চট্টগ্রাম অফিসঃ মীরসরাইয়ে ফেনী নদীর পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে নদীতে বাঁধ দিয়ে অবৈধভাবে মৎস্য প্রকল্প নির্মানের অভিযোগ উঠেছে । স্থানীয়দের অভিযোগ উপজেলার ওচমানপুর ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের পশ্চিম বাঁশখালী গ্রামের ফেনী নদীর পূর্বাংশে পানি চলাচলের পথ বন্ধ করে দিঘি খনন করা হচ্ছে। এতে করে পশ্চিম বাঁশখালী গ্রামে জলাবদ্ধতার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। এদিকে, অবৈধভাবে দিঘি খননে ক্ষুুব্ধ স্থানীয় জনসাধারণ শিগগিরই তা বন্ধে প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেছেন।
বুধবার (১৭ মে ) সরেজমিনে দেখা যায়, মুহুরী প্রজেক্ট বাজার থেকে মুহুরী প্রজেক্ট গেট পর্যন্ত বয়ে যাওয়া সড়কের উত্তরাংশে ফেনী নদীর বিশাল অংশ দখল করে অসংখ্য দিঘি খনন করার ফলে ছোট হয়ে গেছে ফেনী নদী। দখলের ফলে ফেনী নদীর পূর্বাংশে জোরারগঞ্জ-আজমপুর খালের পানি যাওয়ার পথটিও সরু হয়ে গেছে। বর্ষায় এই খাল দিয়ে মীরসরাই উপজেলার পূর্বাংশের পাহাড়ি পানি বঙ্গোপসাগরে মিশে যায়। এখন পানি প্রবাহের সে পথটি নদী দস্যুদের কারণে ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
এই পথঘেঁষে উপজেলার ওচমানপুর ইউনিয়নের পশ্চিম বাঁশখালী গ্রামের অবস্থান। গ্রামটি ফেনী নদীর উপকূলে হওয়ায় বর্ষায় পানি প্রবাহের গতি বৃদ্ধি পেলে এই গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর পানিতে ভাসে । এবার নতুন করে দিঘি খননের ফলে আগামী বর্ষায় ওইসব পরিবার দীর্ঘমেয়াদে পানিবন্দি হয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে । বিগত বছর গুলোতে বর্ষা মৌসুমে মাদ্রাসার পাশ্ববর্তী পুরো গ্রাম পানিতে ডুবে থাকে। জলাবদ্ধতায় ঘরের মধ্যে পানি থৈ থৈ করে । পানি চলাচলের পথে মৎস্য প্রকল্প বন্ধ না হলে মানুষ বাঁচার উপায় থাকবেনা। তাই তারা দাবি জানান দ্রুত যেন প্রশাসন অবৈধ দিঘি খনন কাজ বন্ধ করতে উদ্যোগ নেয়।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নুরন্নবী জানান, নদীর পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে বাঁধ দিয়ে মৎস্য প্রকল্প করার কোনো অনুমতি নেই। তা ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গায় নদীতে বাঁধ দিয়ে মৎস্য প্রকল্প করে আশপাশের মানুষের ক্ষতি করলে তা অবশ্যই বন্ধ করা হবে।
মৎস্য প্রকল্প নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিক সমির জলদাস জানান, আমরা লেভার। সরকারি খাসজমিতে দিঘি করছেন কিনা এটা মালিক জানেন । আমরা বালু তোলার ড্রেজার মেশিন চালাই। মালিকরা বিস্তারিত বলতে পারবে।
অবৈধভাবে দিঘি খননের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের অংশীদার রাসেল বলেন, জায়গার মালিক কে আমি এত কিছু জানি না।’ মহিউদ্দিনের সাথে আমি ব্যবসার পার্টনার। মহিউদ্দিন বলতে পারবে কার থেকে কিভাবে সে জমি নিয়েছে।
জাহেদা বেগম বলেন, ‘আমাদের পরিবার নদী ভাঙনের শিকার। বর্ষাকালে পানিতে আমাদের বাড়ি তলিয়ে যায়। অবৈধভাবে দিঘি খননের কারণে আমরা আগামী বর্ষায় বাড়িতে থাকতে পারব কিনা জানি না। তাই সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি দ্রুত এই বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য।’
মীরসরাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি সরেজমিনে তদন্ত করে দেখে আইনগত পদক্ষেপ নেব। সরকারি জমি এবং পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে কিছুই করতে দেওয়া হবে না। মৎস্য প্রকল্প করতে হলে ভূমি এবং জলাবদ্ধতার আইন মেনে করতে হবে। অন্যথায় ছাড় দেওয়া হবে না।