি মহানগরীর নিরাপত্তায় ডিবির উল্লেখযোগ্য টিম কাজ করে যাচ্ছে ও যাবে। ঈদ উপলক্ষ্যে বিপণিবিতান, রেলস্টেশন, বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে ডিবির কার্যক্রম আরও বেগবান করা হয়েছে।
ডিবিপ্রধান বলেন, নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ ঈদযাত্রা নিশ্চিত করতে ডিবি সর্বদা নগরবাসীর পাশে রয়েছে। নগরবাসীকে সাথে নিয়ে যেকোনো অপতৎপরতা রুখে দিতে ডিবি সদা প্রস্তুত। ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিপণিবিতান, রেলস্টেশন বাস ও লঞ্চ টার্মিনালে কেউ যাতে নাশকতা করতে না পারে সেজন্য ডিবি গোয়েন্দা নজরদারি পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়া ডিবির সাইবার টিম তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। সাইবার স্পেস ব্যবহার করে আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে যেকোনো অপপ্রচার রোধে ডিবি তৎপর রয়েছে। প্রো অ্যাকটিভ পুলিশিংয়ের অংশ হিসেবে ডিবির জাল সর্বত বিস্তৃত করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দিতে ডিবি সবসময় প্রস্তুত রয়েছে। রোজা শুরুর দিন থেকে এখন পর্যন্ত ডিবির অলআউট অ্যাকশনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছিনতাইকারী, ডাকাত, চাঁদাবাজ ও বিভিন্ন অভ্যাসগত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাছাড়া ডিবির মাদকবিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পেশাদার মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ছোট-বড় যেকোনো অপরাধের ক্ষেত্রে ডিবি জিরো টলারেন্স নিয়ে তার কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যেকোনো অপরাধের ক্ষেত্রে ডিবি প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে। ডিবির সব সদস্যের মনোবল পূর্বের ন্যায় যেকোনো সময়ের চেয়ে দৃঢ় রয়েছে। নগরবাসীর ভরসার কেন্দ্রবিন্দুতে পৌঁছতে ও অপরাধীদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক পরিগণিত হতে ডিবির আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, ডিবি তার কার্যক্রমের মাধ্যমেই থাকতে চায় নগরবাসীর ভরসার কেন্দ্রস্থলে, জনগণের দোয়ায় ও প্রার্থনায়। কোনো ফাঁকা বুলি নয়, বরং বিশ্বমান অ্যাকশনের মাধ্যমেই ডিবি নগরবাসীর আস্থার প্রতীকে পরিণত হচ্ছে। ঈদ শেষে মহানগরবাসী যাতে নিরাপদে ও স্বস্তিতে ঘরে ফিরতে পারে এবং কোনো ধরনের বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন না হয়, সেজন্য ঈদ পরবর্তী সময়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে ডিবি। ছিনতাইকারী, চোর, চাঁদাবাজ ও বিভিন্ন অভ্যাসগত অপরাধীদের গ্রেপ্তারে ডিবির আটটি বিভাগের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক টিম মহানগরের কৌশলগতস্থানে এই অভিযান পরিচালনা করে আসছে।
তিনি আরও বলেন, ঈদকে সামনে রেখে জালটাকা তৈরি ও সরবরাহ রোধে ডিবি অত্যন্ত তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে ডিবির অভিযানে বিপুল সংখ্যক জালনোট ও সরঞ্জামসহ চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া অনলাইনে জালনোট বিক্রয় ঠেকাতে ডিবির সাইবার টিম সার্বক্ষণিক অনলাইনে নজরদারি রেখেছে। জালনোট তৈরি, বিক্রয় ও সরবরাহ রোধে পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে ডিবি।
ডিএমপির এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে ডিএমপির পোশাকধারী পুলিশ ও ডিবির কার্যক্রমের পাশাপাশি নিরাপত্তা সচেতনতার অংশ হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন বিপণিবিতানের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিরাপত্তা কর্মীদের ডিউটি জোরদার করতে হবে। যেকোনো অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা নজরদারি রাখতে হবে। ডিবি তা অব্যাহত রেখেছে, ভবিষ্যতে তা অব্যাহত রাখবে। সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তদারকির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পুলিশের পাশাপাশি মালিকপক্ষকে স্ব স্ব মার্কেট ও শপিংমলের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে এবং এলাকায় থানা ফাঁড়ির সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হবে। নগরবাসী, ঈদে মহল্লা, বাসা মার্কেটে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে থাকলে বা ঘটার সম্ভাবনা থাকলে স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ি, থানা বা ডিবিকে অবহিত করবেন। ডিএমপির কন্ট্রোল রুমের নম্বর ও জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ যোগাযোগ করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে বিপণিবিতানসহ যেকোনো স্থানে নাশকতা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও নিরাপত্তার ঝুঁকি সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য থাকলে ডিবিকে অবহিত করুন এবং সহায়তা করুন। তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রেখে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আপনাদের যেকোনো প্রয়োজনে আপনাদের আস্থার প্রতীক ডিবি সর্বদা আপনাদের পাশে রয়েছে। দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। সে দায়িত্ব যেন সঠিকভাবে পালন করতে পারি সেজন্য সম্মানিত নগরবাসীসহ সবার সহযোগিতা কামনা করছি।